চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন

চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছরপূর্তি উদযাপন করছে চীন। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর জাপানি ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হয়ে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল তিয়ানআনমেন স্কয়ারে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খবর বিবিসির।

চীনের ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা টানানো হয়েছে। জাতীয় পতাকা শোভা পাচ্ছে শপিং মল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও।

মাও সে তুং যেখানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, এ পর্যন্ত কোনো শক্তিই চীনা জনতা ও জাতির অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি।

কুচকাওয়াজ করছেন সেনারা-এএফপি

এসময় তিনি মাও সে তুংয়ের মতো স্যুট পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। চীনের স্বাধীনতায় মাও সে তুংয়ের ভূমিকা তুলে ধরে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন জিনপিং।

স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সামরিক মহড়া শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এসময় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

৭০ বছর আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন কুয়োমিনটাং (কেএমটি) বা জাতীয় পার্টিকে পরাজিত করার পর মাও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

রাজতন্ত্রের পতনের পর এই পক্ষ দুটি ১৯২০ সাল থেকে রক্তক্ষয়ী এক গৃহযুদ্ধে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছিল।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন এটি। সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এ কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছে। এতে ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শনী করা হবে, ওড়ানো হবে ১৬০টি এয়ারক্রাফট।

কুচকাওয়াজে চীনের আট হাজার সদস্যের শক্তিশালী শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি দলও প্রথমবারের মতো অংশ নেবে।

এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারে মতো প্রদর্শন করা হবে। এ মারণাস্ত্রটি বিশ্বের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে এবং একই সময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণে সক্ষম।

প্রদর্শনীতে রাশিয়ার অ্যাভানগার্দ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার মতো হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ডিএফ-১৭রও দেখা মিলবে। জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি থাকবে দূরপাল্লার একাধিক রকেট লঞ্চারের উপস্থিতি।

কুচকাওয়াজ করছেন সেনারা-এপি

প্রদর্শনীতে থাকছে রসদ সরবরাহ বিমান ওয়াই-২০, স্টিলথ জঙ্গিবিমান জে-২০সহ উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানি ভরা ও বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনে সক্ষম বোমারু বিমান এইচ৬-এনের সর্বশেষ ভার্সন।

গত এক দশকে দেশটি প্রতি বছরেই তাদের সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এ বছর তাদের সামরিক বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে চীন যে অনেক বড় বড় ধাপ ফেলছে, তার একটি প্রমাণ পাওয়া যায় দেশটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বেইজিং শুধু সমরাস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নেই ৫৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীনের মোট অর্থনীতির আকার ছিল ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। পশ্চিমের অনেক সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশও যখন বেকারত্ব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না, তখন চীনের বেকারত্বের হার ৪ দশদিক ৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল চীন। বিপরীতে একই বছর দেশটি আমদানি করে ১ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ আমদানির চেয়ে রফতানি বেশি করে চীন। চীনা পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *