প্রকল্পের ব্যয় বারবার বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও প্রকল্পের ব্যয় বারবার বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর এই ধারা বন্ধ করতে হবে।’

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে এসব কথা বলেন।এ সময় তিনি বলেন, ‘যথা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) ডাকুন। প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন দেরি হচ্ছে তার কারণ অনুসন্ধান করুন।’একনেক বৈঠক শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটি উপস্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণ কী? ছোটখাটো কাজ করতে কেন এত সময় লাগছে? এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) কে তাও জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় এ প্রকল্পের পিডি উপস্থিত ছিলেন না। তবে কৃষি সচিবও কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছরের জন্য নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কেন দুই বছর সময় চাওয়া হচ্ছে? আবার ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে কেনও ১০৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে?’ এর কারণ অনুসন্ধান করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী পিডিদের ডাকারও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ড. শামসুল আলম।

একনেক মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ‘চরখোলা-তুষাখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি একটি পুরনো সড়ক। এই প্রকল্পে কেন এত সময় লাগবে?’

এর ওপর আবার প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যথা সময়ে প্রকল্প শেষ করতে হবে। সময় ও টাকা বাড়ানোর এসব ধারা বন্ধ করুন।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শর্ত পূরণ করা হয়নি বলে ‘পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে  ‘দোতলা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, রাস্তা তৈরি করতে গাছ নষ্ট করা যাবে না। মাঠের মধ্যে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সড়ক মানসম্মতভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের সড়কের জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

তিতাসের চার প্রকৌশলীসহ ৮ জন রিমান্ডে

তিতাসের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চার প্রকৌশলীসহ প্রতিষ্ঠানটির আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

শনিবার ঢাকা ও নারায়ণঞ্জের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের আটকের পর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেককে দুই দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-তিতাস নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বি, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারি প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, হেলপার মো. হানিফ মিয়া ওকর্মচারী মো. ইসমাইল প্রধান।

এর আগে মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার ৩ দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই ৮ জনকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ চলাকালে পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের ভেতরে ৩৪ জন দগ্ধ হন। ওই ঘটনায় মসজিদের আশপাশে থাকা আরও ৩ জন দগ্ধ হন।

দদ্ধ ৩৭ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার পর্যন্ত ৩৩ জন মারা যান। চিকিৎসাধীন বাকি ৩ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।