রমজান সামনে রেখে সিন্ডিকেটের ফাঁদ

রমজান ঘিরে এবারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। রমজান শুরুর দুই মাস আগ থেকে নিত্যপণ্যের দাম নীরবে পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হচ্ছে-রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে-এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে।

এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে সব ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, হলুদ-মরিচ, চিনি-লবণ এমনকি খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। গরুর মাংস ও মুরগির দামও বেড়েছে। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে।

ভোক্তারা জানান, বরাবরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

মনে হচ্ছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ৫-১০ রোজা পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হবে। এরপর হয়তো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকের পর দাম কমতে শুরু করবে।

কিন্তু দেখা যাবে, যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, সে পরিমাণে কমানো হয়নি। তাই রোজার আগে বাজারের দিকে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ১৬ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

এর মধ্যে প্রতি কেজি ছোট দানা মসুর বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি মুগ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা।

খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা, এক মাস আগে যা বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিু আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তিনি আরও বলেন, বাজার নজরদারির জন্য আমরা সব সময় বলে আসছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

টিসিবির তথ্যমতে সোমবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫ টাকা, এক মাস আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হয়, এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি কেজি দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয় ৩০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। দেশি হলুদ বিক্রি হয় ২৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকা।

প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৬০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ ও দেশি মুরগি বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা, এক মাস আগে ১৩৫ ও ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাশাপাশি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি খেজুর (সাধারণমানের) বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়।

রমজান আসার এক থেকে দুমাস আগে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।

এ কারণে রমজান আসার আগে বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থায় বর্তমানে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা নেই।

অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। এ প্রবণতা ভোক্তা কিংবা সরকার কারও জন্যই শুভ নয়।

তিনি বলেন, আজ থেকে বাজার ঠিকমতো মনিটরিং করা না হলে যে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে, তা রমজান পর্যন্ত থামানো যাবে না। তাই এখন থেকে বাজার গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তদারকি করা উচিত।

ভোক্তাদের উদ্দেশে গোলাম রহমান বলেন, রমজান ঘিরে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ১৫ দিনের পণ্য যাতে একদিনে না কেনেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজান সামনে রেখে সব পণ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। রমজানে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সে জন্য সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে।

রমজান ঘিরেও তদারকি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের টিমের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদারকি সদস্যরা কাজ করছেন।

পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ২৩৪২৫ টাকা

বেড়েই চলছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে এই মুহূর্তে (গত জুন পর্যন্ত) ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ৫২ পয়সা করে বৈদশিক ঋণ রয়েছে।

আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, ওর মাথায়ও এই ঋণের বোঝা চাপবে। এদিকে দিনে দিনে কমছে সহজ শর্তের বা স্বল্পসুদের ঋণ। ইতোমধ্যে ঋণের সুদ ও শর্ত বাড়িয়েছে উন্নয়নসহযোগীরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ সঠিক এবং প্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয় করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চড়া সুদসহ বিভিন্ন কঠিন শর্তে ঋণ নিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার। কিন্তু সেই টাকার যদি কার্যকর ব্যবহার না হয় কিংবা রিটার্ন ঠিকমতো না আসে, তাহলে সাধারণ মানুষের ঘামের টাকায় পরিশোধ করা এই ঋণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে (গত জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি রয়েছে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে হিসাব করলে প্রত্যেকের মাথায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৮৪৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৩৫১ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ঋণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং সক্ষমতাও রয়েছে। আরও বেশি ঋণ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ যেসব খাতে ঋণের টাকা খরচ করলে বেশি রিটার্ন আসবে, সেসব খাতেই ঋণ নেওয়া উচিত।

সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধসহ যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাস্তবায়ন দেরি হলে খরচ বেড়ে যায় এবং যথাসময়ে প্রকল্প থেকে সবিধা পাওয়া যায় না।

ইআরডির সর্বশেষ প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট যে পরিমাণ ঋণের স্থিতি রয়েছে, এর মধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ইউএসএ, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক ও জার্মানি বা কেএফডব্লিউ মিলে মোট ঋণ ৮২৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইফাদ, ওপেক, এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) মিলে মোট ঋণের স্থিতি ২ হাজার ৯১০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।

এসবের বাইরে চীন, ভারত, স্পেন, যুগোস্লাভিয়া, রাশিয়া এবং বেলারুশ মিলে মোট ঋণের স্থিতি ৫১৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং সাপ্লায়ার্স ক্রেডিড (সরবরাহ ঋণ) হিসাবে চীনের কাছ থেকে নেওয়া আছে আরও ১২৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। তবে বেশি সুদে ঋণ নিলেও তা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মনে করছে ইআরডি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যে কোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে।

সূত্র জানায়, দিনে দিনে চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে থাকছে অধিক শর্তও। আগে যেসব উন্নয়নসহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়া থেকে বাদ পড়ছে দেশ। এছাড়া আগে থেকেই কমে গেছে অনুদান। এক্ষেত্রে ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে প্রাপ্ত বিদেশি সহায়তার ৮৬ শতাংশ অর্থ এসেছিল দ্বিপক্ষীয়ভাবে। এসব সহায়তার সিংহভাগই ছিল অনুদান। ঋণ হিসাবে আসা দ্বিপক্ষীয় সহায়তার সুদের হার ছিল বেশি।

পরিশোধের সময়ও ছিল কম। রাষ্ট্র খাতের কলকারখানা সচল রাখা এবং বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো তৈরির জন্য বাংলাদেশের হাতে তখন বিকল্প ছিল না। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থ সহায়তার মাত্র ১৪ শতাংশ পাওয়া গিয়েছিল বহুপক্ষীয় সংস্থা থেকে। এরপর ১৯৭২-৭৩ সময়ে বৈদেশিক সহায়তার ৩৮ শতাংশ এসেছিল খাদ্য বাবদ, প্রায় ৫২ শতাংশ উপকরণ ও ১০ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে। সহায়তার ৮৯ শতাংশ ছিল অনুদান আর ১১ শতাংশ ছিল ঋণ।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক সহায়তার ৬৪ শতাংশ ঋণ, অনুদান এসেছিল ৩৫ শতাংশের কিছু বেশি। প্রকল্প সহায়তা বাবদ এসেছে ৯৯ শতাংশ অর্থ, খাদ্য সহায়তা ১ শতাংশের মতো। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছাড় হওয়া বিদেশি সহায়তার ৯৯ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে প্রকল্প সহায়তা হিসাবে। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৮৭ শতাংশ। আর অনুদান ছিল মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। এভাবে অনুদান কমছে আর বাড়ছে ঋণের পরিমাণ।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এটা ঠিক আগের তুলনায় বেশি সুদ বা শর্তযুক্ত ঋণ বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে যে স্থিতি রয়েছে, এর অধিকাংশই সহজ শর্তের এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

এক্ষেত্রে মাথাপিছু হিসাব করার চেয়ে দেশের অর্থনৈতিক আকারের সঙ্গে তুলনা করা যৌক্তিক হবে। কেননা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএ-এর মতে, একটি দেশের ঋণ ধারণের যে মাপকাঠি, এর অনেক নিচে রয়েছে বাংলাদেশ। সুতরাং ঋণ পরিশোধ করতে না পারার ঝুঁকি কম। এরকম কোনো ঘটনা অতীতেও হয়নি, ভবিষ্যতে হয়তো হবে না।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আর্থিক দুর্যোগ, ঋণের ফাঁদে পড়া কিংবা ঋণদাতাদের আস্থা হারানোর শঙ্কা কম। তবে যেটি মুখ্য বিষয় সেটি হলো-ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার সঠিক হতে হবে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, সেটি যেন সঠিক হয়। বিনিয়োগের রিটার্ন যেন আসে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ইআরডি সূত্র জনায়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ঋণের কঠিন শর্ত ও উচ্চ সুদ কার্যকর করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কার্যকর করেছে। এর সঙ্গে আগে থেকে অব্যাহত থাকা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলবৎ রয়েছে।

তাই সব মিলিয়ে এখন সুদের হার দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। এছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়ও কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ আগে আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যেত ৩৮ বছর আর রেয়াতকাল ছিল ৬ বছর। এখন ৮ বছর কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রেয়াতকাল কমিয়ে করা হয়েছে ৫ বছর। এছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদহারে ঋণ পেত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি সময়ে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ ছিল।

কিন্তু এখন সুদহার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ করেছে জাইকা। তাছাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে রেয়াতকাল ঠিক থাকলেও পরিশোধের সময় ১০ বছর কমিয়ে করা হয়েছে ৩০ বছর।

এভাবে সস্তা ঋণ কমে যাওয়ায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বেশি সুদ বা শর্তযুক্ত ঋণের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে সরকারকে। বেশি সুদ ও শর্তযুক্ত ঋণ যেসব দেশ থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক উৎস।

পুঁজিবাজারে লেনদেনে সূচক বাড়ছে

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন চলছে সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল ১১টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২৯৮ ও ২২১৬ পয়েন্টে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৩৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।

এই সময়ে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ৮৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৯টি কম্পানির শেয়ারের দর।

সকাল ১১টা পর্যন্ত লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কম্পানি হলো   বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি, সামিট পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, সিটি ব্যাংক, লংকাবাংলা, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী  ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স।

লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটে ডিএসইর সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। এরপর ১০টা ২০ মিনিটে সূচক আগের অবস্থান থেকে ৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচকের গতি নিম্নমুখী দেখা যায়। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৮২৬ পয়েন্টে অবস্থান করে।

এদিকে, লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৬ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়।

সকাল ১১টা পর্যন্ত সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ সময়ে ৬৩টি কম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৩৬টি কম্পানির দর। আর ২৩টি কম্পানির শেয়ারের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারী, ভার নিতে পারছে না ডিএসই

হাজার হাজার বিনিয়োগকারী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে। বিনিয়োগকারীদের সেই ভার নিতে পারছে না সংস্থাটির আইটি ব্যবস্থা। ফলে লেনদেন করতে গিয়ে নানাভাবে সমস্যার মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

আজ মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের ভার নিতে না পেরে ডিএসইর ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের স্বাভাবিক কার্যক্রম লেনদেন চলাকালে হঠাৎ হঠাৎ ব্যাহত হয়। তাতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর ওয়েবসাইটের যে সক্ষমতা, তাতে প্রতি সেকেন্ডে একসঙ্গে ৪ হাজার ৮০০ হিট নিতে পারে। কিন্তু গতকাল লেনদেন শুরুর পরপর প্রতি সেকেন্ডে ওয়েবসাইটটিতে হিট হয় ৫ হাজারের বেশি। এতে ওয়েবসাইটটির গতি কমে যায়। তাতে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য-উপাত্ত (রিয়েল টাইম ডেটা) পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী বা বিনিয়োগকারীরা। পরে হিট কমিয়ে দিয়ে ওয়েবসাইটের স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখা হয়। একই অবস্থা ছিল ডিএসইর মোবাইল অ্যাপেও।

হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারী, ভার নিতে পারছে না ডিএসই

ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, ডিএসইর মোবাইল অ্যাপের যে সক্ষমতা, তাতে প্রতি সেকেন্ডে একসঙ্গে ৩০০ জন ব্যবহারকারী বা বিনিয়োগকারীর হিট নিতে পারে অ্যাপটি।

কিন্তু গতকাল লেনদেন শুরুর বিভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে এ অ্যাপে বিনিয়োগকারীর হিট প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। যখনই হিট ৫০০ ছাড়িয়েছে, তখনই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা কোনো লেনদেন করতে পারেননি। পরে হিট কমে গেলে লেনদেনও স্বাভাবিক হয়। এভাবে দিনভর বিভিন্ন সময়ে হিট বেড়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল অ্যাপের লেনদেনে বিঘ্ন ঘটে।

জানতে চাইলে ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, আজ লেনদেনের শুরুতে ও শেষে কিছুটা প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল। দ্রুততার সঙ্গেই তা সমাধান করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের ভার নিতে না পেরে ডিএসইর ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের স্বাভাবিক কার্যক্রম লেনদেন চলাকালে হঠাৎ হঠাৎ ব্যাহত হয়। তাতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল থেকে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপসহ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকল্প একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে, আজ শুরু থেকে ঢাকার বাজারে লেনদেনে বেশ ভালো গতি দেখা যায়। তাতে অনেকে ধারণা করেছিলেন আজ দিন শেষে লেনদেনে রেকর্ড হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। বিনিয়োগকারীদের অনেকে বলছেন, কারিগরি ত্রুটির কারণেই লেনদেন বিঘ্নিত হয়েছে।

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই

বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম যেমন কিছুটা বেড়েছে, তেমনি বাড়তি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম।

তেলের সঙ্গে চিনির দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে কমেছে আলুর দাম। বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। সবজির দাম বেশ কিছুদিন ধরেই কম। চাল ও পেঁয়াজের বাজারে কোনো হেরফের নেই।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুর বাজার, রায়েরবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায়, রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল ৫৭৫-৫৯০, বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের তেল ৫৭০-৫৮০ টাকা এবং পুষ্টি ও তীর ব্র্যান্ডের তেল ৫৫০-৫৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় দাম ৫ লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ব্র্যান্ডভেদে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ১ লিটারের বোতলের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ছিল বলে দাবি বিক্রেতাদের।

বিজ্ঞাপন

চালের শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি। পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক বসাল সরকার।

দেশে গত আগস্ট মাসে ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ছিল ৫০৫ থেকে ৫১৫ টাকা। বর্তমানে তা ৬১৫ থেকে ৬২৫ টাকা। এর মানে হলো, পাঁচ মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২২ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকালের হিসাব বলছে, ১ লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৭ থেকে ১০৯ টাকা। পাম সুপার তেল ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে প্রতি লিটার ১০০-১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম বলেন, কোম্পানিগুলো যে দাম নির্ধারণ করেছে, ক্রেতারা সেই দামে তেল কিনতে চান না।

রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল খুচরা বাজারে সরু মিনিকেট চাল ৬৫-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, ভালো মানের বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সরকার গতকাল চাল আমদানি শুল্ক-কর ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা কার্যকর থাকবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে। শুল্কসুবিধার আওতায় অনুমতি সাপেক্ষে চাল আমদানি করা যাবে।

মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বলছেন, চালের দাম নতুন করে বাড়েনি। আবার কমেওনি।

গতকাল পেঁয়াজ আমদানিতেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক নতুন করে আরোপ করা হয়েছে। আর স্থগিত থাকা ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল করা হয়েছে। এই শুল্ক আরোপ করা হলো ভারত ১ জানুয়ারি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর।

ভারত রপ্তানির দরজা খুলে দেওয়ার পর থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছিল। রাজধানীর তিনটি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজের বাজারমূল্য ছিল প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।

এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম। বেশির ভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তবে টমেটোর দাম এখনো কিছুটা বাড়তি। প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

ঢাকার রায়েরবাজার সিটি করপোরেশন বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া রেহেনা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে সবজির দাম কমেছে। তবে চাল ও তেলের দাম অনেক বেশি। চাল-তেল কিনতেই অনেক টাকা বাড়তি চলে যাচ্ছে।

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়লো

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে।

সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ কথা জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল বলা হয়েছিলো, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এরপর রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় আর বাড়ানো হবে না।

তবে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের সুবিধার্থে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে।

অনিশ্চয়তা কাটছে, কমছে সোনার দাম

যেমন হু হু করে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছিল, ঠিক তেমনভাবেই কমছে। গতকাল সোমবার সোনার দাম কমেছে ১ শতাংশ। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ দশমিক ২২ ডলার। কেবল এই নভেম্বর মাসেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম এক মাসে এত কমল সোনার দাম। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দাম আরও কমবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

কেবল সোনা নয়, গতকাল বিশ্ববাজারে কমেছে রুপা ও প্লাটিনামের দামও। প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে রুপার দাম। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৩ ডলার। প্লাটিনামের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২০ দশমিক ৩৬ ডলার।

নভেম্বর মাসজুড়েই বিশ্ববাজারে কমেছে সোনার দাম। অথচ কয়েক মাস আগেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত এই ধাতুর দাম বলা যায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা ঢেউ ও ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মানুষ সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করা শুরু করে।

অনিশ্চয়তা যত বাড়ছিল, ততই বাড়ছিল সোনার দাম। টিকা আসছে, অনিশ্চয়তাও কাটছে। এতে কমতে শুরু করেছে সোনার দর।

করোনা ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সোনার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার কারণেও সবাই সোনার মজুত বাড়িয়েছিল। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, নতুন রেকর্ড হয়। গত ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে দাম। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। অর্থাৎ সে সময়ের চেয়ে ২৪ ডলার বেড়ে দামের নতুন রেকর্ড গড়ে মূল্যবান এই ধাতু। ওই বৃদ্ধি নিয়ে বছরের ৭ মাস পর্যন্ত সোনার দাম বাড়ে ২৭ শতাংশ।

এরপরও বাড়তে থাকে দাম। আগস্টে একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর ৭ আগস্ট থেকে কিছুটা কমতে দেখা যায়। এভাবেই কমা–বাড়া চলতে থাকে। নভেম্বরে এসে বেশ কমতে শুরু করে দাম। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন ৯ মাস ধরে বিশ্বকে আটকে রাখা করোনা নামক ভাইরাসের একটি টিকা আসছে তা নিয়ে আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন এবং করোনার সংকট কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে চীন।

আসলে যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় মূলত সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। নভেম্বরে করোনার টিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি সুখবর আসে। প্রথমে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকর। এরপর সুখবর দেয় আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্না। এরপর ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে তাদের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। রাশিয়াও টিকার অগ্রগতির কথা জানায়। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটছে, এমন একটি আশা বিরাজ করতে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের মনে। তাঁরা আর হুড়মুড় করে সোনা কিনছেন না। ফলে কমছে সোনার দাম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের প্রধান কৌশলবিদ মাইকেল ম্যাকার্থি বলেন, ভ্যাকসিন আসছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশাবাদ সোনার মতো নিরাপদ-আশ্রয়ে বিনিয়োগের আকর্ষণকে কমিয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে এর দাম ১ হাজার ৮০০ ডলারের নিচে নামায় বিক্রি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নভেম্বরের শুরুতে মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জেতার পর ট্রাম্প গদি ছাড়া নিয়ে ঝামেলা করবেন, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা কেটে যাওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে সোনার বাজারে। এ ছাড়া টানা তিন মাস শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চীনের, যা বিনিয়োগকারীকে ঝুঁকি আছে, এমন মনোভাব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দর নিম্নমুখী থাকায় দেশের বাজারেও সোনার দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। গত ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকারের দাম হয় ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি হয় ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকার প্রতি ভরি হয় ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা।

মুদ্রাবাজারেও ভ্যাকসিনের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ডলারের দাম কমে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আশা তৈরি হয়েছে যে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থা হয়তো আরও শিথিল হবে। গতকাল বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেড়েছে ইউরো ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দাম।

আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়বে না

আগামীকাল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদেরর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময়ের পর আর রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় বাড়ানো হবে না।

রবিবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ কথা জানান।

করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ বিবেচনায় সময় বাড়ানো হবে কিনা – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ ৩০ তারিখের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে আইনি উপায়ে পরবর্তীতে জমা দিতে ( জরিমানা দিয়ে) পারবেন।

অতীতে এই সময়ে আয়কর মেলা আয়োজন হলেও এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা হচ্ছে না। এর বদলে আয়কর অফিসগুলোতে সবধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।