‘ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক কথা বলেছেন, যেটা মিথ্যাচার’

আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রামে অবশ্যই আপনাদের বিরাট অবদান আছে। আমরা আপনাদের অবদান অস্বীকার করি না। কিন্তু একই সঙ্গে আপনারা যদি স্বাধীনতার মূল নায়কের অবদান অস্বীকার করেন, সেটাকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ৯ মাস কী কষ্টটা করে দেশের মানুষ লড়াই করেছে, এক কোটি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হয়েছেন, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের কথাগুলো আজ উচ্চারিত হয় না।

১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড চালান বলে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারপ্রধান ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক কথা বলেছেন, যেটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, তিনি যা বলেন, তার ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘আজকে কেউ একজন বললেন ২৫ মার্চ, ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান মানুষ হত্যা করেন, এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে বিএনপির উদ্যোগে বছরব্যাপী কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কাউকে ছোট করার জন্য নয়, আমরা স্বাধীনতাসংগ্রামে যার যে অবদান, তা ভ​বিষ্যৎ​ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এটাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আর সে জন্য আপনাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। আপনারা বিভিন্ন রকম অসংলগ্ন, অপ্রকৃতিস্থ কথাবার্তা বলছেন, সেগুলোর সঙ্গে সত্যের কোনো চিহ্নমাত্র নেই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা ৭ মার্চ পালন করছি ঘোষণা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমে আমাদের স্বাগত জানালেন, তার পরে তিনি বললেন এটা আমাদের ভণ্ডামি।’

আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের লেখা ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইয়ের কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একাত্তরের ২৫ মার্চ ২০ বালুচ রেজিমেন্টের সৈনিকেরা এক হাজার বাঙালিকে হত্যা করার বর্ণনা আছে। ওই সময়ে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান ও ইপিআরের (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) মেজর রফিকুল ইসলাম উভয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতির কাজটি করছিলেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল সালাম প্রমুখ। সভায় আলোচকেরা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে স্বাধীনতার ‘প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বর্জন করলেও ভোটে থাকবে বিএনপি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভোটের মাঠে থাকবে বিএনপি। দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে দলীয় নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ কিংবা বহিষ্কার করা হবে না। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত জানার পর বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামগঞ্জে চালাচ্চেন প্রচার। এদিকে শেষ ধাপের ১১টি পৌরসভা নির্বাচনেও দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। শিগগিরই এসব পৌর ভোট বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে দলটি। তবে সংসদ উপনির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রথম ধাপে দেশজুড়ে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদে ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইউনিয়নে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হচ্ছে। বুধবার নির্বাচন কমিশন সভায় অনুমোদনের পর ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৮ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, এ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটিং সিস্টেমটাই ভেঙে ফেলেছে। তাদের অধীনে এ দেশে আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচন আমরা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নির্বাচনে কাউকে অংশ নিতে আমরা যেমন জোর করব না, তেমনি কেউ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করতে চাইলে বাধাও দেব না।

তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিপক্ষে। আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত যে সুপারিশ দিয়েছি সেখানেও এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কারণ ইউপি নির্বাচনের ভোটে এলাকায় সব সময় একটা উৎসবের আমেজ দেখা যেত। এসব ভোটে এলাকায় আত্মীয়স্বজন, পারিবারিক ঐতিহ্য ও প্রভাব বিশেষ ভূমিকা রাখত। যারাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবার জন্য কাজ করেছে। কিন্তু ইউপিতে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় সেই ঐহিত্য নষ্ট হয়ে গেছে। নিকট-আত্মীয় কেউ নির্বাচন করলেও রাজনীতির কারণে তার বিরোধিতা করতে হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘদিনের আত্মীয়তার বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা ইউপি নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শুধু তৃণমূলের ঐতিহ্যের জন্যই নয়, আরও বেশ কয়েকটি কারণেও ইউপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙা করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর তা অনেকাংশে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভোটের মাঠে নেতাকর্মীরা নতুন করে মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন এলাকাছাড়া। তাছাড়া অতীতের ভোট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেন ধানের শীষের প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে মিলে ধানের শীষের পরাজয় নিশ্চিত করাই যেন তাদের মূল এজেন্ডা। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকই দেওয়া হবে না। যাতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ধানের শীষ ফোবিয়া কিছুটা কমে। কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায় তাতে দলীয়ভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না। ধানের শীষ প্রতীক না থাকলে সরকার ও ইসি কিছুটা হলেও নমনীয় হবে। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন থাকবে না। সেক্ষেত্রে দলীয় কোনো নেতা স্থানীয় ও জনপ্রিয়তার কারণে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হতে পারে। স্বতন্ত্রভাবে চেয়ারম্যান হলেও ওই নেতা বিএনপির পক্ষেই কাজ করবে বলে আশা করি।

জানতে চাইলে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। দলীয়ভাবে নির্বাচন করায় নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে হামলা-মামলা ও নির্যাতন। তাই দলীয় প্রতীকে ভোট বর্জনের ঘোষণাকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। তবে দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও আমি স্বতন্ত্রভাবে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ এলাকায় আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। আত্মীয়স্বজন আছে অসংখ্য। নিজের জনপ্রিয়তা ও সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসা পেলে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করেও জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয় আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ নেতা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। এক নেতা বলেন, পৌর ও ইউপি দুটোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ইতোমধ্যে আমরা ইউপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। এরপর যদি বাকি পৌর নির্বাচনে যাই তাহলে তা দ্বৈতনীতি বলে অনেকে মনে করবে। তাই উচিত হবে বাকি পৌর ভোটও বর্জন করা। তার এ যুক্তির পক্ষে কয়েক নেতা একমত পোষণ করেন। আগামী ১১ এপ্রিল শেষ ধাপের ১১ পৌরসভার ভোট হবে। ১৮ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেনি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-২ উপনির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের সব মানুষের ডিজিটাল সুরক্ষার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এর অপপ্রয়োগ রোধে সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বিশ্বের বহু দেশে এ আইন আছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার সন্ধ্যায় শামীম আহমেদ সম্পাদিত ‘শেখ হাসিনা: ঘুরে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ’ সচিত্র গ্রন্থটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী বইটির চলমান প্রকাশনাকে স্বাগত জানান এবং তথ্য-উপাত্তগুলো সব সময় হালনাগাদ রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে-বিদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি করোনার টিকা নিয়েও নানা অপপ্রচার চলেছে। টিকা সময়মতো আসবে না বলার পর যখন এসে গেল, তখন বলা হলো এটি ক্ষতিকর। তারপর এখন অপপ্রচারকারীরাই গোপনে-প্রকাশ্যে টিকা নিচ্ছেন।’

‘দেশের অভ্যন্তর থেকে এবং বিদেশে বসেও ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্যের চরিত্র হনন করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে তো একটা আইনের প্রয়োজন। সেটিই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যে আইনটি দেশের সব মানুষের জন্য।’

সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্মূল করতে না পারাটা আমাদের দুর্বলতা: তথ্যমন্ত্রী

স্বাধীনতার এত বছরেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্মূল করতে না পারাটা নিজেদের দুর্বলতা বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ রোববার সকালে আওয়ামী লীগের পক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না, সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনো বিষবাষ্প ছড়ায়। এখনো আমাদের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁরা কথা বলেন ও আস্ফালন করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশ থেকে তাঁদের নির্মূল করতে না পারাটা আমাদের দুর্বলতা। মহান শহীদ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যাঁরা ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে আস্ফালন করেন, তাঁদের নির্মূল করা। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আজকের দিনে আমাদের লক্ষ্য, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।’

মানুষের মুক্তচিন্তা ও বাক্‌স্বাধীনতার প্রশ্নে বাসদ ও বিএনপির নেতাদের অভিযোগের প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেই বলা হচ্ছে, তাঁরা কথা বলতে পারেন না। আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেই বলছেন, কথা বলতে পারেন না। এতেই প্রমাণিত হয়, আসলে তাঁরা যত দরকার, তার চেয়ে বেশি কথা তাঁরা প্রতিদিন বলেন।’

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির পথ ধরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই ১৯৪৭ সালে যখন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার আলোচনা চলছিল, তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলেন। ঢাকায় ১৯৪৮ সালের ১১ জানুয়ারি যে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল, সেই কর্মসূচি সফল করতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৫ জানুয়ারি মুক্তিলাভের পর তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রসমাবেশ হয়েছিল এবং ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে মাতৃভাষা আন্দোলনের জন্য তিনি সেখানে অনশন করেছিলেন। এই ইতিহাসটা অনেকে জানেন না।

এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেন তাঁদের সামরিক সচিবেরা। রাত সোয়া ১২টার দিকে সর্বসাধারণের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আজ রোববার ভোর থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ফুল দিতে আসতে থাকেন শহীদ মিনারে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ সকালে শহীদ মিনারে আসেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করছে: ওবায়দুল কাদের

দিনক্ষণ ঠিক করে সরকার পতনের ঘোষণা বিএনপির নতুন কোন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, সে জন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একথা বলেন।

এক বছরের মধ্যে সরকার পতনের ভাবনা বিএনপির আকাশ-কুসুম কল্পনা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা জন্মলগ্ন থেকেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে।

‘সরকার পতনের সাইরেন বেজে গেছে’—বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে বিএনপি নেতাদের এটি আত্মতুষ্টি লাভের অপচেষ্টা মাত্র।

জনবিরোধী কর্মসূচির কারণে জনগণ বিএনপিকে অনেক আগেই লালকার্ড দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কর্মীদের রোষানল থেকে বাঁচতে এবং পদ-পদবি ধরে রাখতে বিএনপির কিছু কিছু ফরমায়েশি নেতা ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের শেকড় মাটির অনেক গভীরে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি জনমানুষের আস্থা ইস্পাত কঠিন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ঠুনকো কোন জিনিস নয়—যে ধাক্কা লাগলেই পড়ে যাবে।

বিএনপির রাজনীতি বৈপরীত্যে ভরা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের কোন কোন নেতার মস্তিষ্ক অপপ্রচার আর গুজব তৈরির উর্বর কারখানা।

তিনি বলেন, সরকারের সবকিছুতেই অন্ধ সমালোচনা আর নেতিবাচকতা বিএনপির রাজনীতি। এ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে না এলে জনগণই বিএনপিকে বিদায়ের সাইরেন বাজিয়ে দিবে।

কাদের মির্জাকে আ. লীগের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি, চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলীয় গঠনতন্ত্রপরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করার জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এটি পাঠানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে মিথ্যা, অশালীন ও আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে সংগঠনবিরোধী অশোভনীয় মন্তব্য ও নেতা-কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন। এসব অভিযোগে আবদুল কাদের মির্জাকে সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি কল না ধরায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য কিংবা প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

আজ সকালে কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জার ডাকে হরতাল চলাকালে তাঁর মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন আবদুল কাদের মির্জা।

হাঁটুর নিচে মারতে বললেন কাদের মির্জা

কোম্পানীগঞ্জে অপরাজনীতি বন্ধের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি শনিবার বসুরহাট বাজারে লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।  কেউ অবস্থান কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করলে হাঁটুর নিচে মারতে বলেছেন।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তিনি।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এবং ওসি (তদন্তকে) প্রত্যাহার এবং নোয়াখালীর অপরাজনীতি বন্ধের দাবিতে এ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে থানা ফটকের সামনে সারারাত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বুধবার সকাল ৯টায় তা স্থগিত করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস হরতাল শেষে আবারও একই দাবিতে তিনি শুক্রবার ও শনিবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার বসুরহাট বাজারে অবস্থান কর্মসূচি করবেন কাদের মির্জা। আজকের কর্মসূচি থেকে আগামীকালের অবস্থান ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান তিনি।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হুশিয়ার করে কাদের মির্জা বলেন, বসুরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী থেকে অপরাজনীতি নির্মূল করা হবে।  কেউ বাধা দিতে এলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। লাঠি দিয়ে হাঁটুর ওপরে নয়, নিচে আঘাত করবেন।

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে হত্যার বেনিফিশিয়ারি কারা, প্রশ্ন কাদেরের

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়ুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে সপরিবারে হত্যার বেনিফিশিয়ারি? কারা এদেশে খুনিদের বিচার চাওয়ার অধিকার হরণ করেছিলো- তা নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে বলে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।

তিনি শনিবার সকালে রাজধানীর সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

বিএনপিই এদেশে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির জনক বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার কারো নেই ।

‘সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ইচ্ছেমত রচনা করছে’-বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী অপশক্তি যেভাবে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে, তার বিপরীতে নতুন প্রজন্ম এখন সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারছে।

বিএনপি মুখোশের আড়ালে স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের পৃষ্ঠপোষক বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিএনপিই কৃত্রিম বাধা তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন বিএনপির একদিকে নির্বাচন বিমুখ রাজনীতি, অপরদিকে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখায় দেশের গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খাচ্ছে।

আ.লীগ ও বিএনপির চেয়ে জাতীয় পার্টির ইমেজ পরিচ্ছন্ন

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ে দেশের মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির ইমেজ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। তাই আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি। দেশের মানুষ আগ্রহ ভরে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের তরুণ সমাজের সামনেও জাতীয় পার্টি আকর্ষণীয় দল। এছাড়া সমাজে ক্লিন ইমেজের বিশিষ্টজনরাও জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে শনিবার দলীয় সংসদ-সদস্যদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সামনে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। প্রতিটি ইউনিটে জাতীয় পার্টিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় পার্টিকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে দলীয় সংসদ-সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান পার্টি চেয়ারম্যান।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, ফকরুল ইমাম এমপি, মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, নাজমা আখতার এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি ও ভাইস চেয়ারম্যান পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ এমপি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সরকার ইচ্ছামতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তৈরি করছে: মোশাররফ

সরকার নিজেদের সুবিধামতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, যারা ক্ষমতায় আছে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তাদের ইচ্ছামতো লেখার চেষ্টা করছে। আজকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধের যে মূল ইতিহাস তা বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৫০ বছরে মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, সেই ক্ষেত্রগুলোতে কারা কী অবদান রেখেছে, কারা কী ক্ষতি করেছে সেটা সম্পর্কেও বর্তমান প্রজন্মকে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধে মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ। আজকে গণতন্ত্র দেশে নেই। বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, লুটেরা অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক অবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ন্যায়-অন্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছে।

নতুন প্রজন্মের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি সত্যিকার অর্থে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দল। সেজন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সারাবছর উদযাপন করতে একটি ক্যালেন্ডার আমরা তৈরি করব। এর খসড়া আমরা করেছি।

বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালনে সব উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান খন্দকার মোশাররফ। দেশের বাইরে প্রবাসেও দিবসটি পালনে অঞ্চল ভিত্তিক কমিটি গঠন করার কথাও জানান তিনি।

জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, আব্দুল হাই শিকদার, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন,মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াত হাসান জীবন, শ্যামা ওবায়েদ, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, আমিনুল হক, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শরীফুল আলম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আমিরুল ইসলাম আলিম, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আরিফুল হক, জহির উদ্দিন স্বপন ও এবিএম আবদুস সাত্তার প্রমুখ।