ঢাকায় পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে সমাবেশ, লাঠিচার্জে আহত ৭০, গ্রেপ্তার ৫০, বিবিধ মামলায় আসামী হাজারের উপরে – গায়েবী মামলার অভিযোগ

পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ সারাদেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালনের সময়ও রাজধানী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে দলটির কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও লাঠিচার্জে ৭০ জন আহত হয়েছে। এগুলোর সূত্র ধরে কমপক্ষে সাতটি আলাদা এবং সম্পূরক মামলা হয়েছে যেগুলোতে প্রায় ১১০০ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এই ১১০০ ব্যক্তির মধ্যে ৮০০-র বেশি অজ্ঞাতনামা এবং অভিযোগ উঠেছে এমন অনেককেই আসামী করা হয়েছে যারা কোনো মিছিল, সভা, সভাবেশ বা প্রতিবাদ র‍্যালীতে ছিলেননা।

প্রসঙ্গতঃ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীদের পুলিশি বাধা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অব্যাহত গতিতে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পুলিশি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের কাছে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কোনো মূল্য নেই। দেশে করোনা সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়ার বদলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখাকেই সরকার তাদের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত করেছে।

সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে সমবেত হন। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা মৎস্য ভবন, তোপখানা সড়কের মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয় এবং বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বিএনপির অবস্থানের কারণে এ সময় যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে জনগণ।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সচিবালয়ের পশ্চিম সড়ক হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে সমাবেশস্থল থেকে মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানোর পর উত্তেজনা থিতিয়ে আসে। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির প্রশিকায় ৬০/৭০ জনের মিছিলে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেত্তৃত্বে মিছিলে পুলিশ ও যুবলীগের কর্মীরা বেপরোয়া হামলা চালালে অনেকেই আহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২১ সালে সরকার পরিবর্তনের প্রত্যাশায় জনঐক্যের সংকল্প ব্যক্ত করে বলেন, নতুন বছরে আমাদের সবার একটাই সংকল্প, একটাই শপথ হবে- ‘ঐক্য’। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই লক্ষ্যে সবাইকে এক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে উদ্ধারের যে সংগ্রাম; সে সংগ্রাম শুধু বিএনপির একার নয়। সব রাজনৈতিক দলকে, সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সরিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেই আকাঙ্ক্ষা ও চেতনাকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, প্রশাসনের জোরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা বাংলাদেশের সব অর্জন ধবংস করেছে। তারা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

৩০ ডিসেম্বরে পুলিশি আচরণের নিন্দা করে বিএনপির প্রচার ও গণযোগাযোগ দপ্তরের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এম.পি. জহির উদ্দীন স্বপন বলেন,  সরকারী এমন জুলুম আর বেশিদিন চলবে না। মানুষ জেগে উঠছে। নির্লজ্জ সরকার নীতিভ্রষ্টভাবে দেশ চালাচ্ছে এবং গত দুই নির্বাচনের মহা কারচুপি কারো অজানা নয়। অবৈধ গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় অযাচিত ও অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপিকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্যে, বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। উদাহরণস্বপরূপ উনি বলেন, মিরপুরের রূপনগর থানায় আমার সমর্থক দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং শুধু তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই আওয়ামী পুলিশ শান্তি পাননি, তারা এই দুজনের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও ঢুকিয়ে দিয়েছে মামলায়। এর ভেতর একজন থাকেনই যুক্তরাজ্যে, যার একমাত্র অপরাধ আমার সাথে তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। এভাবে কোনো দেশে ন্যায়বিচার চলতে পারে? ৮০০-র বেশি নাকি অজ্ঞাতনামা আসামী!! এইগুলা কী আমরা বুঝিনা? আমাদের কী তারা বোকা পেয়েছেন? তাদের ক্ষমতার অপব্যাবহারের দিন আর বেশি নেই।

এইসূত্রে রূপনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে জবাবে বলা হয়, যাদের গ্রেপ্তার করা  হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাদের নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। যথাসময়ে তা প্রকাশ করা হবে। গায়েবী মামলার অভিযোগে থানার এস.আই  বলেন – মোঃ শহীদুল ইসলাম ও মোঃ মইন উদ্দিন চৌঃ এর নামে এজাহারে দেয়ার যথার্থ কারণ আছে। দেশের বাইরে থাকলেই কেউ অপরাধ সংগঠন করতে পারেনা বাংলাদেশে, এই ধারণা ভুল। কেইস কোর্টে উঠলে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আলামত সহকারে হাজির করা হবে। এর বেশি এই মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না।