কলাবাগানে ও-লেভেল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা

রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ও-লেভেল পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। নিহত কিশোরীর নাম আনুশকাহ নূর আমিন (১৮)। সে মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ছাত্রী।

এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ আনুশকাহর বন্ধু দিহানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু আনুশকাহকে ধানমন্ডির মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বিকালে হাসপাতালে আনুশকাহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আনুশকাহ শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তার পেটের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস বলেন, ওই ছাত্রীর বাসা ধানমন্ডির সোবহানবাগে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় যায় ওই ছাত্রী। দিহানের বাসা তখন ফাঁকা ছিল। সেখানে ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহান তার তিন বন্ধুকে ফোন করে ডেকে আনে। পরে তারা অসুস্থ ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিকালে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঢাকায় পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে সমাবেশ, লাঠিচার্জে আহত ৭০, গ্রেপ্তার ৫০, বিবিধ মামলায় আসামী হাজারের উপরে – গায়েবী মামলার অভিযোগ

পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ সারাদেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালনের সময়ও রাজধানী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে দলটির কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও লাঠিচার্জে ৭০ জন আহত হয়েছে। এগুলোর সূত্র ধরে কমপক্ষে সাতটি আলাদা এবং সম্পূরক মামলা হয়েছে যেগুলোতে প্রায় ১১০০ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এই ১১০০ ব্যক্তির মধ্যে ৮০০-র বেশি অজ্ঞাতনামা এবং অভিযোগ উঠেছে এমন অনেককেই আসামী করা হয়েছে যারা কোনো মিছিল, সভা, সভাবেশ বা প্রতিবাদ র‍্যালীতে ছিলেননা।

প্রসঙ্গতঃ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীদের পুলিশি বাধা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অব্যাহত গতিতে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পুলিশি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের কাছে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কোনো মূল্য নেই। দেশে করোনা সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়ার বদলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখাকেই সরকার তাদের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত করেছে।

সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে সমবেত হন। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা মৎস্য ভবন, তোপখানা সড়কের মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয় এবং বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বিএনপির অবস্থানের কারণে এ সময় যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে জনগণ।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সচিবালয়ের পশ্চিম সড়ক হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে সমাবেশস্থল থেকে মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানোর পর উত্তেজনা থিতিয়ে আসে। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির প্রশিকায় ৬০/৭০ জনের মিছিলে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেত্তৃত্বে মিছিলে পুলিশ ও যুবলীগের কর্মীরা বেপরোয়া হামলা চালালে অনেকেই আহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২১ সালে সরকার পরিবর্তনের প্রত্যাশায় জনঐক্যের সংকল্প ব্যক্ত করে বলেন, নতুন বছরে আমাদের সবার একটাই সংকল্প, একটাই শপথ হবে- ‘ঐক্য’। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই লক্ষ্যে সবাইকে এক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে উদ্ধারের যে সংগ্রাম; সে সংগ্রাম শুধু বিএনপির একার নয়। সব রাজনৈতিক দলকে, সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সরিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেই আকাঙ্ক্ষা ও চেতনাকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, প্রশাসনের জোরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা বাংলাদেশের সব অর্জন ধবংস করেছে। তারা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

৩০ ডিসেম্বরে পুলিশি আচরণের নিন্দা করে বিএনপির প্রচার ও গণযোগাযোগ দপ্তরের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এম.পি. জহির উদ্দীন স্বপন বলেন,  সরকারী এমন জুলুম আর বেশিদিন চলবে না। মানুষ জেগে উঠছে। নির্লজ্জ সরকার নীতিভ্রষ্টভাবে দেশ চালাচ্ছে এবং গত দুই নির্বাচনের মহা কারচুপি কারো অজানা নয়। অবৈধ গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় অযাচিত ও অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপিকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্যে, বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। উদাহরণস্বপরূপ উনি বলেন, মিরপুরের রূপনগর থানায় আমার সমর্থক দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং শুধু তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই আওয়ামী পুলিশ শান্তি পাননি, তারা এই দুজনের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও ঢুকিয়ে দিয়েছে মামলায়। এর ভেতর একজন থাকেনই যুক্তরাজ্যে, যার একমাত্র অপরাধ আমার সাথে তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। এভাবে কোনো দেশে ন্যায়বিচার চলতে পারে? ৮০০-র বেশি নাকি অজ্ঞাতনামা আসামী!! এইগুলা কী আমরা বুঝিনা? আমাদের কী তারা বোকা পেয়েছেন? তাদের ক্ষমতার অপব্যাবহারের দিন আর বেশি নেই।

এইসূত্রে রূপনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে জবাবে বলা হয়, যাদের গ্রেপ্তার করা  হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাদের নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। যথাসময়ে তা প্রকাশ করা হবে। গায়েবী মামলার অভিযোগে থানার এস.আই  বলেন – মোঃ শহীদুল ইসলাম ও মোঃ মইন উদ্দিন চৌঃ এর নামে এজাহারে দেয়ার যথার্থ কারণ আছে। দেশের বাইরে থাকলেই কেউ অপরাধ সংগঠন করতে পারেনা বাংলাদেশে, এই ধারণা ভুল। কেইস কোর্টে উঠলে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আলামত সহকারে হাজির করা হবে। এর বেশি এই মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না।

 

আজ বেগম রোকেয়া দিবস

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলার নারী জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা। তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সারা জীবন তিনি তার সেই স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, লিখে গেছেন তার গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। যা আজও দিকনির্দেশনা হিসেবে সামনে রয়েছে। বেগম রোকেয়ার জীবন আচরণ ও নারী শিক্ষার প্রসারে তার কাজ স্মরণীয়। তিনি এই লড়াই চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু।
আজ বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সেই মহীয়সী নারীর জন্মদিন। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হবে তাকে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান করা হবে। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পৃথক বাণী দিয়েছেন।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম। জীবনের নানা বাঁকে তিনি রোকেয়া খাতুন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মিসেস আর এস হোসেন নামেও লিখতেন এবং পরিচিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমাজসেবায় বিভিন্ন অবদানের জন্য এ বছর পাঁচ জন নারীকে বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ দেওয়া হবে। সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।

বেগম রোকেয়া পদক-২০২০-এর জন্য মনোনীত পাঁচ জন নারী ব্যক্তিত্ব হলেন, নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ বছর বেগম রোকেয়া পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

পদকপ্রাপ্তরা আজ (বুধবার) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করবেন।

‘এক সময় আমিও ছাত্রলীগ করতাম’-মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম-মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক আজ তাঁর নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুকে এসে দাবি করেছেন এক সময় তিনিও ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমিও ছাত্রলীগ করতাম কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর বাবার রাজনীতির অনুসারী হই’। বর্তমানে ছাত্রলীগ মামুনুলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিছিল, মিটিং ও নানাবিধ আল্টিমেটাম এর প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর নিজের ফেসবুক পেজে ‘ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধ, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতির’ ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন মামুনুল হক। এ সময় তিনি বলেন, ‘সুতরাং এই বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধুর সম্মানের ওপর আক্রমণকারী হিসেবে আমাদের সাব্যস্ত করাটা কতটা যৌক্তিক, তা দেশবাসীর কাছে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।’

মামুনুল হক বলেন, ‘ভাস্কর্যের বিরোধিতা নিছক ধর্মীয় কারণে করছি। রাজনৈতিক কোনও অভিলাষ নেই। বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে অতিরিক্ত এলার্জি নেই। বঙ্গবন্ধুকে একজন প্রয়াত মুসলিম নেতা হিসেবে স্মরণ করি। তার ভাস্কর্য তৈরি করা হলে আল্লাহর কাছে তিনি লজ্জিত হবেন। আমাদের মহান নেতা পরজগতে আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে পড়ুন, এটা আমরা চাই না। কল্যাণকামিতার জায়গা থেকেই রাষ্ট্র, সরকারকে বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহর কাছে লজ্জিত না করার জন্য অনুরোধ করছি। এই অনুরোধ আমরা করেই যাবো।’

লাইভে হেফাজত নেতা মামুনুল বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে কেউ কেউ আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, আমার কোনও বক্তব্যের মাধ্যমে অথবা আমার কোনও কথায় এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনও কথা আমি কস্মিনকালেও বলিনি। দেশের আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনও ব্যক্তি এমনটা কখনও করতে পারেন না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমার বক্তব্য স্পষ্ট, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ভাস্কর্য রাখা নাজায়েজ ও হারাম—সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমি জানিয়ে দিয়েছি। এবং আমরা আমাদের বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছি, যদি আল্লাহ কখনও আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সক্ষমতা দান করেন তাহলে শরিয়াহর আলোকে সকল কার্যক্রম ঢেলে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।’

মামুনুল অভিযোগ করেন, ‘সারা দেশে যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রবণতা শুরু হয়েছে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়ে দ্বিমত করি। কোরআন সুন্নাহর আলোকে তা নাজায়েজ। মরহুম ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি যত্রতত্র ভাস্কর্য নির্মাণে এই ব্যক্তিদের সম্মানহানি হবে। যত্রতত্র এ ধরনের ভাস্কর্য করলে মানুষের মল-মূত্র ত্যাগ হবে, সেখানে মাথার ওপর বিভিন্ন পাখি মলত্যাগ করবে, নানা ধরনের অসামাজিক কাজের আখড়া জমে যেতে পারে। যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করলে সম্মান বৃদ্ধি হবে না, সম্মানহানির পরিবেশ তৈরি হবে।’

প্রসঙ্গত, আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করে মামুনুল হক, জুনায়েদ বাবুনগরী ও ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
ফেসবুক লাইভের বক্তব্যে মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চও এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

‘শেখ হাসিনার কাছ থেকেই গালি দেয়া শিখেছি’- মাওলানা মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গালি দেয়া এবং রাজনৈতিক অসৌজন্য আচরণ শিখেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডিয়া হাউস রানার মিডিয়ার একটি টকশোতে। তিনি আরো বলেন, তিনি একাই নন তাঁর দলের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরাও শেখ হাসিনার কাছ থেকেই এই ভাষা শিখেছেন। রানার টিভি’র এই টকশোতে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার, ব্লগার ও লেখক নিঝুম মজুমদার।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহরিয়ার কবিরকে বিভিন্ন ইসলামি ওয়াজে কেন তিনি ‘মুরগী চোর’; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কেন ‘বলদ ষাঁড়’ এবং সূপ্রীম কোর্টের আপীলেট ডিভিশানের বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কেন তিনি বাংলাদেশের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই জুতা খুলে পেটাতে হবে বলেন, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের এমন প্রশ্নের জবাবেই মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এই ভাষা ও স্বভাব তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখেছেন।

তিনি বলেন, ডক্টর জাফর ইকবাল ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিয়োরীতে বিশ্বাস করেন বলেই তাঁকে তিনি ‘বলদ ষাঁড়’ বলে ডাকেন। একই সাথে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে একজন ‘সেক্টর কমান্ডার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনাব সিদ্দিকী শাহরিয়ার কবিরকে ‘মুরগী চোর’ বলে ডাকেন বলেই তিনিও সেই নামে ডাকবেন। এ সময়ে ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার শরীয়া কিংবা কোরান হাদীসের আয়াতে তাঁর এই ভাষা অন্যায় বলে অভিহিত করলে তিনি তার সদুত্তর না দিয়েই একটি পর্যায়ে তিনি তাঁর ‘অন্য কাজ’ আছে বলে হঠাৎ করেই টকশো ছেড়ে চলে যান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক আসম মাসুম। তিনি আরো জানান, ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ে তাঁকে ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গালি শিখেছেন এই বক্তব্যের পরপরই হেফাজতে ইসলামীর বিভিন্ন মহল থেকে টকশো বন্ধ করবার ব্যাপক চাপ আসতে থাকে রানার মিডিয়ার কাছ থেকে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুনুলের এমন বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামী অত্যন্ত বিব্রত। সরকারের সাথে বসে যখন তাঁরা সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলাপের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন এমন সময় এই ধরনের কথা হেফাজতকে অত্যন্ত বিব্রত করেছে বলেই অনেক নেতার অভিমত।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে হেফাজত ইসলামের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান যে, ‘মামুনুল নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এখন আমাদের ভবিষ্যত নিয়েও খেলা শুরু করেছে। এই কথার চরম খেসারত দিতে হতে পারে পুরো সংগঠনকে’

এই ব্যাপারে  গতকাল থেকেই তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও ব্যাক্তিরা ক্ষোভ ঝারছেন মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। একজন ইসলামি ব্যাক্তিত্ব ও স্কলার কিভাবে এমন অসৌজন্য ভাষায় কথা বলে সেটি প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিতে পারেন, এটি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

জাহাঙ্গীর/১২৭/জক-৪

ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিমের ওপর হামলা, নারীসহ আটক ৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছেন বহিরাগত কয়েকজন ব্যক্তি। এ ঘটনায় দুই নারীসহ চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে আজ মঙ্গলবার রাত পৌনে দশটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় টিমের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।

প্রক্টর প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিবেচনায় ক্যাম্পাস এলাকায় চলাচল সীমিত করতে আজ দিনের বেলা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে থাকা ভাসমান দোকানগুলো তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দোকানগুলো আবারও বসে। রাতে প্রক্টরিয়াল টিম ফের সেখানে যায় দোকানগুলো তুলে দেওয়ার জন্য। বহিরাগত কয়েকজন ব্যক্তিকে চলে যেতে বললেও তাঁরা যাচ্ছিলেন না। তাঁদের কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তাঁরা টিমের সদস্যদের ওপর হামলা চালান৷ হামলায় টিম সদস্যদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। চারজনকে আটক করে থানায় দেওয়া হয়েছে আর একজনের খোঁজ চলছে। এঁরা সংঘবদ্ধ চক্র, প্রতিদিনই তাঁরা এখানে আসেন বলে জানতে পেরেছি। স্থানীয় ব্যক্তিরা আমাদের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।’ সংযত আচরণ করতে বহিরাগতসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রক্টর।

প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য বলেন, ‘ওই বহিরাগতরা যৌন ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা বহুবার অভিযোগ পেয়েছি। মোটরসাইকেলে করে প্রতিদিন এখানে এসে তাঁরা বসে থাকেন। ভদ্র ভাষায় চলে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা আমাদের কথা শোনেননি৷ বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে বহিরাগত ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর হামলা করেন৷ পরে আমরা তাঁদের মধ্যে চারজনকে ধরে ফেলতে সক্ষম হই আর একজন পালিয়ে যান৷ আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী আছেন। তাঁদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের ওপর হামলাকারী চারজনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১০ হাজার টাকায় ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার’ ভুয়া সনদ, গ্রেপ্তার ৪

১৯৭১ সালে তাঁরা ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ ছিলেন বলে সনদ দিচ্ছিল রাজধানীর কাঁটাবনের একটি কম্পিউটারের দোকান। ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের’ ভুয়া সনদ তৈরির অভিযোগে সোমবার রাতে গাউসুল আজম সুপার মার্কেটের নিউ ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডস কম্পিউটার নামে একটি দোকান থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ।

তাঁদের মধ্যে দুজন ভুয়া সনদ তৈরির কথা স্বীকার করে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আবদুল হাকিম (৫৩) ও দোকানমালিক জামাল মিয়াজী (৪৮)। একই অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন মুজাহিদ মিয়া (২৯) ও সফিউর বারী (১৯)। এই দুজন ওই কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী। আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ১০ হাজার টাকায় ’৭১–এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট তৈরি করে আসছিল এই চক্রের সদস্যরা।

মামলার কাগজপত্র এবং নিউমার্কেট থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সোয়া নয়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দোকানে অভিযান চালায় পুলিশ। প্রথমে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন আবদুল হাকিম। তাঁর বাড়ি রংপুর নগরের জুম্মাপাড়া সুইপার কলোনিতে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, রংপুরের জনৈক আমীর আলি ফকির এই নকল ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’র সনদ তৈরির জন্য হাকিমকে ঢাকায় পাঠান। আর কম্পিউটার দোকানমালিক জামাল মিয়াজী ১৮টি ভুয়া সনদ তৈরি করে দেন। ওই সনদে লেখা ছিল, ‘৭১–এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র।’

এ ঘটনায় জালিয়াতির অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরেই ওই দোকানে এ রকম ভুয়া সনদ তৈরি হচ্ছিল। একেকটি ভুয়া সনদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে আদায় করতেন দোকানের মালিক।

৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা

কুমিল্লার মুরাদনগরে ৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় থানায় মামলা দায়ের করার আগেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন উপজেলার কামাল্লা গ্রামের মোশাররফ চৌধুরী (৬২) নামের ওই ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামের চৌধুরী বাড়ির মোশাররফ চৌধুরী গত ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর তার প্রতিবেশী ৩ শিশু কন্যাকে প্রলোভন দেখিয়ে তার ঘরে নিয়ে যৌন নিপীড়ন চালায়। গত ২৯ নভেম্বর নিপীড়নের শিকার এক শিশু বাড়ি গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানায়। পরে অপর দুই শিশুও বিষয়টি নিজ নিজ পরিবারকে অবহিত করে। এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

রাতে মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি পরিবার মোশারফ চৌধুরীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

কক্সবাজার কারাগারে হাজতির রহস্যজনক মৃত্যু: কারারক্ষী বরখাস্ত

হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় রিমান্ড আদেশ পাওয়া আসামি মোস্তফার কক্সবাজার জেলা কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আবু তাহের, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ফখরুল ইসলাম ও কারারক্ষী বিল্লাল হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোস্তফার ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়াও কারাগারের সর্বপ্রধান কারারক্ষী মো: হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে এ ঘটনায় আগামী ৩ কর্মদিবসে ‘লিখিত কৈফিয়ত’ তলব করা হয়েছে। কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে কারারক্ষী ইকবাল হোসেনকেও। বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেল সুপার নেছার আলম এ তথ্য জানান।

জেল সুপার জানান, কারাগারে বন্দির আত্মহত্যা কোনমতেই কাম্য নয়। হাজতি-কয়েদি এরা আমাদের আমানত। তাদের দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টা কারারক্ষী রয়েছে। এত তদারকির মাঝে কিভাবে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যা করলো তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেসময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। যিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং যারা দায়িত্বে এড়াতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই এসংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

একইদিন বিকেলে বিধি অনুসারে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল।

এদিকে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাভ্যন্তরেই হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যার ঘটনার (কারা কর্তৃপক্ষের দাবি মতে) পরপরই দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটিতে ডেপুটি জেলার সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ ও একাউন্টেন্ট খন্দকার আজাদুর রহমানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেল সুপার।

একই ঘটনায় কারা হাসপাতালের ডা. মো: শামীম রাসেলকে প্রধান ও ডা. শামীম রেজাকে সদস্য করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন জমা দিবেন।

কারা কর্তৃপক্ষের কমিটি ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও পৃথক তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। কক্সবাজার এসেছেন ডিআইজি প্রিজন। তিনিও আলাদা ভাবে তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার নেছার আলম।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান আজাদকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় কারান্তরীণ হাজতি মোস্তফা রহস্যজনক ভাবে জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাজতি ময়লাহীন ফাঁসিতে আত্মহত্যায় মারা গেছেন বলে দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

তবে কারাগারে ফাঁসি খাওয়ার মতো কোন অবস্থা বন্দিদের পক্ষে থাকে না বলে দাবি করেছে কারাভোগ করে বের হওয়া অনেক বন্দি। এ কারণে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেধেছে।

মারা যাওয়া হাজতি মোস্তফা (২৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার বশির আহমেদের ছেলে। তবে, তারা এলাকায় ‘রোহিঙ্গা’ বলে পরিচিত।

মারামারি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় গত ১৮ নভেম্বর মোস্তফা কারাগারে আসেন। তার মামলায় ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি ছিল। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডও মনজুর করে। আদালত থেকে তাকে কারাগারে আনার পর তার কক্ষেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পেয়ে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাজতি মোস্তফাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে মোস্তফা নামের এক বন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের আনার আগেই সে মারা যায়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।

কারাভ্যন্তরে হাজতি মোস্তফার মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুর্বৃত্ত হামলায় আহত হয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদর আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান আজাদ লুতু। তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি কখনো বিশ্বাস করা যায় না আমাকে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তফা আত্মহত্যা করেছেন। তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। কোন একটি গ্রুপ আমার উপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন এটা নিশ্চিত। যারা এ ঘটনা ঘটালো তারা জানলো যে, গ্রেফতার মোস্তফার রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হলে আমাকে হামলার ঘটনায় কারা জড়িত তা হয়তো উঠে আসতো। তাই কোন কৌশলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। বিপুল অংকের বিনিময়ে কূটকৌশলে এমনটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেল সুপার নেছার আলম বলেন, কারাবন্দীরা আমাদের আমানত। তাদের রক্ষা না করে কেন আমরা মারব? তার মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। এটার রহস্য বের করতে চেষ্টা চলছে।

এবার স্ত্রীসহ সেই গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের আলোচিত সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় গুদামটির সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) উপপ্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের নামে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এই মামলা করেন।

দুদক জানায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রথমে নবীর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। এরপরেই নবীর উদ্দিন ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ তাঁর স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছেন নবীর উদ্দিন। এ কারণে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোমবার নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

সান্তাহার বাফার গুদামের সার কেলেঙ্কারির অভিযোগে নবীর উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সার আত্মসাতের অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর তিনি পলাতক। তাঁর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহ না করেই বিপুল পরিমাণ সার লোপাট নিয়ে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘২০ কোটি টাকার সার গেল কই’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিআইসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহই করা হয়নি। তা কালোবাজারে বিক্রি করে বলা হয়েছিল সার সরবরাহের নথি উইপোকায় খেয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মশিউর রহমান খান, গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন খান, শ্রমিক লীগের নেতা রাশেদুল ইসলামসহ কয়েকজনের নামে এরপর ২০১৭ সালে অক্টোবরে দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় ৪ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন সার গুদাম থেকে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।