Blog

করোনায় সুস্থ সাড়ে ৭ কোটি

বিশ্বে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং ইউরোপসহ কয়েকটি দেশে মিলেছে করোনার নতুন ধরন। এটি আগের ভাইরাস থেকে অনেকটা শক্তিশালী বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরইমধ্যে বর্তমানে করোনায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ কোটি ৩৫ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ কোটি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ২৯৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫২ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাত কোটি ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪ জন।

করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন দুই কোটি ৬৭ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯ জন। মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার ২৭৯ জনের।

আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি সাত লাখ ৫৮ হাজার ৬১৯ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ৪২৮ জন।

আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় ৯২ লাখ ৪ হাজার ৭৩১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৫৩৪ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া চতুর্থ স্থানে রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৯ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছে ৭৩ হাজার ১৮২ জন।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে যুক্তরাজ্য বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছে এক লাখ ছয় হাজার ১৫৮ জন।

এদিকে আক্রান্তের তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, স্পেন সপ্তম, ইতালি অষ্টম, তুরস্ক নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।

আজ টিভিতে যা দেখবেন

লা লিগায় আজ মাঠে নামছে বার্সেলোনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দেখবেন লিভারপুল, চেলসি আর লেস্টারের ম্যাচ। সিরি ‘আ’ তে দেখবেন নাপোলি আর রোমার খেলা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মুখোমুখি হবে রহমতগঞ্জ এমএফএস ও উত্তর বারিধারা।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ টি স্পোর্টস
রহমতগঞ্জ–উত্তর বারিধারা বেলা ৩–৩০ মিনিট
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ টি স্পোর্টস, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
চেলসি–বার্নলি সন্ধ্যা ৬টা
লেস্টার–লিডস রাত ৮টা
ওয়েস্ট হাম–লিভারপুল রাত ১০–৩০ মিনিট
ব্রাইটন–টটেনহাম রাত ১–১৫ মিনিট
সিরি ‘আ’ সনি টেন ২
স্পেৎসিয়া–উদিনেসে বিকেল ৫–৩০ মিনিট
আতালান্তা–লাৎসিও রাত ৮টা
নাপোলি–পার্মা রাত ১১টা
রোমা–হেল্লাস রাত ১–৪৫ মিনিট
লা লিগা ফেসবুক লাইভ
হেতাফে–আলাভেস সন্ধ্যা ৭টা
কাদিজ–আতলেতিকো রাত ৯–১৫ মিনিট
গ্রানাদা–সেলতা ভিগো রাত ১১–৩০ মিনিট
বার্সেলোনা–বিলবাও রাত ২টা
আবুধাবি টি–১০ লিগ সনি সিক্স, টি স্পোর্টস
পুনে–আবুধাবি সন্ধ্যা ৬টা
বাংলা–নর্দার্ন রাত ৮–১৫ মিনিট
ডেকান–কালান্দার্স রাত ১০–৩০ মিনিট
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ স্টার স্পোর্টস ২
হায়দরাবাদ–চেন্নাইয়িন বিকেল ৫–৩০ মিনিট
মোহনবাগান–কেরালা রাত ৮টা

বিশ্বে করোনায় ১০ কোটি ৩১ লাখ মানুষ সংক্রমিত

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩১ লাখ ছাড়িয়েছে। এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ২২ লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষ।

মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তার সর্বশেষ তথ্য বলছে, আজ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ২৩৪। একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ২২ লাখ ২৯ হাজার ২৩৪ জন।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ৩৪২।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪০। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৮১ জন।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯১। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩১২ জন।

ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৫। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৭১ জন।

তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। স্পেন সপ্তম। ইতালি অষ্টম। তুরস্ক নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে একই বছরের ১১ জানুয়ারি।

গত বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে।

গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯’।

গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১১১ জনের। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৭ জন।

বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানানো হয় গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় গত বছরের ১৮ মার্চ।

কফিশপে বসে ‘অফিস’ করা কেন ভালো

ধরুন, আপনি একটা কফিশপে বসে আছেন। কফির ঘ্রাণে চারদিক ম–ম করছে। কখনো কফির কাপ আর চামচের টুংটাং, কখনো পাশের টেবিল থেকে কারও চাপা হাসির শব্দ কানে আসছে। গবেষণা বলছে, এমন পরিবেশ মানুষের কর্মক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কেননা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য কফিশপের আছে, যা বাসায় বা অফিসে পাওয়া যায় না।

করোনাকালে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ কথাটির ব্যাপক প্রচলন হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু ‘ওয়ার্ক ফ্রম কফিশপ’ ব্যাপারটা চালু আছে। অফিসে না গিয়েও যে অফিস করা যায়, ২০২০ সালেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে। আর আমাদের প্রশিক্ষণও হয়ে গেছে। অতএব সামনের দিনগুলোতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম কফিশপ’–এর ধারণা আরও জনপ্রিয়তা পেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কফিশপের কোলাহল, ঘ্রাণ এবং দৃশ্যের পরিবর্তন আমাদের সৃজনশীল ভাবনায় সাহায্য করে।

২০১২ সালে জার্নাল অব কনজিউমার রিসার্চে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, কফিশপে সাধারণত নিচু থেকে মাঝারি স্তরের একধরনের কোলাহল থাকে। শব্দের এই মাত্রা আপনাকে পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করতে দেবে, তা নয়; বরং কখনো কখনো কিছুটা অন্যমনস্ক করে দেবে। এটিই ভিন্নধর্মী চিন্তা ও সৃজনশীল আইডিয়ার জন্য সহায়ক। একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে ২০১৯ সালে করা আরেকটি গবেষণায়—কফিশপের শব্দের মাত্রা আমাদের ইন্দ্রিয়কে সজাগ রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এমনকি ইদানীং কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের ভেতরে কফিশপের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। একে বলা হচ্ছে ‘দ্য কফিশপ ইফেক্ট’।

ইদানীং কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের ভেতরে কফিশপের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে

ইদানীং কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের ভেতরে কফিশপের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে
পেক্সেলস

যদি এমন হয় যে কফিশপে আপনি ছাড়া অন্য যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁরাও আপনার মতো কাজ করতে এসেছেন, তাহলে কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে আরও। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির অর্গানাইজেশনাল থিওরি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানকি লি বলেন, ‘ব্যাপারটা অনেকটা শরীরচর্চা করতে জিমে যাওয়ার মতো। জিমে গিয়ে আপনি যখন আরও অনেককে ব্যায়াম করতে দেখবেন, তখন আপনিও গড়িমসি না করে শরীরচর্চা শুরু করতে উদ্বুদ্ধ হবেন।’

বাসায় কিংবা অফিসে আমরা সাধারণত একই পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ কাজ করি। কিন্তু কফিশপের সুবিধা হলো, এখানে দৃশ্যপটে বৈচিত্র্য আছে। নানা ধরনের মানুষ আসবে, যাবে। যদি একেক দিন একেক কফিশপে বসে কাজ করেন, তাতেও আপনি বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন। সানকি লি বলেন, ‘একটা অফিস কীভাবে সাজানো হলো, তার ওপরও সৃজনশীলতা নির্ভর করে। একে বলা হয় একমুখী সৃজনশীল চিন্তা। যদি দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়, তা আপনাকে যেকোনো সমস্যার সন্তোষজনক ও ভিন্নধর্মী সমাধান পেতে সাহায্য করবে।’

কফিশপে কাজের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন নিউইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক করিডন স্মিথও। তাঁর মতে, অফিসের সাধারণ সভা কিংবা জুমের মতো অনলাইন মাধ্যমে সবাই এক হয়ে আলোচনা করার মধ্যে একধরনের ‘আনুষ্ঠানিকতা’ আছে। অন্যদিকে ক্যাফে বা কফিশপের আলোচনা কিছুটা অনানুষ্ঠানিক। এটিও সৃজনশীল চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করে।

এত সব যুক্তি উপস্থাপনের পর গবেষকেরা বলছেন সবচেয়ে কার্যকর উপাদানটির কথা, যে কারণে লোকে কফিশপে যায়—কফি! ধোঁয়া–ওঠা এক কাপ কফি যদি থাকে সামনে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু চুমুক দিতে পারলে নিশ্চয়ই তা আপনাকে চাঙা রাখবে।

টি–টেনে জয়ী অধিনায়ক নাসির, নিলেন ৩ উইকেট

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নাসির হোসেন যেন ভুলে যাওয়া এক নাম। একসময় জাতীয় দলের নিয়মিত এই তারকা নির্বাচকদের ভাবনায় নেই বেশ অনেক দিনই হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন একটা পারফরম্যান্স নেই তাঁর। অমিত সম্ভাবনার জায়গায় দাঁড়িয়েও নাসিরের পতনই দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে এই নাসিরই কাল আবার আলোচনায় আবুধাবি টি-টেন লিগে। এই প্রতিযোগিতার প্রথম দিন নাসিরের অধিনায়কত্বে ম্যাচ জিতেছে পুনে ডেভিলস। বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে সে জয়ে ভালো অবদানও রাখেন নাসির।

টস জিতে ডেকান গ্ল্যাডিয়েটরসকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন নাসির। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বোলিং করতে এসে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা সুনীল নারাইনকে। এরপর শেষ বলে ফেরান আফগানিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান আহমেদ শাহজাদকে। এরপর সপ্তম ওভারে আবার বোলিংয়ে এসে ভারতের প্রশান্ত গুপ্তাকে ক্যারিবীয় ক্রিকেটার কেনার লুইসের ক্যাচ বানান তিনি। ২ ওভার বোলিং করে ১৮ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট।

অধিনায়ক হিসেবে জিতলেন টি–টেন লিগের প্রথম ম্যাচই।

অধিনায়ক হিসেবে জিতলেন টি–টেন লিগের প্রথম ম্যাচই।

পুনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন আজম খান। পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার মাত্র ১৩ বলে ৪ ছক্কায় এ ইনিংসটি খেলে ডেকানকে লড়াইয়ের মতো সংগ্রহ এনে দেন। ২৫ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ক্যামেরন ডেলপোর্ট। নাসিরের ৩ উইকেট ছাড়াও ২ উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওমানের ক্রিকেটার মুনিস আনসারি।

পুনে ডেকানের সংগ্রহ পেরিয়ে যায় ৯.২ ওভারে। নাসির অবশ্য ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। ক্যারিবীয় ক্রিকেটার লুইস ৫৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলের জয়ে রাখেন বড় অবদান। তিনি মাত্র ২৮ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় খেলেন ইনিংসটি। আরেক ক্যারিবীয় ক্রিকেটার চ্যাডউইক ওয়ালটন করেন ১৮। ইংলিশ ক্রিকেটার টম-কোহলার ক্যাডমোর করেন ১২। কাল অন্য ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেনের নেতৃত্বে ৫ উইকেটে জিতেছে মারাঠা অ্যারাবিয়ানস। নর্দান ওয়ারিয়র্সের ১২৭ রান তাড়া করতে নেমে জয় তুলে নেয় দলটি। ৩ বলে ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক। নর্দানে খেলছেন বাংলাদেশের সাবেক ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিক।

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় ৪ ফেব্রুয়ারি

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ১৮ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় সাবেক এক সংসদ সদস্যসহ ৩৪ জনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হুমায়ুন কবির এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে এ মামলার রায় ঘোষণার দিন আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরায় যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখা শেষে সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হন শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা।

এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশি আদালতে মামলাটি করেন। পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৬ জন আসামি পলাতক রয়েছে।

অব্যবহৃত পড়ে আছে বিটিএমসি’র সাড়ে ৬শ’ একর জমি!

সাত বছরেও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সম্পূর্ণ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের ২৫টি মিলের ৬৩৬ একর জমি। বিরাট সম্ভাবনা থাকার পরও যা কাজে লাগাতে পারছে না সরকার।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

মন্ত্রী জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)’র বন্ধ মিলগুলো চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার প্রেক্ষিতে তখন বন্ধ মিলগুলো পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)’র মাধ্যমে পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্তগ্রহণ করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রায় সাত বছরেও সেখানে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি আনতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন ব্যবসাবান্ধব স্থানে বিটিএমসি’র ২৫টি মিলের ৬৩৬.৩৮ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।  বিটিএমসি’র ২৫টি মিলের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) নীতিগত অনুমোদন পাওয়া ১৬টি মিলের মধ্যে ইতোমধ্যে কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল, ওরিয়ন গ্রুপ ও আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলটি কনসোর্টিয়াম অব তানজিনা ফ্যাশন লিমিটেডকে পিপিপি’র মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। এবার চট্টগ্রামের আর আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এসব মিলের জমি পিপিপি’র মাধ্যমে উৎপাদন খাতে ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে, অপরদিকে, দেশের জিডিপি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতি আরো সুদৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশই প্রথম পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ-পিপিপি’র মাধ্যমে বন্ধ টেক্সটাইল মিলগুলোকে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বন্ধ এসব মিলগুলো আবার চালু করা গেলে এসব শিল্প-প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ জন্যই, সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বন্ধ টেক্সটাইল মিলগুলো পিপিপি’র মাধ্যমে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

এ সময় বস্ত্র ও পাটসচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য শিল্পায়নের কোন বিকল্প নাই। পাশাপাশি বেকার সমস্যা দ্রুত দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে শিল্পায়নের মাধ্যমে কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় বিজেএমসি ও বিটিএমসির মিলগুলো পিপিপি মডেলের মাধ্যমে উৎপাদনের ধারায় ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠানে, শিল্পকারখানার ইউটিলিটি সমস্যার সমাধানে সরকারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলেও নিশ্চিত করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বন্দর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন এই সরকারের আমলেই হয়েছে। বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তা, স্টেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যখনই বস্ত্রখাতে কোন সমস্যা হয়েছে তখনই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বেগম সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন- বিটিএমসি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, বস্ত্র উৎপাদন ও বস্ত্র বিপণনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক

ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এখনও পারের অপেক্ষায় রয়েছে ঘাটে ৭ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন। তীব্র শীতে ভোগান্তিতে যাত্রী ও শ্রমিকরা। 

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, রাত ১১টা থেকে কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার মাত্রাও বাড়তে থাকে। রাত ১টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে বিকন বাতি ও মার্কিং পয়েন্টের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।

এ সময মাঝ নদীতে ৩৮টি যানবাহন নিয়ে আটকে পড়ে ছোট-বড় ৩টি ফেরি। ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর কুয়াশার মাত্রা কমে এলে সকাল থেকে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়।

১৪ দিনের মাথায় শিশু রিফান হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

১৪ দিনের মাথায় কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের শিশু রিফান (৫) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

মাছ ধরার বড়শির ছিপ তৈরির সময় দুষ্টুমি করছিল নিহত শিশু রিফান। তখন বিরক্ত হয়ে শাকিল ইট ছুড়ে মারলে তা মাথায় লাগে। ওই আঘাতে মারা যায় রিফান। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করেছেন হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম।

মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে আসামি শাকিলকে জেলহাজতে হয়েছে।

নিহত রিফান ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. শরীফুল ইসলামের ছেলে এবং বৈদ্যনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র। শাকিল (২২) একই গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে।

জানা যায়, সোমবার রাতে মেঘনার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর এলাকা থেকে হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বে মেঘনা থানার পুলিশ শাকিল নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে।

উল্লেখ্য, উপজেলার বৈধ্যনাথপুর গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী শরিফ হোসেনের পাঁচ বছরের শিশু রিফানুল ইসলাম রিফান গত ১২ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির পাশে খেলাধুলা করতে গিয়ে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে শিশুটির মা রজনী বেগম বাদী হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মেঘনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

গত শুক্রবার সকালে উপজেলার ওমরাকান্দা ব্রিজের নিচে বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।

মেঘনা থানার ওসি আব্দুল মজিদ জানান, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার রসুলপুর এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়।

টিকা নিতে অনীহা ও ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্ব

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কাউকেই টিকা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্র বাধ্য করবে না। এটাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার নীতিতত্ত্ব। তবে এটা সত্য যে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে আইন কখনো কখনো ব্যক্তিকে বাধ্য করে। যেমন সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালানো অথবা প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শুধু ব্যক্তির নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থেই নয়, সমাজের অন্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়ে থাকে।

মূল বিষয়টি হলো, মানুষের দেহে প্রয়োগযোগ্য যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই তাঁর সিদ্ধান্ত নেবেন, অন্য কেউ নন; যতক্ষণ পর্যন্ত রোগী নিজে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও সংক্রামক ব্যাধির টিকা শুধু ওই টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিকেই নয়, তাঁর আশপাশে থাকা অন্যদেরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়, তারপরও রাষ্ট্র ব্যক্তিকে টিকা নিতে বাধ্য করতে পারে না।

এটি মনে রাখা জরুরি যে বাংলাদেশ জাতীয় টিকা কার্যক্রমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সফল একটি দেশ ও টিকা দ্বারা পোলিওসহ নিয়ন্ত্রণযোগ্য বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধে দেশটি কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে। কিন্তু করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশের মানুষের মধ্যেই আস্থাহীনতা লক্ষণীয়। বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও যদি একই পরিস্থিতি হয়, তবে সেই দেশগুলো কীভাবে এই পরিস্থিতির সামাল দেবে? এমন একটি পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই কোনো সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো হতাশ হয়ে বসে থাকতে পারে না। যখন বাধ্য করার নীতিটি অনৈতিক, তখন আচরণ-অর্থনীতির তত্ত্বের আলোকে ভিন্ন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ বিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড থ্যালার ২০১৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। অধ্যাপক থ্যালার ও ক্যাশ সানস্টেইন আচরণগত অর্থনীতির নজ থিওরি বা ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্ব নিয়ে ২০০৮ সালে ‘নজ ইমপ্রুভিং ডিসিশন অ্যাবাউট হেলথ, ওয়েলথ অ্যান্ড হ্যাপিনেস’ বইটি প্রকাশ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বিশেষ লক্ষ্যে মৃদু ধাক্কা দিলে তাদের সেই গন্তব্যের দিকে ধাবিত হতে দেখা যায়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ধাক্কা ভালোই কাজ করে।

যেমন ধরুন, রেস্টুরেন্টের মেনু থেকে কোন খাবারটা পছন্দ করবেন। আপনার পাশের বন্ধুটি কিছুক্ষণ আপনার এই অবস্থা দেখে মেনুটা নিজের হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখল ও তারপর বলল, ‘২০৫ নম্বর খাবারটা ভালো হবে। দেখো, এটাতে প্রচুর সবজি আছে, সঙ্গে মাছ। নিউট্রিশন ভ্যালু অনেক।’ আপনি বন্ধুর এই যুক্তি ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই খাবারই আপনি অর্ডার করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুটি মূলত আপনাকে একটা মৃদু ধাক্কা দিয়ে একটি সিদ্ধান্তের দিকে ঢেলে দিল। এটা মৃদু ধাক্কা তত্ত্ব যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে, সেটাকেই তুলে ধরছে।

আমার এই লেখার প্রেক্ষাপট এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় কোভিড-১৯ বা করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বহুমুখী আলোচনাকে কেন্দ্র করে।

করোনার টিকা গ্রহণে বাংলাদেশের মানুষের অনাস্থার বেশ কিছু কারণ আছে। সে কারণগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও দেখা যায়।

প্রথমত, বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিটা পরিসংখ্যান অনুসারে ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কম বলেই মনে হয়। হয়তোবা বাস্তবের সঙ্গে সরকারি হিসাবের একটি ফারাক আছে, কিন্তু তা দেশের মানুষকে ভীতিকর কোনো পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়নি। এই তুলনামূলক কম ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনেকেই টিকা নিতে না–ও চাইতে পারেন।

টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যা–ই বলুন, সাধারণ মানুষ আস্থা পাচ্ছেন না। কেননা এটা উপলব্ধি করার মতো যথেষ্ট সময় পার হয়নি। ইতিমধ্যেই নরওয়েতে টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু বেশ অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। এই ব্যক্তিরা যে ৭৫-৮০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী ও বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেটা সাধারণ মানুষের অনেকেই সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করেন না।

দ্বিতীয়ত, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যা–ই বলুন, সাধারণ মানুষ আস্থা পাচ্ছেন না। কেননা এটা উপলব্ধি করার মতো যথেষ্ট সময় পার হয়নি। ইতিমধ্যেই নরওয়েতে টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু বেশ অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। এই ব্যক্তিরা যে ৭৫-৮০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী ও বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেটা সাধারণ মানুষের অনেকেই সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করেন না।

তৃতীয়ত, অনেকেই মনে করেন, টিকার কোল্ড চেইন সঠিকভাবে মেনে চলার মতো সক্ষমতা অনেক দেশই রাখে না। তার ফলে টিকা কার্যকরতা হারাবে। চতুর্থত, অনেকেই ভাবছেন, আগে অন্যরা নিন, পরে বুঝেশুনে নিজে টিকা নেবেন।

একদিকে করোনার টিকা নিয়ে জনমনের শঙ্কা ও অনাস্থা, অন্যদিকে টিকা গ্রহণে বাধ্য করতে না পারার নীতিতত্ত্ব বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু উন্নয়নশীল দেশকে এক জটিল সমস্যায় ফেলেছে। তথাপি বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনেক কিছুই করার আছে সাধারণ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য। আচরণ অর্থনীতির ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্বের ব্যবহার করে বাংলাদেশ অনেকটাই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ‘ঐচ্ছিক’ থেকে কিছুটা ‘বাধ্যবাধকতার’ দিকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে টিকা গ্রহণের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কারা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্রমান্বয়ে টিকা পাবেন, তা সুনির্দিষ্ট করা ও গণমাধ্যমের সাহায্যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা অপরিহার্য।

শিক্ষা ও প্ররোচনার মাধ্যমে জনগণকে মৃদু ধাক্কা দেওয়ার জন্য টিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য নিয়মিত গণমাধ্যমে তুলে ধরে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে অবহিত রাখার মাধ্যমে জনগণকে টিকার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা যায়। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো ধরনের উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না লুকিয়ে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা ও সেটির গুরুত্ব তুলে ধরাও এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে। এতে টিকা সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর সুযোগও কমে আসবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (তখন নির্বাচিত) স্বেচ্ছায় টিকা নিয়ে সেখানকার নাগরিকদের টিকা গ্রহণের দিকে কিছুটা ঠেলে দিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও আমরা একই কাজ করতে দেখেছি। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি দেশের ও বিভিন্ন অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, যেমন রাজনীতিবিদ (বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় সাংসদ, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান), সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক, ইমাম, পুরোহিত, পাদরি এবং স্থানীয় সমাজপতিরা প্রথম টিকা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘টিকা কর্মসূচির’ উদ্বোধন করতে পারেন।

উদ্দীপনা ও বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির মাধ্যমেও জনগণকে টিকা নেওয়ার দিকে মৃদু ধাক্কা দেওয়া যায়। জনমনে উদ্দীপনা তৈরির জন্য টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের চাকরিস্থলে কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এমনকি কিছু জবরদস্তি, যেমন ধরুন, হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য, উপাসনালয়ে যেতে হলে টিকা বাধ্যতামূলক করা যায়। এমনকি আন্তজেলা ভ্রমণ ও বিভিন্ন হোটেলে অবকাশ যাপনের জন্য যেতে হলে টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

পুরো টিকাদান পদ্ধতিকে কার্যকরী বা সক্ষম করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে করে জনগণের আস্থা তৈরি হয় ও তা বহাল থাকে। প্রতিদিন কী পরিমাণ মানুষ টিকা নিলেন, কোন এলাকায় কোন বয়স ও লিঙ্গের, সরকার তা প্রকাশ করবে গণমাধ্যমে। সরকার ছাড়া অন্য কেউ এই টিকা প্রদানের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। নকল টিকা প্রতিরোধ করার সব ব্যবস্থা প্রথমেই নিতে হবে। একবার আস্থা হারালে, তা স্বল্প সময়ে ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না ও টিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হবে। কোনো ধরনের অব্যবস্থা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সরকার নিজের ত্রুটি হিসেবে না দেখলে তা গণমাধ্যমে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করবে ও ভবিষ্যতে তা রোধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নিল, তা পরিষ্কার করবে।

‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্বকে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সহযোগী সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে অতিসত্বর এক বা একাধিক কর্মশালার আয়োজন করে একটি নীতিমালা ও কার্যপ্রণালি তৈরি করা জরুরি। অন্যথায় বহুবিধ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। সর্বোপরি, এটা না বললেই নয়, করোনা সংক্রমণ ও তাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে যে অবস্থায়ই আছে, তাতে টিকাদান কর্মসূচি ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট; এমনকি বহির্বিশ্বের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। কেননা অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।