পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে অস্বীকৃতি, গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

যশোরের অভয়নগর থানার শোভনারা এলাকার অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ হিরা বেগমকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ঢোকানোর সময় মৃত্যু হয়। ২ ডিসেম্বর, বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাকে ঢামেক’এ নেয়া হয়। তার শরীরের এক-তৃতীয়াংশ আগুনে দগ্ধ হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে টানা পাঁচদিন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। হৃদয়বানদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত রাতে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তাকে।

জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর থানার মঠপাড়া এলাকার মো. খোকন সরদারের মেয়ের কথিত স্বামী বিল্লাল শেখের দেয়া আগুনে নিভে গেছে হিরা বেগমের (৩৩) প্রাণ। পাশ্ববর্তী দেশের পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন দেয় বিল্লাল শেখ। আর সে আগুনেই জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন অগ্নিদগ্ধ হিরা।

খুমেক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিরা বেগমের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকেজোর পথে। উন্নত চিকিৎসার জন্যে প্রথমেই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

অগিদগ্ধ হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগম জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগরের শোভনারা এলাকার আ. রশিদের ছেলে কবির শেখের সাথে পারিবারে সাধ্যমতো আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল তাদের একমাত্র মেয়ে হিরা বেগমের। মুদি দোকানি কবির শেখের নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল সুখে-শান্তিতে। এরমধ্যে বাদসাধে বাদামওয়ালা জাকির হোসেন। প্রথম স্বামী কবির শেখের সংসার ছেড়ে জাকির হোসেনের হাত ধরে নতুন করে সংসার সাজায় হিরা বেগম। এতে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে পিতা-মাতা ও ভাই হিরা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তিনি আরো জানান, এর মাস ছয়েক পর অভয়নগরে শিহড়ী এলাকার আক্কাস শেখের ছেলে বিল্লাল শেখের সাথে পরিচয় হয় হিরার। বিল্লাল মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দিয়ে তাকে ভারতে নিতে চায়। কিন্তু কি কাজ করতে হবে সেটা জানতে চায় হিরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারপিট করতো বিল্লাল। একপর্যায়ে ভারতের পতিতালয়ে হিরাকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে বিল্লাল। এ পরিকল্পনা গোপনে জেনে যায় হিরা। ফলে ভারতে যেতে রাজি হয়নি তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা বেগমের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিল্লাল শেখ।

গত ২৬ নভেম্বরের এ ঘটনার পর হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগমকে মোবাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানায় প্রতিবেশীরা। প্রথমে যাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও পরে একমাত্র মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরের হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

মৃত হিরা বেগমের ভাই ইয়াছিন সরদার বলেন, আজ বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ঢোকানোর সময় হিরার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে নিশ্চিত করে। আমার মা সাথেই আছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না যে হিরা আর নেই।

তিনি আরো বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গতকাল ০১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার অভয়নগর থানায় বিল্লাল শেখ, তার পিতা আক্কাস শেখ ও বিল্লালের মাকে আসামি করে মামলা করেছি।

অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীসভায় ছাত্রলীগের হামলা

ঝালকাঠীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী সভায় হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের বরিশাল জেলা সভাপতি রণি খন্দকার জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে তারা ঝালকাঠী শহরের ইকোপার্কে কর্মীসভা ও মাস্কবিতরণ কর্মসূচি শুরু করছিলেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইমের নেতৃত্বে একদল তরুণ লাঠিসোটা নিয়ে এসে ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীদের পেটাতে শুরু করে। এতে সভা পণ্ড হয়ে যায়।

তিনি জানান, হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী ফয়সাল আহমেদ, আবু সৈয়দ মুসা ও রায়হান আহত হয়েছেন। তিনজনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রণি খন্দকার এও অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলে কয়েকজন পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন।

ঝালকাঠী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ইকোপার্কে একটি হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু সেখানে হামলাকারী এবং সভা আয়োজনকারী কাউকেই পায়নি।

মহানবী (সা:) কে নিয়ে কুটূক্তি করায় নাস্তিক মাহাদি’র ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন।

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে এথিস্ট নোট নামে একটি অনলাইন পোর্টালের একটি ম্যাগাজিনে জঘন্য ও ঘৃণ্য কুটূক্তি করার অভিযোগে বর্তমান ব্লগারদের মধ্যে অন্যতম এমডি মাহাদি হাসানের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের মতে মাহাদি যে এই প্রথম মহানবী (সা:) কে নিয়ে কুটূক্তি করেছেন এমনটি নয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর নিজের ফেসবুক পেইজ এবং এবং বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবসাইটে মহানবী (সা:), আল্লাহ এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে খুবই জঘন্য ভাষায় লিখে আসছে।

আজ সোমমার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মাতুয়াইলে বিশ্বনবীর (স:) মর্যাদা রক্ষা ও নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের ডাকে এই সমাবেশে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসাসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও অংশ নেন।

এর আগে গতকাল (১৬ই ফেব্রয়ারী) রবিবার মোকাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৮ ধারায় হৃদয় কাজী নামে হেফাজতে ইসলামের এক কর্মী মাহাদী হাসান সহ এথিস্ট নোটের ম্যাগাজিননের সকল ব্লগার এবং নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে সমাবেশের অন্যতম ব্যক্তি হৃদয় কাজীর কাছে সাংবাদিকরা এই বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান যে, ”৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে কেউ এমন জঘন্য কুটূক্তি করবে, আমাদের প্রাণের পিয় মানুষটিকে নিয়ে এভাবে উল্টা পাল্টা লেখালেখি করবে আর আমরা বসে থাকবো?”

তিনি আরোও বলেন, ”দেখুন মাহাদি নামের এই নাস্তিকের দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কার্যকলাপগুলো চালিয়ে আসছে। নিজের ফেসবুকে প্রতিনিয়তই মুহাম্মদ (সা:) এবং আল্লাহকে নিয়ে খুবই বাজে বাজে স্ট্যাটাস, এদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।”

হৃদয় কাজী সহ এই সবাবেশে উপস্থিত থাকে সকল বক্তারা অবিলম্বে কটূক্তিকারী এমডি মাহাদি হাসনের ফাঁসি এবং সরকারকে বিশ্বনবীর বিরুদ্ধে অবমাননার জন্য ফাঁসির দন্ডের বিধান রেখে আইন পাশের দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন বক্তারা। এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মামলার আসামি মাহাদি হাসানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস যাবতই এথিস্ট নোট নামের এই ওয়েবসাইটি ইসলাম, আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সা:)কে নিয়ে লেখালেখি করে আসছে। আর এরই ধারাবাহীকতায় এবার তারা একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে এবং এখানেও মুসলমানদের কলিজা মুহাম্মাদ (সা:) সহ যেসব বিষয়গুরো তুলে ধরা হয়েছে যা দেখেই হেফাজতে ইসলাম এতো ক্ষিপ্ত হয়েছে এবং এই ম্যাগাজিনের সকলের নামে মামলাও দায়ের করেছে।

আমি এমপি শামীম ওসমান থাকতে কেউ জায়গা নিতে পারবে না

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, আগামী সিটি নির্বাচনে যদি ছোট বোন আইভি না থাকে তাহলে সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। কেননা সে কাজ করেও না, আবার করতে সহযোগিতাও করে না। সিটি মেয়র যদি আমার পছন্দের কেউ হয়, তাহলে সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। শনিবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় রাজউক কর্তৃক ৫০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান। জালকুড়ি ভূমি রক্ষা কমিটির আহŸায়ক বদিউজ্জামান বদু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় শামীম ওসমান বলেন, ‘শামীম ভাই’, ‘শামীম ভাই’- বলে চিৎকার করে লাভ নাই। বাবা-মার দোয়া নাও। বাবা মায়ের দোয়া ছাড়া জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ৫০০ বিঘা জায়গা বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করার দরকার নাই। আমি এমপি শামীম ওসমান থাকতে কেউ জায়গা নিতে পারবে না। তবে আধুনিক নগরায়ন হলে জমির দাম বাড়বে ১০ গুণ। সিদ্ধিরগঞ্জের এই এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে। সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাজউকের প্রয়োজন আছে। তবে সেটা হবে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে।
প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহŸায়ক মতিউর রহমান মতি, মজিবুর রহমান প্রধান, আব্দুস সামাদ বেপারী, ভূমি রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক সামছুল আলম বাচ্চু, এডভোকেট শাহজাদা দেওয়ান, আলাউদ্দিন প্রধান, লোকমান হোসেন, সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

ছাত্রী অপহরণ মামলায় ৭ জনের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন

দিনাজপুর অফিস : দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় অপহৃতা মাদ্রাসা ছাত্রী মরিয়ম আখতার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী প্রদান করেছে। আটক ৭ অপহরণকারীদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
গতকাল (শনিবার) দুপুর ২টায় দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল বারীর খাস কামরায় অপহৃতা মাদ্রাসা ছাত্রীর জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বিজুল গ্রামের মতিউর রহমানের কন্যা মাদ্রাসা ছাত্রী মরিয়ম আখতার (১৬)-কে অপহরণকারী জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। অপহরণকারীরা মরিয়মকে অজ্ঞানের ইনজেকশন দেয়ার সময় তার চিৎকারে লোকজন টের পেয়ে এলাকাবাসী অপহরণকারীদের ধাওয়া করে। অপহরণকারীরা মরিয়মকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুরে ফেলে দিলে এলাকাবাসী মাইক্রোবাসটি ঘেরাও করে আটক করে।
এ সময় উত্তেজিত জনতা মাইক্রোবাসের চালক লিটন (২১)সহ ৭ জনকে গণপিটুনি দেয়। অপহরণকারী ৬ জন হচ্ছে ওমর ফারুক (২৭), নুরুন্নবী (২৮), রায়হান কবির (২৯), কৌশিক আলম (২৮). ছোটন (২৩) ও রাসেল মিয়া (৩০)-কে আটক করে। জনতা আটক ৬ জনকে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। অপহৃতা মরিয়মের বাবা মতিউর রহমান বাদী হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বিরামপুর থানায় মামলা দায়ের করে।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত ৭ জনকে চিকিৎসা শেষে শনিবার দুপুরে দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বিচারক রোববার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ প্রদান করেন।

কমিশনের লোভে অযথা পরীক্ষা নিরিক্ষা

শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : শরীয়তপুর জেলা সদরসহ অপর ৫ উপজেলা সদরে ব্যাঙ্গের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে বে-সরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক গুলো সেবার নামে চালিয়ে যাচ্ছে জমজমাট ব্যবসা। চিকিৎসা ফি, অপারেশন চার্জ, সিট ভাড়া, পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা চার্জ নিচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই সাথে এক শ্রেণীর অসাধু ও অর্থলোভী চিকিৎসক বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্ট্রিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর গ্রহণ করছেন কমিশন। আর এ কমিশনের মাত্রা বেশী পকেটে ঢুকাতে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় বলে রোগীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দগুলোতে লোকবল ও যন্ত্রপাতি বিকল ও সল্পতার অযুহাতে এক্সে, ইসিজি, আল্টাস্নোগ্রাম, এমআরআই সহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো হয়। আর যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পরে থাকায় ও এসব পদে জনবল নিয়োগ না দেয়ার নেপথ্যেও রয়েছে কমিশন বানিজ্য। এ বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও এটি বন্ধে মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও বিভাগকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ও উপজেলার একাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার ও হাসপাতালের শীর্ষ কর্তারা জানান, চিকিৎসকের কমিশন বানিজ্যের কারনে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। পরীক্ষা ভেদে ২০ ভাগ থেকে শুরু করে ৩৫ এমনকি ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়। কমিশন না পেলে চিকিৎসকরা রোগীকে অন্য জায়গায় পাঠানোর হুমকী দিয়ে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই কমিশন দিয়ে থাকে। যদি চিকিৎসককে কমিশন দিতে না হতো তবে রোগীদের চার্জ অনেকটাই কমে আসতো।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা দুর্নিতী প্রতিরোধ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজ্জম ফরিদী বলেন, ক্লিনিক গুলোর স্থায়ী রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও অনেক ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে তা নেই। আবার জেলা উপজেলায় কর্মরত যে সকল চিকিৎসক ক্লিনিকের সাথে জড়িত তারাই মাঝে মাঝে রোগী দেখেন তখন আবার সরকারি হাসপাতালের রোগীরা বঞ্চিত হয়। শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সহ উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় ক্লিনিকের দালালরা চিকিৎসকের চেম্বারে সাহেবী কায়দায় বসে গল্পগুজব করছে। চিকিৎসক তাদেরকে খুশি করতেও অন্তত একটি পরীক্ষা দিতে বাধ্য হন বলে জানা যায়। পরীক্ষা নিরিক্ষা দেয়ার পরই শুরু হয় রোগীকে নিয়ে দালালদের টানা হেচরা। ফলে চিকিৎসা নিতে এসেও ভোগান্তিতে পরে তারা।
এব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল্যাহ বলেন, আমি আমার হাসপাতালের চিকিৎসকদের বলে দিয়েছি তারা যেন অহেতুক পরীক্ষা নিরিক্ষা না দেন। দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন স্থানীয় লোকজন রোগীর সেবার নামে এসব করে। মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে আটকও হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মসিউর রহমান বলেন, কমিশন যারা দেয় এবং নেয় তারা কাজটি গোপনে করে। এ বিষয় প্রমান পেলে আমি আইনানুগ ব্যাবস্থা নিব। আমি এখানে যোগদানের পর থেকে দালাল চক্রের প্রভাব অনেকটাই কমে এসেছে। আমি কোন চিকিৎসকের টেবিলে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকের পেইড, কার্ড বা স্লিপ পেলেও সে সূত্রে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্থরা সচেতন হলেই কেবল এ অনিয়ম প্রতিরোধ করা সম্ভব।