নিজেরা নৌকার কার্যালয় ভাঙচুর করে বিএনপির নামে মামলা: লালমনিরহাট বিএনপি

লালমনিরহাট পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের মিশন মোড় এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিএনপি সব সময় আচরণ বিধিমালা মেনে চলছে, তবু পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিএনপির পূর্বনির্ধারিত অনেক পথসভার স্থানে একই সময়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পথসভার আয়োজন করা হচ্ছে, এতে বিএনপির বেশ কিছু পথসভা স্থগিত করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের বাসায় পুলিশ মধ্যরাতে হানা দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের কাজ করলে মামলার ভয় দেখায়। এর একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার রাতে নয়ারহাট এলাকার নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে তাদেরই লোকজন ভাঙচুর করে বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪২ নেতা–কর্মীর নামে গায়েবি মামলা করে।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ এ মামলায় এজাহারভুক্ত জেলা বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

তরুণদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছে বিএনপি

ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি। সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শাখার আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হচ্ছে। এতে শীর্ষ পদে থাকছের না বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের কেউই। নতুন কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তরুণ নেতাদের। আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসেই (ফেব্রুয়ারি) কমিটি ঘোষণা হতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব রেখে মহানগর দক্ষিণের কমিটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি। যদিও আমানকে রাখার বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিন প্রভাবশালী সদস্য ও মহানগরের বেশির ভাগ নেতা বিরোধিতা করছেন। তারা আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে চাইছেন।

আবার প্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে সদস্য সচিব হিসেবে চাইছেন দলের একটি পক্ষ। শুক্রবার রাতে আমান-মজনু কমিটি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। শনিবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ায় আপাতত তা হচ্ছে না। তিনি দেশে ফিরলে ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোনো দিন মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি একই সঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরে আহ্বায়ক পদে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সদস্য সচিব হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করা তাবিথ আউয়ালকে দেখা যেতে পারে। এর বাইরে উত্তরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসাবে আলোচনায় আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, মহানগর নেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু, মোয়াজ্জেম হোসেন ও ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। দলে গতি আনতে মহানগরকে দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু এর পরও আশানুরূপ দক্ষতা দেখাতে পারেননি নেতারা। সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজাতে চায় হাইকমান্ড।

এজন্য সাংগঠনিক দিকসহ সব কিছু বিবেচনা করে তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে মহানগরের দুই শাখা। নেতৃত্ব খুঁজতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। তিনি উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃত্বে যারা যোগ্য তাদের একটি তালিকা পাঠান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজ থেকেও খোঁজ নিয়েছেন। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেওয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। সাংগঠনিকভাবে ঢাকা মহানগর দলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু বিবেচনা করে সবার সমন্বয়ে কমিটি করা হবে।

মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দক্ষিণের সভাপতি, কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যের আংশিক এবং উত্তরে এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি, আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পার হওয়ায় অনেক আগেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণার সময়েই তা পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্র থেকে এক মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা মেয়াদ শেষেও সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরে কমিটি ঘোষণার পরপরই দলীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। মালয়েশিয়া থেকে সভাপতি এমএ কাইয়ুম কিভাবে দলের নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে সে সময় বিতর্কও ওঠে। ২০১৮ সালে ঘোষিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে ‘অযোগ্য ও বিতর্কিতদের’ পদায়ন করায় তা নিয়ে কোন্দল আরও তীব্র আকার ধারণ করে। যদিও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল নেই।

সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে দলের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও ৭০ সদস্যের কমিটির অনেককেই পাওয়া যায় না। দক্ষিণের একাধিক নেতা জানান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে বিপদে-আপদে নেতাকর্মীরা পাশে পেয়েছেন। তিনি দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু দলের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা তাকে সহযোগিতা করছেন না। যে কারণে ব্যর্থতার সব দায়ভার এখন তার ওপর পড়ছে।

১১ দিনে ‘মাইনাস’ ১১!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার পরপরই পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। তবে গঠনের ১১ দিন অর্থাৎ ১৩ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ঘোষিত কমিটির ১১ নেতা।

পদত্যাগের এক প্রকার হিড়িক পড়ায় দলটিতে ‘ঝড়’ বইছে। পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা তো দূরের কথা এখন দলের পরিস্থিতি নিয়েই সাধারন কর্মীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলছে নানা ধরণের সমালোচনা।

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- পৌর বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান (কাউন্সিলর), সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মন্তাজ মিয়া (কাউন্সিলর), সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দুলাল ভুইয়া, সাবেক উপদেষ্টা মো. এলাই মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ মালদার, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মশিউর রহমান বাবুল, সাবেক ৬নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো সহিদুল ইসলাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম রানা, সদস্য রহিজ খান। তারা জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

পদত্যাগপত্রে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কমিটির আহবায়ক হিসেবে অন্য উপজেলার ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্বাচিত করা। দলের কারো সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন অনেক ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা, বিলুপ্ত কমিটির ১০১ জনের মধ্যে মাত্র সাতজনকে নতুন কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়টি পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান গত ১৩ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেলিম ভূইয়াকে আহবায়ক ও আক্তার খানকে সদস্য সচিব করে আখাউড়া পৌর বিএনপির ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। গত ১৬ জানুয়ারি জিল্লুর রহমান নিজের ফেসবুকে আইডিতে এটি পোস্ট করেন।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম ভূইয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারি আব্দুর রহমান ওরফে সানির চাচাতো ভাই হলেন সেলিম ভূঁইয়া। মূলত সানির বড় ভাই বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও ভূইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির আহমেদের হাত ধরেই সেলিম ভূঁইয়া দলে প্রবেশ করেছেন বলে আলোচনা আছে।

নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, সেলিম ভূঁইয়া পৌর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না। পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ড বিএনপির কেউই তাকে চিনেন না। সদস্য সচিব আক্তার খান একজন শ্রমিক নেতা। তার সঙ্গেও পৌর বিএনপির কারো সম্পর্ক নেই। সদ্য বিলুপ্ত আখাউড়া পৌর বিএনপির ১০১এক সদস্যের কমিটি থেকে মাত্র সাতজনকে আহবায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শাহাদাত হোসেনকে সদস্য পদেও রাখা হয়নি। নবঘোষিত আহবায়ক কমিটির ২৪জন সদস্যের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা কখনোই বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

নেতা-কর্মীরা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর আখাউড়া পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান কমিটি বিলুপ্তির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু জিল্লুর রহমান পৌর কমিটির কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পদত্যাগ করা সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া জানান, রাজনৈতিক কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি এক মাস কারাভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালে তার ছেলে ও ভাতিজার নামে দুটি মামলা হয়েছে যা চলমান।

শনিবার রাতে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক ত্যাগী নেতাকেই বর্তমান আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্য উপজেলার লোকজনকে আহবায়ক করা হয়েছে। আমরা তার নেতৃত্বে থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির রাজনীতিকে ঘরে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে তো আর রাজনীতি করা সম্ভব না।’

পদত্যাগ করা মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘বর্তমান আহবায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অতীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না।’ আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখন কমিটিতে নতুন নতুন মুখ। বাহার ভাই ছাড়া সবাই রাজনৈতিকভাবে আমার ছোট।’

জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান অবশ্য সাংবাদিকদেরকে জানান, পদ না পেলে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। দলে ইয়ং ফোর্স দরকার বলে সেভাবেই নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। যারা পদত্যাগ করেছেন তাঁরা মূলত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের অনেক চ্যালেঞ্জ

একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের যে প্রক্রিয়া বা রীতি, এবার সেভাবে হয়নি। ওয়াশিংটন ডিসি প্রায় ২৫ হাজার গার্ডে পরিবেষ্টিত। নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে পুরো যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাখ লাখ মানুষ এ সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে আসে। সেখানে এবার মাত্র হাজারখানেক মানুষ! শপথগ্রহণ ঘিরে অস্বাভাবিক একটি অবস্থা।

পাশাপাশি বড় বিষয় হলো, বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিষেক অনুষ্ঠানে নেই। তিনি বাইডেনের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ট্রাম্প সৃষ্টি করেছেন যে তাঁর সমর্থকরা গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে গিয়ে তাণ্ডব চালাল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিভাজিত যুক্তরাষ্ট্রে, জনগণকে বিভাজিত অবস্থায় রেখে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। এই বিভাজিত যুক্তরাষ্ট্রকে কিভাবে আবার ঐক্যবদ্ধ করা যায়, সেটিই তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। একই সঙ্গে এটিই তাঁর প্রধান ও প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বাইডেন এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু ইঙ্গিত করেছেন। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করতে। বিভাজনের রাজনীতিকে উতরে তিনি সহযোগিতা ও সমন্বয়ের জায়গায় যেতে চান। কংগ্রেসে যাঁরা রিপাবলিকান আছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার জন্য তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও রিপাবলিকানদের তিনি প্রত্যাশা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহযোগিতা ও সমন্বয়ের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাইডেনের নীতিগুলো এই লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে কিভাবে বিভাজন থেকে বেরিয়ে আসা যায়, সে নিয়ে তিনি কাজ করবেন।

বাইডেনের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হলো কভিড মোকাবেলা। যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ মানুষ এরই মধ্যে কভিডে মারা গেছে। লিংকন মেমোরিয়ালে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাইডেন। কভিডের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বেকারত্ব বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ হবে। এটি তাঁর তৃতীয় অগ্রাধিকার হতে পারে।

বাইডেন বলেছেন, বিদেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিই হবে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ যুক্তরাষ্ট্র। সেটি বিবেচনায় রেখেই তিনি বিশ্বে তাঁর অবস্থান নির্ধারণ করবেন। গত চার-পাঁচ বছরে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাইডেন এটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মিত্রদের সঙ্গেও। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বহুপক্ষীয় কাঠামোতে তার নেতৃত্বের স্থান তৈরি করেছে। সেই স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য বাইডেন সবাইকে নিয়েই চেষ্টা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়, যেমন—চীন, রাশিয়ার মতো বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কিভাবে সাবলীল করা যায় সে চেষ্টাও তিনি করবেন।

সবশেষ বিষয় হলো, বাইডেনের ভবিষ্যত্মুখী নীতি। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন পুরো প্রজন্মের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই প্রেক্ষাপটে তিনি ২০১৫ সালের জলবায়ুচুক্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরত আনবেন।

তাঁর সামনের চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বড়। আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বহুপক্ষ পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্রের যে নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে, বিশেষ করে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতার যে জায়গা, সেগুলো আগামী দিনে আরো সমৃদ্ধ হোক। যুক্তরাষ্ট্র আবারও আগের মতো নেতৃত্বে ফিরে আসুক। যুক্তরাষ্ট্র সবার বসবাসযোগ্য একটি পৃথিবী তৈরিতে সাহায্য করুক, যেখানে সবাই অংশ নিতে পারে, বৈষম্য দূর করে যেখানে সবার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা যায় এবং আগামী দিনে একটি জলবায়ুসহিষ্ণু পরিবেশে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী সৃষ্টি হবে।

সে জায়গায় বাংলাদেশ, আমরা মনে করি—আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই কাজ করতে আমরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি।

জগন্নাথপুর পৌরসভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আ.লীগের পরাজয়

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে এভাবে হারতে হবে তা ভাবতে পারেননি দলীয় প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁরা বুকে নৌকা প্রতীক লাগিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আক্তার হোসেনকে ভোট দিয়েছেন। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমার পরাজয় বড় কিছু নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নৌকার বিপর্যয় বিষয়টি ভাবতে হবে। আর ইভিএম জটিলতায় অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি।’

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র এবং সদ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আক্তার হোসেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তিনি চামচ প্রতীকে ৮ হাজার ৩৭৮ ভোট পান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া ৮ হাজার ১৮ ভোট পান।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের নির্বাচনী এলাকা জগন্নাথপুর পৌরসভা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। ২০০০ সালে প্রথম পৌর নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আবদুল মনাফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে আবার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মনাফ মেয়র নির্বাচিত হন। গত বছরের ১১ জানুয়ারি তিনি মারা গেলে ১০ অক্টোবর উপনির্বাচনে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়াকে ৩৬০ ভোটে পরাজিত করে আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন।

জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে পৌর নির্বাচনে নৌকা পরাজিত হয়েছে। যাঁরা গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেননি, তাঁরাই পৌর নির্বাচনে নৌকাকে ডুবিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক মাসুম আহমদ বলেন, পৌর নির্বাচনে একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অতিথি করে না আনায় তাঁর অনুসারীরা বুকে নৌকা প্রতীকের লোগো লাগিয়ে চামচ প্রতীকে ভোট দিয়ে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মিন্টু রঞ্জন ধর বলেন, জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুস সামাদ আসতে চেয়েছিলেন ৬ জানুয়ারি। এরপর তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে তাঁরা কর্মসূচি দেননি। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর আসতেও পারেননি।

তবে সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। কাউকে বাধা দেননি।

এ বিষয়ে আজিজুস সামাদ বলেন, জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আমজদ আলীর কারণে। তিনি ৮০০ ভোট পাওয়ায় নৌকা ৩৬০ ভোটে পরাজিত হয়েছে।

পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদ বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নৌকা পরাজিত হয়েছে। দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না।

গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির মিছিলে পুলিশের হামলা-একই পরিবারের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা-প্রবাসে থেকেও মামলার আসামী!

নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনকে বাংলাদেশের এক কলংকিত অধ্যায় আখ্যায়িত করে  ৩০ ডিসেম্বরকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ এও এর ব্যাত্যয় ঘটেনি। গোটা দেশজুড়ে অসংখ্য কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো। এর মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা জেলা ও মহানগর বিএনপি। কিন্তু দেশজুড়ে সমস্ত সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে আগাতে পারেনি – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুমতি মেলেনি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভি্যোগে সরকার-দল সমর্থিত ছাত্রলীগ/যুবলীগ ও পুলিশ-এর হামলায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস পুরোপুরি পালন করা গেছে বলা যায়না। অসংখ্য গ্রেপ্তার, হাজারের-ও বেশির বিরূদ্ধে মামলা দেয়া, হয়রানি করার মতো অভিযোগ বিএনপি করেছে।

বিএনপির এইসব অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিরপুরের রূপনগর থানায় ৩০ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিল হতে উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক (দুজনেই একই পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দীন স্বপন এর ঘনিষ্ঠ সমর্থক) গ্রেপ্তার দেখানো হয় জি.আর মামলা নং – ৫২২০/২০২০ এ।

সেই একই মামলায় আরো সাত জনকে আসামী করা হয় এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়। এই মামলায় ফৌজদারী আইনের ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় আসামীদের। সম্প্রতি এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় – যদিও উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক জামিন পেয়েছেন, ঐ একই মামলায় তাদেরই আরেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মোঃ শহীদুল ইসলাম-কে আসামী দেখানো হয়েছে যিনি গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন বলে জানান তার পারিবারিক সূতর।

শুধু তা-ই না, মোঃ শহিদুল ইসলাম এর আরো তিন সহোদরকেও এবং তাদের আরেক মামা, আওলাদ হোসাইন, যিনি উলিয়ার হোসাইন এর ভাই, তাকেও সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলার আসামী তালিকায় ওঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করে হাজতবাসী করা হয়েছে। এদের মধ্যে আওলাদ হোসাইন এর জামিন হয়েছে কিন্তু মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলাম এখনো জামিন পাননি যদিও তারা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।

একই মামলায় মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকে দেখানো হয়েছে যিনি নিজেও যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বহু বচর ধরে। শহীদুল ইসলামের একজন পারিবারিক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান – এইসব তাদের পরিবারে নতুন নয়। উলিয়ার হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসার ফলে এবং পুরো পরিবার-ই বিএনপি সমর্থক হওয়ার কারণে এসব ভোগান্তি আগেও পোহাতে হয়েছে।

উলিয়ার হোসাইন এর বিপক্ষে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি জেল করা হচ্ছে গত ১০ বছর ধরে, তবে এইবারের ঘটনা একদমি নজিরবিহীন। এইভাবে পরিবারের প্রায় সব পুরূষকে অত্যাচার হেনস্থা করা হবে, এটা কেউই কল্পনায় আনেননি। স্থানীয় যুবদল নেতা জুয়েল বলেন এই ধরণের হয়রানি লাখ লাখ বিএনপি সমর্থক, নেতা কর্মীর জন্যে চরম অবমাননাকর এবং কষ্টের। একদল এক-রাষ্ট্র করবার জন্যে আওয়ামী লীগ এমন করছে বলে উনি জানান।

এই ব্যাপারে  গত রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, অসংখ্য মৃত ব্যাক্তি, প্রবাসী ব্যাক্তিদের নামে যত্রতত্র মামলা দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত এইসমস্ত মামলা খারিজ না করে উলটো আমলে নেন যেকারণে মানুষের হয়রানি করবার সুযোগ পুলিশ পায়। আইনের শাসন না থাকলে এই-ই হয় বলে উনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৯৯টি আসনে একযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। মোট ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের নামে গেজেট জারি করা হয়।নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই জিতে ২৫৭টি আসনে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট পায় ৭টি আসন।

সিরাজগঞ্জে হত্যা বিএনপির জয়ী কাউন্সিলরকে

ফল ঘোষণার পর তিনি হাসতেও পারলেন না। এর আগেই প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর জীবনপ্রদীপ কেড়ে নিল। সিরাজগঞ্জে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম (৪৫)। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত তারিকুলকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি শহরের নতুন ভাঙাবাড়ি মহল্লার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ডালিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ৮৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এই ঘটনার পরে শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সদর থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তারিকুল বেসরকারিভাবে জয়ী হন। এ খবরে তাঁর সমর্থকরা সন্ধ্যায় ওই মহল্লায় একটি মিছিল বের করে। এ সময় পরাজিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকরা ওই মিছিলে হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় তারিকুলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং আবারও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কায় সেখানে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নৌকার দুই সমর্থককে কোপাল প্রতিপক্ষ

ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কায় আজ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। শুক্রবার সকালে উপজেলা নির্বাচন অফিস প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার নুরনগর গ্রামে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের দুই সমর্থককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

আহতরা হলেন : আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেন (৩০)। তাদের অভিযোগ, বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থককরা তাদের ওপর হামলা চালায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বজলুর রহমান মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচের টাকা নিয়ে আমি ও আমার ভাগ্নে আরিফ বাড়ি ফিরছিলাম। নুরনগর গ্রামের কদমতলা থেকে পশ্চিম দিকে ২০০ গজ আসতেই দেখতে পাই স্থানীয় নাসির উদ্দিনের ছেলে আশিক আহম্মেদ, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর ছেলে রাজু আহম্মেদ, সেকেন্দার আলীর ছেলে সজল হোসেন, সুলতান আলীর ছেলে শরীফ হোসেনসহ মুখ বাঁধা আরও ৫-৬ জন। মুক্তার আলীর ছেলের হাতে চাইনিজ কুড়াল, আশিকের হাতে ডেগার। তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আশিক আমার বগলের নিচ দিয়ে ডেগার ঢুকিয়ে দেয়। এতে আমি পড়ে যাই। মুক্তার আলীর ছেলে এসে পায়ের ওপর চারটি কোপ দেয়। মুখ বাঁধা কয়েকজনও আমার পিঠের ওপর চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। আমি মারা গেছি ভেবে বালুর মধ্যে ফেলে চলে যায় তারা। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারি, আমার ভাগ্নের পেটে আশিক ডেগার ঢুকিয়ে দিয়েছে। তার নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে গেছে। বজলুর আরও বলেন, ঘটনার পর লোক মারফত জানতে পারি, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আমাকে হত্যা করার জন্য আশিকের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছে।’

আহত আরিফের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার মামাতো বোন আঁখি খাতুন বলেন, ‘আরিফ সিএনজি চালক। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। তাকে চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পার না হলে তিনি বাঁচবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।’

এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, হামলার শিকার ও হামলাকারীরা পরস্পরের আত্মীয়। যারা আহত হয়েছেন, তারা নৌকার সমর্থক। আর যারা হামলা করেছে তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। নৌকার প্রার্থীকে ফোন করে এটুকু জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। মৌখিকভাবে খবর পেয়ে হামলাকারীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বাড়িতে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুধবার রাতে আড়ানী বাজারের তালতলায় নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভায় হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা। এ সময় নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস, ৫টি মোটরসাইকেল ও শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলাকারীরা একের পর এক গুলি ছোড়ে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে নৌকার প্রার্থীর ২৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এ ঘটনায় নৌকার নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন মতি বাদী হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নামোল্লেখসহ ৫০০/৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় মিলন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ওই হামলায় আড়ানী বাজারের শত শত ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, বাজারে থমথমে পরিবেশ। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট খোলেননি। কোনো ক্রেতাও নেই। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দোকানের মালামাল। আওয়ামী লীগের দুপক্ষের লোকজন দুদিকে অবস্থান নিয়ে আছেন। একটি মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, জবাই করা মুরগি পড়ে আছে। খাঁচায় শ খানেক মুরগি ডাকাডাকি করছে। ভয়ে দোকানে যেতে পারছেন না মালিক। এর পাশে একটি ছোট চায়ের দোকানের চুলাসহ চিমনিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তছনছ করা হয় বসার টুলগুলোও। দোকানের পাশের বাড়িতেই থাকেন সুইপার সৈতন্য। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে গুলি ও বোমার শব্দে আমরা ভয়ে বাড়ি থেকে বের হইনি। বাজারের ব্যবসায়ী ও লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান। ওই বাজারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমার সবজি দোকানের অন্তত ৩০ হাজার টাকার মালামাল তছনছ করে দিয়েছে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ তার লোকজন। এ ব্যাপারে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী বলেন, শাহীদের লোকজনই আগে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে।

এদিকে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে ১৩ পদে ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে চারজন। তবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রিবন আহম্মেদ বাপ্পি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯ ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাঘা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। গুরুত্বপূর্র্ণ কেন্দ্র ৯টি, বুথ ৪৬টি। প্রিসাইডিং অফিসার নয়জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪৬ জন, পোলিং অফিসার ৯২ জন, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার ১৮ জন, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৩টি মোবাইল টিম নিয়োগ করা হয়েছে। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৪টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৮৭৮ ও নারী ভোটার ৭ হাজার ১০৬ জন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন : নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ, ধানের শীষের প্রার্থী তোজাম্মেল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী।

বাঘা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুজিবুল আলম বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। শন্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা ভোটগ্রহণ চলছে

দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ওইসব এলাকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোটের সময় সংঘর্ষের বিষয় মাথায় রেখেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বসুরহাট পৌরসভার সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

২৪ জেলার ৩৮ পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতার কারণেও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপের বেশ কয়েকটি পৌরসভাতেও সহিংসতা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় একজন মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দ্বিতীয় ধাপের যেসব পৌরসভা নিয়ে শঙ্কা আছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য দেওয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি আমাদের কঠোর প্রস্তুতির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর- এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে।

তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হচ্ছে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নেই।

সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

৬০ পৌরসভায় ভোট : দ্বিতীয় ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে, সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব, শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী। এছাড়াও রয়েছে গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর, ঢাকার সাভার, দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ।
নওগাঁর নজিপুর, পাবনার ভাগুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী ও ভবানীগঞ্জভ সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর, মেহেরপুরের গাংনী এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা।

খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর ও কুলিয়ারচর, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার, নোয়াখালীর বসুরহাট ও বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট।

সবার আগে ভোট দিয়ে যা বললেন কাদের মির্জা

সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ইভিএম পদ্ধিতে ভোটগ্রহণ চলছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের। নির্বাচনে সবার আগে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই এবং আওয়ামী লীগের আলোচিত মেয়রপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণের শুরুতেই নিজ কেন্দ্র উদয়ন প্রি-ক্যাডেট একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। এসময় তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট নেয়ার জন্য।

সকাল ৮টায় ইভিএমে ভোট শুরুর কথা থাকলেও আগেই কেন্দ্রে যান কাদের মির্জা। এ সময় ভোটারদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এক নম্বর ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রটিতে ভোট শুরুর পর প্রথম ভোটটি তিনিই দেন।

পরে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। এই ভোটের মাধ্যমে সন্ত্রাস, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জয় হবে। তবে ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দেন কাদের মির্জা।

তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে ভোট অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

এর আগে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নিজের বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য আলোচিত ছিলেন তিনি। নিজের দল আওয়ামী লীগ এবং দলটির মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে তুমুল আলোচনায় আসেন তিনি। সমালোচনা করেছেন নিজের বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অভিযোগ করেন, তাকে হারানোর জন্য একাধিক সংসদ সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে টাকা ঢেলেছেন।

বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আজ সেখানে ভোট দেবেন ২১ হাজার ১১৬ জন ভোটার। তিন জন মেয়র প্রার্থী ও ৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।