পি কে হালদারের সহযোগী সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর!

পি কে হালদারের সহযোগী সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর!

পি কে হালদারের দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল হক মালয়েশিয়া থেকে বিবিএ পাস করে দেশে ফিরে ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কম্পানিতে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এর কয়েক বছর পর পি কে হালদারের অধীনে এভিপি হিসেবে যোগ দেন আইআইডিএফসিতে। পরে পি কে হালদার এমডি থাকা অবস্থায় রিলায়েন্স ফিন্যান্সে এসভিপি হিসেবে যোগ দেন তিনি।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, জবানবন্দিতে রাশেদুল হক আদালতকে জানান, পি কে হালদার খেয়াল-খুশিমতো গ্রাহকদের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করতেন। গ্রাহককে না জানিয়েই ঋণ নেওয়া হতো। এভাবে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন রিলায়েন্স ফিন্যান্সের কর্মকর্তা রুনাই আহমেদ, আল মামুন সোহাগ ও রাফসান আহমেদ চৌধুরী। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এসব অপকর্মে পি কে হালদারকে সহায়তা করতেন।

পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবালের এমডি হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে রাশেদুল হককে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি করে গেলেও মূল কর্তৃত্ব ছিল তাঁর হাতেই। এই কর্তৃত্ব ধরে রাখতে রিলায়েন্স লিজিংয়ে তাঁর অনুসারী রুনাই আহমেদ, আল মামুন সোহাগ, রাফসান, অভীক সাহাকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নিয়ে আসেন। এঁদের সঙ্গে পি কে হালদারের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

রাশেদুল হক জানান, ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগ ছিলেন পি কে হালদারের আত্মীয়-স্বজন। তাঁরা পি কে হালদারের কাছে ঋণের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতেন রাশেদুল হকের কাছে। রাশেদ সেটি রুনাই আহমেদের কাছে পাঠালে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ প্রস্তাবে স্বাক্ষর দিতেন রুনাই, সোহাগ ও রাফসান। সব বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে পি কে হালদার ঋণ প্রস্তাব পাস করতে বাধ্য করতেন।

রাশেদুল জবানবন্দিতে আরো জানান, মো. নওশের উল ইসলাম, মমতাজ বেগম, পাপিয়া ব্যানার্জি, বাসুদেব ব্যানার্জি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক হওয়ার পরও বেআইনিভাবে তাঁদের ভুয়া প্রতিষ্ঠান এমএসটি মেরিন, এমএসটি ফার্মা, নিউট্রিক্যাল, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ পি কে হালদার তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করে উত্তোলনের পর বিদেশে পাচার করেছেন।

জেনিথ ও লিপরো ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ১২৫ কোটি টাকার ঋণ। রিলায়েন্স লিজিংকে তিনটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ভাউচারের মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা দিয়েছেন রুনাই, সোহাগ, অভীক, রাফসান ও রাশেদ।

ট্রেজারি বিভাগ থেকে কোনো ঋণ অনুমোদন ছাড়াই শর্ট টার্ম ঋণের নামে এমডি রাশেদুল হক পিপলস লিজিংকে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ওই সময় পিপলস লিজিংয়ের এমডি ছিলেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী। পরে তা ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে উত্তোলন দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে এমডি রাশেদুল হক প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ দিয়েছেন। আনাম কেমিক্যাল, রহমান কেমিক্যাল, নর্দান জুটসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে পরে উত্তোলন করে পাচার করেন পি কে হালদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *