প্রমোদতরিতে করে রাতে যাবেন, দিনে ফিরবেন

জাহাজের কেবিন ও আসনে ৫১১ জন পর্যটক। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ঠিক পৌনে ১২টায় পতেঙ্গার ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে তাঁদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘এমভি বে ওয়ান’।
চট্টগ্রাম–সেন্ট মার্টিন সাগরপথে এমভি বে ওয়ানের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে বাস, ট্রেন ও উড়োজাহাজে চেপে ঢাকা থেকেও অনেক পর্যটক এসেছেন। জাপানের টোকাই কিসেন কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজটি কিনে এনেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। জাপানে জাহাজটির নাম ছিল ‘সিলভিয়া মারু’, যা টোকিওর পাঁচটি দ্বীপে পর্যটক আনা–নেওয়া করত।

জাহাজটি যখন কর্ণফুলী নদীর মোহনা পার হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে, তখন পর্যটকদের আনন্দ যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজগুলো দেখতে থাকেন। মধ্যরাতে সাত–আটতলা উঁচু বড় বড় জাহাজকে দূর থেকে উঁচু ভবনের মতোই মনে হচ্ছিল। বড় বড় জাহাজের দৃশ্য দেখা শেষ না হতেই ওপরের ডেকে শুরু হয়ে যায় গানবাজনা। কেবিন ছেড়ে অনেকেই জাহাজের ডেকে এসে গান উপভোগ করেন।

শীত মৌসুম হওয়ায় এখন সাগরে ঢেউ নেই। ভারসাম্য থাকায় শিশু, নারী, কিশোর, বৃদ্ধনির্বিশেষে যাত্রীদের কারও জাহাজে ঘুরতে সমস্যা হচ্ছিল না। তবে নাবিকেরা জানালেন, ঢেউ থাকলেও জাহাজে ভারসাম্য রাখার ডানা আছে। তাই এটি হেলেদুলে চলে না। বাণিজ্যিক জাহাজের মতো ইঞ্জিনের শব্দও কানে বাজে না।

মধ্যরাতে ডেকের সোফায় বসে প্রথম যাত্রা উপভোগ করছিলেন সৈয়দ আকতার নামের এক পর্যটক। বললেন, ‘জীবনে ৪১টি দেশ ভ্রমণ করলেও আগে কখনো পর্যটকবাহী জাহাজে চড়া হয়নি। এবার সে সাধ মিটল। খুবই ভালো লাগছে।’
গান শোনা, আড্ডা আর ঘণ্টা তিনেকের এক ঘুমে কেটে গেল রাত। সকাল পৌনে সাতটার দিকে সাউন্ড সিস্টেমে প্রথম যাত্রা শেষ হওয়ার খবর শোনা গেল। প্রথম যাত্রায় লেগেছে সাত ঘণ্টা। সেন্ট মার্টিন জেটির এক কিলোমিটার দূরে নোঙর করল জাহাজটি। নাবিকেরা জানান, সেন্ট মার্টিন জেটিতে গভীরতা কম থাকায় এক কিলোমিটার দূরেই নোঙর করতে হয়েছে। সেখান থেকে আরেকটি ছোট জাহাজ ১০ মিনিটে যাত্রীদের জেটিতে নিয়ে নামাল।

এরপর ঘণ্টা পাঁচেক দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ঘুরে দুপুর সোয়া ১২টায় যাত্রীরা আবার জাহাজে উঠলেন। এবার দিনের বেলায় সাগরে ভ্রমণ। দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ দূরে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে যেন মিশে গেছে। শান্ত সাগরের বুক চিরে জাহাজটি চট্টগ্রামের দিকে ছুটছে, আর পর্যটকেরা নীল জলরাশি, মাছ ধরার ট্রলার থেকে জাল ফেলার দৃশ্য দেখছেন।

কে চালাচ্ছেন এই জাহাজ, তা জানার জন্য যেতে হলো ব্রিজে। সেখানেই কথা হয় জাহাজটির মাস্টার ক্যাপ্টেন আলমগীর কবিরের সঙ্গে। ওখান থেকেই জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কত গতিতে চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পর্দার দিকে ইঙ্গিত করলেন। দেখা গেল, ১৮ দশমিক ৭ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলছে। তবে সর্বোচ্চ গতি পাওয়া গেছে ২২ নটিক্যাল মাইল।

ফিরতি পথে স্রোতের প্রতিকূলে জাহাজের গতি ধরে রাখা যায়নি। তাই সেন্ট মার্টিন থেকে চট্টগ্রাম ফিরতে সাড়ে আট ঘণ্টা লেগে গেল। সাগরে জট না থাকলেও স্রোতের প্রতিকূলতা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো কঠিন করে দেয়।

জাহাজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাশুক হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে বললেন, দেশের পর্যটকেরা এই প্রথম ক্রুজে পর্যটনের স্বাদ উপভোগ করলেন। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতিতে এই পর্যটন বড় অবদান রাখবে।

প্রমোদতরি থেকে দেখা সুর্যাস্তও

ভাড়া ও সুযোগ–সুবিধা

এই জাহাজে সাশ্রয়ী প্যাকেজ হলো সর্বনিম্ন জনপ্রতি তিন হাজার ও চার হাজার টাকা। চেয়ারে বসে যাওয়া এবং আসার ভাড়া এটি। সবচেয়ে দামি প্যাকেজ হলো দুজনের শয্যার ভিভিআইপি কেবিন। ফিরতি টিকিটসহ সেটির ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এরপরে রয়্যাল প্যাকেজ ৪৫ হাজার এবং প্রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ ৩০ হাজার টাকা। চার শয্যার ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে ফিরতি টিকিটসহ একজনের শয্যার ভাড়া ১০ হাজার টাকা। যাওয়া–আসা ছাড়াও একপথের টিকিট আছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার ফিরতি টিকিটের অর্ধেকের কাছাকাছি।

সাইফুল ইসলাম নামে জাহাজের এক যাত্রী জানালেন, সড়কপথের তুলনা করলে এই জাহাজ তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া সাশ্রয়ী। তবে কেবিনের সুবিধা থাকলেও ভাড়া বেশি। তবে জাহাজটিতে খাবারেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি এত দিন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সড়কপথে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ এবং সেখান থেকে নৌপথে সেন্ট মার্টিন যেতে হতো। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে সময় লাগে কম–বেশি আট ঘণ্টা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস ও নৌযান মিলে ভাড়া গুনতে হয় আসা–যাওয়াসহ জনপ্রতি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। আর সাগরপথে চট্টগ্রাম থেকে ২৩৬ কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন যেতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে না বলে জানালেন এমভি বে ওয়ান জাহাজের কর্মকর্তারা। চাইলে আপনারাও একবার ঘুরে আসতে পারেন।

করোনায় যেভাবে খারাপ হচ্ছে ফ্রন্টলাইনারদের মানসিক স্বাস্থ্য

শরীরের সঙ্গে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও মারাত্বক প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। মানুষ নতুন করে অবসাদ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মত সমস্যায় ভুগছে। আবার যারা আগে থেকেই মানসিক রোগের স্বীকার ছিলেন তাদের মধ্যে সমস্যা আরো বেড়েছে।

ফ্রন্টলাইনাররা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। রোগের সঙ্গে মোকেবেলা করতে যেয়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে করোনার জন্যই স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার যথেষ্ঠ ঝুঁকি রয়েছে। দ্য জার্নাল অফ সাইক্রিয়াটিক রিসার্চে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণা থেকে জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং এদের মধ্যে উদ্বেগ, অবসাদ, হতাশা, ইনসোমনিয়ার মত সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এই গবেষণার জন্য বিশেষজ্ঞরা ৫৭১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর গবেষণা করেছেন। এদের মধ্যে ৯৮ জন হলেন চিকিৎসক ও নার্স। বাকি ৪৭৩ জনের মধ্যে রয়েছেন পুলিশকর্মী, দমকলকর্মী। এছাড়া যাদের উপর গবেষণা করা হয়েছে তাদের ৫৬ শতাংশের মধ্যে মানসিক ডিজওঅর্ডার মিলছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইনসমনিয়ায় ভুগছে, কেউ অবসাদ বা উদ্বেগে ভুগছে।

সূত্র: নিউজ১৮

খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খাবেন যেসব কারণে

থানকুনি পাতা অতি পরিচিত। সাধারণত পুকুর পাড় বা জলাশয়ে এ পাতা দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই পেটের রোগ সারাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করেন। তবে অনেকের হয়তো জানা নেই, ভেষজ উপাদানে ভরপুর থানকুনি পাতা পেটের রোগ সারাতে দারুণ কার্যকরী। বিশেষ করে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ সারাতে থানকুনি পাতার জুড়ি নেই। নিয়মিত এই পাতার রস খেলে আরো যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-

ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায় : শুধু পেটই নয়, আলসার, অ্যাজমাসহ নানা চর্মরোগ সারাতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। এতে ত্বকের সজীবতা বাড়ে। প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায় থানকুনি পাতা। কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে : থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেনটাসাইক্লিক ট্রিটারপেন্স নামের  একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এতে মস্তিষ্কের সেলের ক্ষমতা বেড়ে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বয়স্ক মানুষরাও যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খান, তা হলে শেষ বয়সে অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে এই পাতার রস।

অনিদ্রার সমস্যা দূর হয় : থানকুনি পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি মানসিক চাপ কমায়। সেই সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা কমে যায়। এছাড়া বয়স বাড়লেও, ত্বকে তারুণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে।

শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে : শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সাহায্য করে থানকুনি পাতা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে যদি ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এতে শরীর সুস্থ থােক।  সূত্র : এই সময়

স্যুটের ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন

ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন সম্পর্কে আমরা তেমন করে জানি না। স্যুট-প্যান্ট বা শার্টের কাপড় কিনতে গেলে সব সময় একরঙা কাপড় কিনতেই তাঁরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, বেশির ভাগ ছেলেরাই ভাবেন, এতে মিক্স ও ম্যাচ করা সহজ; আর প্যাটার্নড ফ্যাব্রিকে তা কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। ধারণাটি একদম ভুল। একরঙা কাপড়ের একঘেয়েমি এড়াতে প্যাটার্নড ফ্যাব্রিকের কোনো বিকল্প নেই। প্যাটার্ন কাপড় কেনার সময় এর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি, কারণ, এটি লুক ও ব্যক্তিত্বে বেশ বড় একটি প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন কিছু স্যুট প্যাটার্ন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পিনস্ট্রাইপ
বিজনেস স্যুটের জন্য এটি খুব ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন। পিনস্ট্রাইপ খুব সরু হয়ে থাকে। সাধারণত এক রঙের কাপড়ের ওপর সাদা অথবা ধূসর রঙের লাইন দিয়ে স্ট্রাইপ করা হয়। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লম্বালম্বি থাকে এটি। স্যুট ও শার্টে এ প্যাটার্ন দেখা যায় বেশি। যাঁরা গঠনে খাটো ও মোটা, তাঁদের পিনস্ট্রাইপের প্যাটার্নের পোশাকে লম্বা ও চিকন দেখায়।

চক স্ট্রাইপ
পিনস্ট্রাইপেরই আরেকটি ধরন হলো ‘চক স্ট্রাইপ’। লম্বালম্বি হলেও এর লাইনগুলো বেশ মোটা ও ফাঁকা ফাঁকা হয়ে থাকে। সেমি ফরমাল স্যুটে এই প্যাটার্ন বেশি দেখা যায়। যাঁদের গঠন চিকন, তাঁদের জন্য এটি বেশ ভালো।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি
ছবি: এমরে কেশাভাপজ, পেকজেলসডটম

সেলফ স্ট্রাইপ
এ স্ট্রাইপ কাপড়ের রঙেই হয়ে থাকে। তবে আরও সূক্ষ্ম। কাপড় বোনার সময় এ প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। ফরমাল অনুষ্ঠানের স্যুট ও প্যান্টে এ ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন ব্যবহার করা যায়।

ক্রসহ্যাচ
এক রঙের কাপড়ে এটি দেখা যায়। দেখলে মনে হয়, কাপড়ের ওপর আড়াআড়ি বা লম্বালম্বি কিংবা সমান্তরালভাবে ব্রাশের হালকা রেখা টানা হয়েছে। একসময় ক্ল্যাসিক ধূসর বা চারকোল স্যুটে প্যাটার্নটি বেশি দেখা যেত। এখন অন্য অনেক রঙের স্যুটের পাশাপাশি ডেনিম ফ্যাব্রিকেও ক্রসহ্যাচ প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে।

হেরিংবোন
এটি খুবই ক্যাজুয়াল একটি প্যাটার্ন। ভারী উল বা টুইডের মতো ঘন বুননের কাপড়ে এটি দেখা যায়। ভি শেপের কন্ট্রাস্টিং এ প্যাটার্ন দেখতে হেরিং মাছের কাঁটার মতো। তাই এ প্যাটার্নকে হেরিং বোন বলা হয়। এটি ক্যাজুয়াল স্যুট ও স্পোর্টস জ্যাকেটে বেশি ব্যবহৃত হয়। এ প্যাটার্নের কোট বা জ্যাকেট জিনসের সঙ্গে ভালো মানায়

হেরিংবোন প্যাটার্ন

হেরিংবোন প্যাটার্ন
ছবি: উইকিপিডিয়া

বার্লিকর্ন
গরম ও আরামদায়ক ভারী টুইড কাপড়ে বার্লিকর্ন বেশি ব্যবহৃত হয়। এ প্যাটার্নের কাপড়ের বুনন খুব ঘন ও মজবুত। এটি ছোট গোল বা ওভাল শেপের হয়ে থাকে। যেসব স্পোর্টস জ্যাকেট, হ্যাট বা ব্যাগ টুইড কাপড়ে তৈরি, সেগুলোয় এ প্যাটার্ন দেখা যায়।

বার্ডস আই ও নেইলহেড
প্রায় বার্লিকর্নের মতো দেখতে এ প্যাটার্ন দুটি খুব সূক্ষ্ম বুননের হালকা কাপড়ে দেখা যায়। বার্ডস আই ছোট গোলাকার আর নেইলহেড ছোট চারকোনা শেপ। দূর থেকে এ প্যাটার্নের কাপড়গুলোকে সলিড কালারের মনে হয় কিন্তু কাছে গেলে ক্ষুদ্র টেক্সার ডটগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই এ প্যাটার্নের কাপড় ফরমাল স্যুট বানানোর জন্য বেশ ভালো।

বিউটি ট্রেন্ড যা ছিল, যা থাকবে

দেখতে দেখতে একটা বছর শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি ২০২০–এর একদম দ্বারপ্রান্তে। এ বছরটা ছিল একটু অন্য রকম। পৃথিবীর সব মানুষকেই একটা চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে মহামারি পরিস্থিতির কারণে। এ জন্য যাপিত জীবনে এসেছে পরিবর্তন।

বিউটি ট্রেন্ড যা ছিল, যা থাকবে

পরিবর্তন এসেছে বিউটি ট্রেন্ডেও। সৌন্দর্যচর্চার এমন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, যার প্রভাব থেকে যাবে আগামী কয়েক বছর।

বোল্ড আই মেকআপ

 সৌন্দর্য সচেতন সবাই এখন নানা রঙে–ঢঙে সাজাচ্ছেন চোখ

সৌন্দর্য সচেতন সবাই এখন নানা রঙে–ঢঙে সাজাচ্ছেন চোখ
ছবি: প্রথম আলো

গত কয়েক বছর মেকআপ ট্রেন্ডে ছিল লিপস্টিকের দৌরাত্ম্য। তবে এ বছরের চিত্রটি একদম ভিন্ন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এখন মাস্ক পরতে হচ্ছে। এ জন্য ঢাকা পড়েছে ঠোঁট। সবার নজর তাই চোখের দিকে। সৌন্দর্য সচেতন সবাই এখন নানা রঙে–ঢঙে সাজাচ্ছেন চোখ। এ জন্য চড়া রঙের আইশ্যাডো, মাসকারা, আইলাইনারের কাটতি বেড়েছে। মাস্কের সঙ্গে মিক্সড বা ম্যাচ করে চোখ লাগাচ্ছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, যত দিন মাস্ক থাকবে তত দিন এই ধারার কোনো পরিবর্তন হবে না।

মেকআপে স্কিন কেয়ার

এখন মেকআপ ত্রুটি আড়ালের পাশাপাশি তা সারিয়ে তোলার কাজও করবে

এখন মেকআপ ত্রুটি আড়ালের পাশাপাশি তা সারিয়ে তোলার কাজও করবে
ছবি: প্রথম আলো

স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে এ বছর বেড়েছে সৌন্দর্য সচেতনতা। আগে সবাই মেকআপ করত শুধু নিজেদের সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে, কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঢাকতে। আর এখন মেকআপ ত্রুটি আড়ালের পাশাপাশি তা সারিয়ে তোলার কাজও করবে। এমন অনেক মেকআপ পণ্যের উত্থান হয়েছে এ বছর। নতুন প্রজন্মের এসব মেকআপের ভেতর আছে বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম, প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত লিপস্টিক, কালার লিপ বাম, ময়েশ্চারাইজারযুক্ত প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, ব্লাশন ইত্যাদি।

মিনিমাল মেকআপ

কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছিল ‘নো মেকআপ-মেকআপ ট্রেন্ড’ এবং মিনিমাল মেকআপ। এবার লকডাউনের জন্যই এদের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। ঘরবন্দী ও মাস্কবন্দী জীবনে খুব বেশি মেকআপ করার প্রয়োজনীয়তা কমেছে। শুধু জুম মিটিংয়ে বসার আগে অল্প কিছু জিনিসপত্র দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছেন সবাই। হালকা রঙের লিপস্টিক, আইলাইনার, লাইট ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার, কনসিলার এসবের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকছে সাজ।

ঘরবন্দী ও মাস্কবন্দী জীবনে খুব বেশি মেকআপ করার প্রয়োজনীয়তা কমেছে

ঘরবন্দী ও মাস্কবন্দী জীবনে খুব বেশি মেকআপ করার প্রয়োজনীয়তা কমেছে
ছবি: প্রথম আলো

ন্যাচারাল ব্লাশ

কন্টুরিংকে হটিয়ে তার জায়গা দখল করে নিয়েছে ন্যাচারাল ব্লাশ। ছোটখাটো অনুষ্ঠানে সাজার জন্য মিনিমাল মেকআপের ওপর একটু ব্লাশ লাগানোর চল দেখা যাচ্ছে। গ্লিটারি ব্রোঞ্জ ব্লাশের বদলে চাহিদা বেড়েছ বেবি পিংক, পিচ, লাইট পাম, বেরি, রোজ ব্লাশনের।

স্কিন কেয়ার

সৌন্দর্য সচেতনতা বাড়ায় বেড়েছে স্কিন কেয়ার। ব্যস্ততার জন্য যাঁরা এত দিন নিজের ত্বকের তেমন কোনো যত্ন নিতে পারেননি, তাঁরা লকডাউনের সময়টুকু ঘরে বসেই ত্বকের ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রান্নাঘরে থাকা উপাদান দিয়ে হয়েছে রূপচর্চা। বেড়েছে শিট মাস্ক ও প্রাকৃতিক মাস্কের ব্যবহার।

রান্নাঘরে থাকা উপাদান দিয়ে হয়েছে রূপচর্চা

রান্নাঘরে থাকা উপাদান দিয়ে হয়েছে রূপচর্চা
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক বছর ধরে স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড ছিল অ্যান্টিএজিংকেন্দ্রিক। এ বছরও এর তেমন কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অ্যান্টিএজিং উপাদান হিসেবে রেটিনলের জায়গা দখল করেছে বাকুচিওল। এটি রেটিনলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বিকল্প। তবে রেটিনলের চেয়েও এটি অনেক বেশি ভালো এবং কোমল। সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই। এমনকি গর্ভবতী আর প্রসূতি মায়েরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

অন্যদিকে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে আরও আবির্ভাব হয়েছে নায়াসিনামাইডের। এটি একধরনের ভিটামিন বি৩। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং অসামঞ্জস্যতা দূর করে। পাশাপাশি অ্যাকনে, রোজেশিয়া, ইনফ্ল্যামেশনের মতো ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করে। স্কিন এক্সপার্টদের মতে আগামী বছরগুলোতে মেকআপ প্রোডাক্টেও নায়াসিনামাইডের ব্যবহার হবে।

হেয়ার ট্রেন্ড

ঘরবন্দী দিনে হেইলি বিবার

ঘরবন্দী দিনে হেইলি বিবার
ছবি: টুইটার

হেয়ার ট্রেন্ডে ছিল অনেক চমক। স্যালন বন্ধ তাই ঘরই হয়ে উঠেছিল স্যালন। ইউটিউব দেখে চুল কাটা থেকে শুরু করে রং করা সব হয়েছে বাসার ভেতর। চুল কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। সে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে নিজেদের মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করাও একটা ট্রেন্ডে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েদের ছোট চুল (যেমন ফ্রেয়া বেহা এরিকসেনের বব) আর ছেলেদের বড় চুল রাখার চল শুরু হয়েছে। আর যাঁরা চুল ছাঁটার ধারেকাছেও যাননি, তাঁরা বেলা হাদিদ, হেইলি বিবারের মতো সেলিব্রেটিদের দেখাদেখি চুল সাজিয়েছেন আশি দশকের স্ক্রাঞ্চি দিয়ে।

নতুন বছরের ফ্যাশন: স্বাস্থ্য আর স্বস্তির জয়জয়কার

সারা দুনিয়াতেই করোনার ঢেউ এসে, সব সময় বাইরে যাওয়া, বাইরের পোশাক পরা, বাইরের উপযোগী সাজগোছের গুরুত্ব কমিয়ে আনছে। দিনের একটা বড় সময় এখন মানুষ ঘরে কাটায়। হোম অফিস, অনলাইন ক্লাস, জুম মিটিং, অনলাইন ইন্টারভিউ বা ভিডিও কনফারেন্সে আত্মীয়–বন্ধুদের সঙ্গে কথোপকথন বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই পরিচিত ব্যাপার ঘরে ঘরে। তবে সেই সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসার খাতিরে হোক অথবা দরকারি বাজার সদাই, কেনাকাটা ও সীমিত পরিসরে পারিবারিক বা অফিশিয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য হোক, বের আমাদের হতেই হয়। তাই ঘরে ও বাইরে সামনের বছর সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে ফ্যাশনের গতিবিধির নিরিখে। দেখা যাচ্ছে, ২০২১–এর ফ্যাশনের পূর্বাভাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

আটপৌরে ফ্যাশনের প্রাধান্য থাকবে সামনে

আটপৌরে ফ্যাশনের প্রাধান্য থাকবে সামনে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে আরামদায়ক, স্বস্তিকর পোশাক ও ব্যবহারের দিক থেকে উপযোগী বিভিন্ন অনুষঙ্গই সবার পছন্দের শীর্ষে থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে নতুন বছরে। এবার ২০২১–এর সম্ভাব্য প্রধান ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলো দেখে নেওয়া যাক।

আরামদায়ক পোশাক

স্বস্তিকর ও আরামদায়ক পোশাকই মূলত ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপাতে যাচ্ছে সামনের বছর

স্বস্তিকর ও আরামদায়ক পোশাকই মূলত ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপাতে যাচ্ছে সামনের বছর
ছবি: পেকজেলস ডট কম

স্বস্তিকর ও আরামদায়ক পোশাকই মূলত ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপাতে যাচ্ছে সামনের বছর। ফিরে আসছে ব্যাগি জিনস ও ঢিলেঢালা ট্রাউজার। করোনার এই সময়ে অস্বস্তিকর এবং পরতে কষ্টকর, এ রকম জামাকাপড় মানুষ একেবারেই কিনতে ও পরতে চাচ্ছে না বিশ্বজুড়েই। সেকুইন্স বসানো অথবা অতিরিক্ত আঁটসাঁট দম আটকানো ফিটিংসের জামাকাপড় তাই মনে হচ্ছে তোলাই থাকবে এ বছর। সুতি কাপড়, যাতে ত্বক শ্বাস নিতে পারে, ধোয়া ও শুকানো সহজ, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার ভয়ে উষ্ণতার সাহস দেওয়া উলের বোনা কাপড় এসবই এখন দুনিয়াজুড়ে সবার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

একরঙা কালো মাস্ক ও বিভিন্ন রকমের মাস্ক চেইন

কালো ব্যাগ বা কালো জুতার মতোই কালো মাস্ক নারী-পুরুষ নির্বিশেষের ফ্যাশন অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হচ্ছে

কালো ব্যাগ বা কালো জুতার মতোই কালো মাস্ক নারী-পুরুষ নির্বিশেষের ফ্যাশন অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হচ্ছে
ছবি: পেকজেলস ডট কম

মাস্ক যে এখন একটি প্রধানতম ফ্যাশন অনুষঙ্গ, তা নিয়ে আর কোনোই সন্দেহ নেই। নো মাস্ক নো সার্ভিসের বাধ্যবাধকতায় আর মহামারি থেকে বাঁচার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে ঘরের বাইরে মাস্ক পরার আর কোনো বিকল্প নেই কোথাও। তাই সময়ের প্রয়োজনেই এ বছর মাস্ক হয়ে উঠবে অত্যাবশ্যক ফ্যাশন অনুষঙ্গ। বর্ণিল, মজার মজার মেসেজ বা থিমনির্ভর মাস্কের সঙ্গে সঙ্গে, ফ্যাশন সচেতন মানুষ ইদানীং একরঙা কালো মাস্কের দিকে ঝুঁকছে। কালো ব্যাগ বা কালো জুতার মতোই কালো মাস্ক নারী-পুরুষ নির্বিশেষের ফ্যাশন অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বৈচিত্র্য আনতে তিন স্তরের ফেব্রিক মাস্কের ওপর মসলিন বা নেটের স্তর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাইতির মাস্কগুলোর বাইরের লেয়ারটি কালো সিল্ক দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, যা দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এদিকে মাস্কের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের মাস্ক চেইন ব্যবহার করা এখন আসন্ন ট্রেন্ডগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে।

মাথার স্কার্ফ

মেয়েরা একরঙা আর ফুলেল প্রিন্টের স্কার্ফের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে

মেয়েরা একরঙা আর ফুলেল প্রিন্টের স্কার্ফের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে
ছবি: পেকজেলস ডট কম

চুল ও মাথাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করাই মূল উদ্দেশ্য হলেও মাথার স্কার্ফে বৈচিত্র্য আনা যায় নির্দ্বিধায়। মেয়েরা একরঙা আর ফুলেল প্রিন্টের স্কার্ফের দিকে আগ্রহ দেখালেও ছেলেদের ব্যান্ডানা বা পট্টির ক্ষেত্রে মজার মজার প্রিন্ট এমনকি সুপারহিরো থিমের ডিজাইনও দেখা যাচ্ছে।

নেট বা জালিদার কাপড়

সময়ের ফেরে ঘুরেফিরে সেই নেটের কাপড় আবার প্রবেশ করতে চলেছে ফ্যাশন দুনিয়ায়

সময়ের ফেরে ঘুরেফিরে সেই নেটের কাপড় আবার প্রবেশ করতে চলেছে ফ্যাশন দুনিয়ায় 
ছবি: পেকজেলস ডট কম

সময়ের ফেরে ঘুরেফিরে সেই নেটের কাপড় আবার প্রবেশ করতে চলেছে ফ্যাশন দুনিয়ায় জোরেশোরে। মাস্ক, মেয়েদের লম্বা মোজা বা টাইটস, হ্যান্ড গ্লাভস, ড্রেস অথবা টপস, সব জায়গাতেই নেট ফেব্রিকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এমনকি জিনস ও টি–শার্টের ওপরে কিছুটা লম্বা, হাতকাটা কোটির মতো পরার ফ্যাশন এখন খুবই আগ্রহ জাগাচ্ছে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে।

ফুলেল ও বর্ণিল ডাই, প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি

ফুলেল ছাপা ও এমব্রয়ডারির প্রাধান্য সামনের বছর আরও বৃদ্ধি পাবে

ফুলেল ছাপা ও এমব্রয়ডারির প্রাধান্য সামনের বছর আরও বৃদ্ধি পাবে
ছবি: পেকজেলস ডট কম

মহামারির দুর্বিষহ আর বিবর্ণ ২০২০ সালকে বিদায় দিচ্ছে ফ্যাশন দুনিয়া। আতঙ্ক নয় সচেতনতা, ভয় নয় আশা—এই সব বার্তা নিয়েই দেখা যাচ্ছে বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে উজ্জ্বল রং, যেমন রাজকীয় নীল বা রানি গোলাপি রঙের বসন–ব্যসনের মেলা। ফুলেল ছাপা ও এমব্রয়ডারির প্রাধান্য সামনের বছর আরও বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই ভাবছেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। এমনকি জ্যাকেট বা জিনসের ডেনিমেও আঁকিবুঁকি, ডাই, ব্লক, রঙিন সুতার কাজ দেখা যাচ্ছে।

চপ্পল, স্লিপারে অভিনব ডিজাইন

ঘরে পরার চপ্পল বা স্লিপারের দিকে মনোযোগ বেড়েছে ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলোর

ঘরে পরার চপ্পল বা স্লিপারের দিকে মনোযোগ বেড়েছে ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলোর 
ছবি: পেকজেলস ডট কম

ঘরে পরার চপ্পল বা স্লিপারের দিকে মনোযোগ বেড়েছে ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে। মজার ও আরামদায়ক ডিজাইনের ফ্লিপ ফ্লপ এখন ভবিষ্যতের ফ্যাশন ট্রেন্ড। সেই সঙ্গে আরামদায়ক স্পোর্টস শুরুর দিকে সবার আগ্রহ আরও বাড়বে। কারণ, বিশ্বব্যাপী সবাই এখন বাইরে গিয়ে জগিং বা হাঁটার গুরুত্ব এই সময়ে আরও বেশি করে অনুধাবন করছে।

বাসার কাপড়ে ডিজাইনার ছোঁয়া

বাসায় পরার পোশাক এবং রাতপোশাকের ক্ষেত্রে এত বৈচিত্র্য আর মনোযোগ মনে হয় আর কখনো ফ্যাশন দুনিয়া দেখেনি। বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো পায়জামা সেট, আরামদায়ক ড্রেস তৈরি করছে নতুন বছরেও সবার আপাতত ঘরে থাকার প্রবণতাকে উৎসাহ দিতে গিয়ে। সুতি, পিউর সিল্ক, নিট ফেব্রিক এবং সাটিন কাপড় ব্যবহার হচ্ছে এই সব পোশাকে। আর্টিফিশিয়াল তন্তু বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক কাঁচামাল এখন পোশাকশিল্পে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

বড় ব্যাগ ও পানির বোতল রাখার হোল্ডার

ওভারসাইজড টোটে ব্যাগ বা হাতব্যাগ ফিরে এসেছে ফ্যাশন দুনিয়ায়

ওভারসাইজড টোটে ব্যাগ বা হাতব্যাগ ফিরে এসেছে ফ্যাশন দুনিয়ায়
ছবি: পেকজেলস ডট কম

হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, আই প্রোটেক্টরসহ কত কিছুই না নিয়ে যেতে হচ্ছে বাইরে বেরোলে আজকাল। সে জন্যই বোধ হয় ওভারসাইজড টোটে ব্যাগ বা হাতব্যাগ ফিরে এসেছে ফ্যাশন দুনিয়ায়। অ্যাকসেসরিস যদি কাজেই না লাগল, তবে কি আর লাভ বলুন! তাই দেখনদারি সর্বস্ব ক্লাচ ব্যাগের দিন ফুরিয়ে বড় ব্যাগ রাখাই এখন ফ্যাশনেবল। আবার এদিকে, ফেন্দি বা গিভেঞ্চির মতো ফ্যাশন হাউসগুলোর বাইরের পোশাকের সঙ্গে পানির বোতল রাখার হোল্ডারযুক্ত ছোট্ট ব্যাগ দেখা যাচ্ছে, যাতে কোনো কোনোটিতে হালকা স্ন্যাক্স রাখারও ব্যবস্থা আছে। করোনার সময়ে বাইরে গিয়ে নিজের বাড়ি থেকে আনা পানি ও খাবার খেতে উৎসাহিত করতেই এই ব্যবস্থা।

নতুন বছরের ফ্যাশন যেন মহামারির আতঙ্কের মধ্যেও আমাদের কাছে মুক্তি আর আশার আলোর প্রতীক। সারা বিশ্বেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে প্রত্যয় মানুষের মধ্যে এসেছে, তাই আরও দৃঢ় রূপ নেবে সামনের দিনে পোশাক–আশাক আর অনুষঙ্গের উপযোগিতায়, এমনটাই বলছে আগামী দিনের ফ্যাশনের পূর্বাভাস।

তেজপাতায় সৌন্দর্য চর্চা

প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছেছবি: ফ্রিপিক

যদি বলি তেজপাতা ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখে তাহলে চমকাবেন না কিন্তু। এর ভেষজগুণে বলি রেখা দূর করার উপাদান আছে বলেই স্বীকার করেন বিউটিশিয়ানেরা। মসলা হিসেবে তেজপাতার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা থাকলেও প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সৌন্দর্য চর্চায় এর গুরুত্বের কথাও স্বীকার করা হয়েছে। ফলে শত শত বছর ধরে হাতের কাছের যেসব জিনিস দিয়ে সৌন্দর্য চর্চা করে আসা হচ্ছে তেজপাতা সেগুলোর অন্যতম।

শুকনো তেজপাতা

শুকনো তেজপাতা
ছবি: উইকিপিডিয়া

এখানে জানিয়ে রাখি, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রই যে সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার কথা বলেছে তাই নয়। আধুনিক বিজ্ঞানও সেটা স্বীকার করে। তেজপাতা থেকে পাওয়া তেল বিভিন্ন দামি পারফিউম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এর বাকল থেকে পাওয়া তেল দিয়ে সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ তো গেল তেজপাতাকে মেশিনে দিয়ে তার তেজকে ভেঙেচুড়ে অন্য একটি জিনিস বানিয়ে তার ব্যবহারের কথা। কিন্তু হাতের কাছে থাকা আস্ত তেজপাতা কীভাবে ব্যবহার করবেন সৌন্দর্য চর্চায় সে বিষয়ে কিছু টিপস দিয়ে রাখি।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে

অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য তিনি মুখে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ দিতে বলেছেন। তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার

সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার
ছবি: দারিয়া শেভৎসোভা, পেকজেলস ডট কম

ত্বক উজ্জ্বল করতে

বিউটি ক্রিমের দৌরাত্ম্য শেষ হয়নি আমাদের জীবনে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা সৌন্দর্য চর্চায় ভেষজে উপাদানের সহায়তা নিচ্ছি ত্বক উজ্জ্বল করতে। অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতা আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে। কীভাবে? বেশি পানিতে তেজপাতা সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ পানি ঠান্ডা করুন। তারপর সে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেজপাতা সেদ্ধ ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ ধোয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও এটি উপকার করবে।

শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে

তেজপতার গুঁড়ো গরম পানিতে ভিজিয়ে স্নান করলে শরীরের দুর্গন্ধ কমে

তেজপতার গুঁড়ো গরম পানিতে ভিজিয়ে স্নান করলে শরীরের দুর্গন্ধ কমে
ছবি: সংগৃহীত

কত কিছুই তো আমরা ব্যবহার করি শরীর থেকে দুর্গন্ধ তাড়াতে। এবার শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে প্রায় বিনা পয়সার একটি টিপস দেওয়া যাক আপনাদের। রান্নার জন্য কেনা শুকনো তেজপাতা গুঁড়ো করে নিন। পরিষ্কার এক টুকরো কাপড়ে গুঁড়ো তেজপাতা দিয়ে পুঁটলি বাঁধুন। গুঁড়ো তেজপাতার সেই পুঁটলি কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন কুসুম গরম পানিতে। তারপর সে পানি দিয়ে স্নান সেরে নিন। শীতে গরম পানিতে স্নান করার অভ্যাস আমাদের আছে। এ সময় এই টিপসটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। একদিন তেজপাতা গুঁড়ো দিয়ে স্নান করলেই হবে না। এটা চালিয়ে যেতে হবে এক নাগাড়ে কিছুদিন।

খুশকি দূর করতে

আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর জায়গায় তেজপাতা সেদ্ধ করা ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়াও কমে যাবে। চুল পড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করুন। তাতে চুল আর উঠবে না।

দাঁত উজ্জ্বল করতে

মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিলে দাঁত উজ্জ্বল হয়

মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিলে দাঁত উজ্জ্বল হয়
ছবি: উইকিপিডিয়া

ব্রাশ তো প্রতিদিন করেনই। সেটা অব্যাহত রাখুন। ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, নিয়ম করে মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিন। কাচা তেজপাতা মাউথ ওয়াশ হিসেবেও কাজ করবে আপনার মুখে।