Blog

ক্যাপিটলে হামলা একটা বড় ভুল

বলা যায়, ভাগ্য তাঁর তেমন প্রসন্ন ছিল না। ভাগ্য তাঁকে ডাইনিংরুমের সহকারী না বানিয়ে বিলিয়নেয়ার বানিয়েছে; তাঁকে আরো ধনী করেছে। তাঁর দৃষ্টি আকৃষ্ট করে রেখেছে ট্যাবলয়েডের পাতায়। এর পরও তিনি দ্বিধান্বিত—আগন্তুক হিসেবে তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন কী ভুল হয়েছে তাঁর। একটা প্রহসন হিসেবে তাঁর প্রেসিডেন্ট জীবন শুরু হয়েছিল, সেটা শেষ হচ্ছে একটা ট্র্যাজেডি হিসেবে।

ভাগ্য সত্যিই নিজেকে ছাপিয়ে গেছে, সে তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে। অর্জনের এই সর্বোচ্চ শিখর থেকে তিনি সক্ষম হলেন বিশাল একটি বিশ্ব দেখতে। এটা বেশ নিশ্চিত যে তিনি যেখানে প্রবেশ করেছেন, সেখানে তিনি কার্যত অবস্থান করেন না। তিনি যে অবস্থায় পড়েছেন তাঁর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা সহজতর হতো, যদি এর প্রতি তাঁর সাড়া (রেসপন্স) এতটা তিক্ত ও ক্রুদ্ধ না হতো; যদি তাঁর অফিস (প্রেসিডেন্সি) এমন একটি শক্তির প্রতি তাঁর শিশুসুলভ আচরণকে বড় করে না দেখত, এ শক্তি প্রজাতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার সামর্থ্য রাখে।

ক্যাপিটলে হামলা (হয়তো তা প্রতিশোধের শর্ত পূরণ করে) একটা বড় ভুল। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের আরো একবার বলেছেন যে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে প্রতারণা করা হয়েছে, অতঃপর তিনি সমর্থকদের ক্যাপিটলে পাঠালেন—যেখানে তাঁর পরাজয়কে আইন ও রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছিল, চূড়ান্ত করা হচ্ছিল। এগুলো তাঁর জন্য হতাশার মূল দুই উৎস। এগুলো তাঁকে ক্রমেই বিব্রত করছিল ওভাল অফিসে তাঁর প্রথম পা রাখার দিন থেকে। এটা কোনো অর্থেই চমকপ্রদ বা দর্শনীয় বিষয় ছিল না।

ক্যাপিটলে হামলায় ক্ষোভ ছাড়া কিছুই প্রকাশিত হয়নি। এক সিলেবলের একটা শব্দ ‘ট্রাম্প’ (যা এ কয় বছরে নানা পুরনো জায়গায় দেখা গেছে) উচ্চারিত হয়েছে গম্বুজওয়ালা একটি গোল ঘরে। তাঁর নাম ব্যানারে উড়তে দেখা গেছে। কর্তৃত্ববাদী আন্দোলনকে সব সময় পপুলিস্ট হিসেবে পাস করে যেতে দেখা যায়। তাণ্ডব কী, হুমকি কী, পবিত্র স্থানে অপবিত্র বা অশ্রদ্ধার কাজের মানে কী, তা জানার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃত অপরাধী কারা তা জানা, কারা ফায়দা লোটার চেষ্টায় আছে তা জানা। তাণ্ডবে কাদের সমস্যা হয় তা জানা।

ধরা যাক, হামলাকারীদের মোটিফ সারসংক্ষেপে একটি শব্দে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি হলো ট্রাম্প। তাঁর উপহাস ও গলাবজি এবং ধ্বংসাত্মক কথাবার্তার পেছনে যে মিথ্যাচার লুকিয়ে আছে তাঁকে তারা বুঝেছে বলেই মনে হয়। এ ধরনের লোক সব সময় পাওয়া যায় এবং এখন তারা পরস্পরকে ইন্টারনেটে খুঁজে পায়। ট্রাম্প নিজেই একটা শক্ত প্রমাণ যে রাগ-ক্ষোভ-ভীতির তিক্ততার বস্তুগত উপকরণে যে আয়েশি ভাব আছে তা সন্তুষ্টি আনে না। ট্রাম্প সেলফ-পিটিকে চাবুক মারার কাজের সূচনাকারী নন; কিন্তু তিনি এটার প্রতিলিপি, তিনি এটার মহিমান্বিত রূপ।

এ দেশের ভালো ঐতিহ্যগুলো আত্মসংবরণের নীতির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। সংবিধানকে রক্ষা করার মানে একটা ‘কোড অব ল’কে মান্য করা—ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা। এ বিষয়গুলো বিভিন্ন সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা একটা বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন যে তাঁরা এবং তাঁদের মতো লোকজন সরকার পরিচালনা করবেন। তাঁরা একটা দারুণ কাজ করেছেন, নিজেদের হাত বেঁধে রেখেছেন অর্থাৎ আত্মসংবরণের ব্যবস্থা করেছেন। মার্কিন সংবিধান সংক্ষিপ্ততার একটা মাস্টারপিস, ব্যতিক্রমী জিনিস। পরের প্রজন্ম এটাকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সংবরণ দেখিয়েছে। একটা বিশাল ও অনন্য সভ্যতার বোধ থেকে এর উৎপত্তি। এর কারণে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সিস্টেম টিকে আছে।

এখন আমাদের মনে পড়ছে যে আমাদের ব্যবস্থাটা নির্ভরশীল অর্ধেক জনসংখ্যার বা প্রায়ই অর্ধেকের চেয়ে বেশি ইলেকটোরেটের ওপর। গণতান্ত্রিক নাগরিকত্ব হয়তো একটা আর্ট, এটা কিভাবে চর্চা করতে হয় আমরা সেটা ভুলে গেছি এবং ট্রাম্প এর সীমাই দেখতে পান না। তিনি সেটা কখনো বুঝবেন না।

আমাদের চরমপন্থীদের আর্লি ইউরোপিয়ান ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে তুলনা করাই ভালো। একসোঁ ফ্রঁসেজ ও নাজিরা চোর-ডাকাতদের ব্যবহার করত সাংবাদিক ও সিভিল অফিশিয়ালদের সন্ত্রস্ত করার জন্য, হত্যা করার জন্য। এটা তারা করত মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য। তারা এমন ধারণা তৈরি করে নিয়েছিল যে তারাই সত্য, তারাই সত্যিকারের ফ্রেঞ্চমেন এবং জার্মান।

ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বলেছেন, তোমরাই আসল লোক, তোমরাই সেই লোক, যারা এই দেশটাকে গড়েছ। আমেরিকান বলতে যা বোঝায় সেই অর্থকে সংকীর্ণ করে (তিনি সেটা লাগাতারভাবে করেন) তিনি একটা একটা মাইনরিটি কনসেপ্ট তৈরি করেন; তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের একটা স্বতন্ত্র গ্রুপ মনে করেন। এভাবে তাদের একটা ফোকে (জনতায়) পরিণত করেন। তারা ভাবে যে ভোট চুরি করা হয়েছে। এভাবে তারা তাদের দাবিকে সত্য মনে করে। যদিও প্রমাণাদি অন্য কথা বলে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় ইমপিচমেন্টের বিষয়টিতে মজা পান হয়তো। তিনি ওয়াশিংটনের ফাঁদে পড়েছেন। একজন আউটসাইডার নিজেকে ভাবছে ইনসাইডার। তিনি বুঝতে পারেন না যে একান্ত অনুসারীদের দ্বারা তিনি ভূতে পরিণত হবেন। তিনি বন্ধুহীন নন, রুডি গিউলিয়ানি এবং এমন আরো সহস্র লোক তাঁর সঙ্গে আছে। ক্যাপিটলে সরকারে সিটে তোপ দাগার সময় তারা তাঁর নামে জয়োল্লাস করেছে। তারা হয়তো সিনেট চেম্বারে ঢুকে পড়তে পারে; কিন্তু কখনো তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।

উপজেলা প্রশাসনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কাম্য নয়

স্থানীয় সরকারের তাৎপর্য হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কর্মপ্রক্রিয়ায় স্থানীয় স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু আমাদের উপজেলাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে স্থানীয় সরকারের মূলমন্ত্র চাপা পড়ে গেছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করছে ইউএনওদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব। তাঁদের আরো অভিযোগ, ইউএনওরা উপজেলা পর্যায়ে শাসকের ভূমিকা পালন এবং জনপ্রতিনিধিহীন সামন্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন। ইউএনওরা উপজেলা পরিষদ নয়, উপজেলা প্রশাসন পরিভাষা ব্যবহার করেন। এই অভিযোগের মধ্য দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে শাসনব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আবার সামনে এলো। উপজেলা পরিষদ আইনে  উপজেলা পরিষদকে ‘প্রশাসনিক একাংশ’ হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে ৫৯ অনুচ্ছেদ সুস্পষ্টভাবে ‘প্রশাসনের একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার’ নির্বাচিত পরিষদকে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

উপজেলা পরিষদ স্থাপনের শুরু থেকেই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগে আছে। ১৯৮০-এর দশকে এরশাদ সরকারের সময় যখন উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়, তখন আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। সেখানে আমি উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম দেখতাম। তখনো ইউএনও-চেয়ারম্যান বিরোধ ছিল। এসব বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আমাকে অনেক সালিস করতে হয়েছে। আমার কাছে চেয়ারম্যানরা এসেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এসেছেন। তাঁদের কথা শুনেছি, মীমাংসা করেছি। তখন কোনো কোনো এমপিও আসতেন নানা অভিযোগ ও আবদার নিয়ে। কোনো কোনো এমপি তো তাঁর এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করার জন্য প্রভাব খাটানোর কিংবা প্রলোভন দেখানোর চেষ্টাও করতেন। অর্থাৎ তখন থেকেই এমপিরা উপজেলা পরিষদের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন, যেটা আজও আছে। ইউএনও, চেয়ারম্যান ও এমপিদের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উপজেলা পরিষদ এখনো প্রকৃত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দিয়েছিল। পরের বছর ১৯৯২ সালে তারা এমপিদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করে একটা প্রস্তাব আনে। তখন আমাকে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে আমি আমার প্রতিবেদনে লিখেছিলাম, এটা সম্ভব নয়। প্রথম কথা হলো, তখন উপজেলা পরিষদ ছিল ৪৬২টি। আর এমপি হলেন ৩০০ জন। আবার আইনগত বাধাও ছিল। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত এটা হয়নি বলে রক্ষা। মোটকথা, উপজেলা পরিষদের ওপর কর্তৃত্ব আরোপের চেষ্টা সব সময়ই ছিল।

সাম্প্রতিককালে উপজেলা পরিষদের ওপর হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে। বিদ্যমান উপজেলা পরিষদ আইন  ১৯৯৮-এ উপজেলা পরিষদ গঠনের জন্য একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিষদের সদস্য করা হয়েছে উপজেলার আওতাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার (যদি থাকে) মেয়র এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়েছে এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিষদের উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে, যাঁর উপদেশ গ্রহণ এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাঁকে অবহিতকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনে তিনটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত, উপজেলা পরিষদ একমাত্র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, যার কোনো সচিব নেই। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আছে, পৌরসভায় সচিব আছে, জেলা পরিষদে সচিব আছে; কিন্তু উপজেলায় নেই। দ্বিতীয়ত, উপদেশ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে পরিষদের ওপর এমপির কর্তৃত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে সংসদ সদস্যরা চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে ইউএনওকে আদেশ-নিষেধ বা দিকনির্দেশনা দেন। ফলে আইনগতভাবেই উপজেলাকে একটা বিরোধপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তৃতীয়ত, চেয়ারম্যানরা যখন তাঁদের ক্ষমতার চর্চা করতে চান, তখন ইউএনওরা সেটা মানতে রাজি হন না। কারণ চেয়ারম্যানের কথা মানার বিষয়ে ইউএনওদের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতাও নেই। আবার স্থানীয় এমপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এমন উপজেলা চেয়ারম্যানরাও ইউএনওদের হেনস্তা করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে ইউএনওরা হয়তো নিজেদের গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কায় থাকেন। ফলে উপজেলা পরিষদের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

প্রথম যখন উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়, পরিষদের সমস্যাগুলো দেখার জন্য নিকারকে (ন্যাশনাল ইমপ্লিমেনটেশন কমিটি ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্ম) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উপজেলা পর্যায়ে সরকারের যেসব বিভাগ রয়েছে, সেসব বিভাগের সচিবরা মাসে একবার নিকারে আসতেন। সেখানে নানা সমস্যা দেখা হতো। নতুন আইনে সম্ভবত নিকারকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নিকারকেও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। পরে ওয়ান-ইলেভেনে আসা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটা ভালো উদ্যোগ ছিল। তারা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে একটা লোকাল গভর্নমেন্ট কমিশন করেছিল। কমিশন উপজেলা পরিষদের সমস্যা দেখবে, পরামর্শ দেবে এবং সালিস মীমাংসা ইত্যাদি করবে বলে উল্লেখ ছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে লোকাল গভর্নমেন্ট কমিশন বাতিল করে দেয়। ফলে উপজেলা দেখার মতো কেউ নেই।

স্থানীয় সরকার ধারণাটি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের একটা মিথস্ক্রিয়া, যাতে স্থানীয় আকাঙ্ক্ষা ও কল্যাণ অগ্রাধিকার পায়। জনগণের পক্ষে কাজটি করে নির্বাচিত পরিষদ। স্থানীয় সরকারকে যতটা না আইনগত, তার চেয়ে বেশি সহজাত প্রতিষ্ঠান বলা হয়;  যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে বেশি সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। কিন্তু আমাদের উপজেলা পরিষদ এই চেতনা থেকে অনেক দূরে। স্থানীয় সরকার সম্পর্কে আমাদের সংবিধানে যেটা বলা আছে,  সেটাও কার্যকর নেই। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ক্ষমতা হাতছাড়া করতে চায় না। বাস্তবে উপজেলা পরিষদ কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবহ বিভাগে পরিণত হয়েছে। উপজেলাগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হুকুমে চলে। না হয় এমপির হুকুমে চলে। না হয় ইউএনও সাহেব বাধা দেন। এসব কারণে দৃশ্যমান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলাকে দেখা যায় না।

উপজেলা পরিষদে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে থাকা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারের ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা আইনে উপজেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু আজও ১৭টি অফিস এক ছাতার নিচে আসেনি। উপজেলা চেয়ারম্যানের মন্ত্রণালয় হলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ইউএনওর মন্ত্রণালয় হলো ক্যাবিনেট ডিভিশন। ১৭টা ট্রান্সফার্ড প্রতিষ্ঠানও যার যার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে। ফলে উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাজে কো-অর্ডিনেশন একটি মারাত্মক সমস্যা।

এই পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদকে একটা কার্যকর স্থানীয় সরকার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। উপজেলা পরিষদকে কার্যকর ও উন্নত করা এবং এর কার্যক্রম মনিটরিং করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা দরকার। উপজেলা পরিষদ নিয়ে একটা ইনডেপথ গবেষণাও করা যেতে পারে। ১৭টি ট্রান্সফার্ড প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত পরিষদের সঙ্গে কিভাবে কাজ করবে তা সুস্পষ্ট করতে হবে। সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। চেয়ারম্যানরা যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি ইউএনওদের হেনস্তা করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ইউএনও সেতুবন্ধের কাজ করবেন—সে ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের জন্য একজন সচিব দরকার, সেটাও করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকেও সব কিছু আঁকড়ে ধরার মানসিকতা ছাড়তে হবে। সর্বোপরি উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হলে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনো বিকল্প নেই।

টিকা প্রয়োগের প্রথম দিনেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় কম করোনা ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে কেন্দ্র। শনিবার ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার করোনার টিকা প্রয়োগের কর্মসূচি শুরুর দিনে অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার সকালে অবশ্য এক ভারচুয়াল অনুষ্ঠানে করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির অর্থাৎ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাফাই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি এবং তখনই তিনি এই অভিযোগ করেন। তারপর, সকল রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

‘রাজ্যের সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেব। প্রয়োজনে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছ থেকে কিনব’। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যবাসী সবাই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবেন।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রথম দফায় যদিও প্রায় ৫.৮ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সেই সংখ্যার অর্ধেক করা হয়েছে অপর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহের কারণে।

এক সরকারি সূত্র জানান, যেহেতু প্রথম দফায় যারা ভ্যাকসিন পাবেন তাদের ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় দোষ দিতে হবে তাই রাজ্য সরকার প্রথম দফায় পাঠানো বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই মুহূর্তে আমাদের দেশে কভিড শিল্ড এবং কো ভ্যাকসিন নামের দুটি ভ্যাকসিন সরকারি মান্যতা পেয়েছে। প্রথম দফায় আমরা কভিড শিল্ড পেয়েছি যাদের আমরা প্রথম দফায় কভিড শিল্ড দেব দ্বিতীয় দফায় তাদের কভিড শিল্ডই দিতে হবে। তাই দ্বিতীয় দফার জন্য ভ্যাকসিন মজুদ রাখছি বলে জানান এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির প্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার জেলা প্রশাসক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যসচিব। সেই সময়ই প্রয়োজনীয় টিকার বন্দোবস্ত ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন সরকারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘অনেকেই মারা গেছে। কিন্তু আপনারা খুব ভালো কাজ করেছে, কভিডের মোকাবেলা করেছেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজ্য সরকার সবার জন্য ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করবে।’ যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

এদিন Bharot e দেশজুড়ে শুরু হয়েছে গণটিকা প্রয়োগ কর্মসূচি। পশ্চিমবঙ্গে আজ ২০ হাজার ৭০০ জন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাকে Teeka dewar katha chilo. KIntu anek jaigai teeka niye manush-er mone shonka thakar karone anek manush teeka nite ashen ni.

‘Sandhya abdi ja khobor, amader lokkhyer prai 60 shotangsho manush-ke amra teeka dite perechi,’ janan ek sorkari sutro.

সিরাজগঞ্জে হত্যা বিএনপির জয়ী কাউন্সিলরকে

ফল ঘোষণার পর তিনি হাসতেও পারলেন না। এর আগেই প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর জীবনপ্রদীপ কেড়ে নিল। সিরাজগঞ্জে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম (৪৫)। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত তারিকুলকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি শহরের নতুন ভাঙাবাড়ি মহল্লার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ডালিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ৮৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এই ঘটনার পরে শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সদর থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তারিকুল বেসরকারিভাবে জয়ী হন। এ খবরে তাঁর সমর্থকরা সন্ধ্যায় ওই মহল্লায় একটি মিছিল বের করে। এ সময় পরাজিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকরা ওই মিছিলে হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় তারিকুলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং আবারও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কায় সেখানে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নৌকার দুই সমর্থককে কোপাল প্রতিপক্ষ

ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কায় আজ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। শুক্রবার সকালে উপজেলা নির্বাচন অফিস প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার নুরনগর গ্রামে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের দুই সমর্থককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

আহতরা হলেন : আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেন (৩০)। তাদের অভিযোগ, বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থককরা তাদের ওপর হামলা চালায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বজলুর রহমান মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচের টাকা নিয়ে আমি ও আমার ভাগ্নে আরিফ বাড়ি ফিরছিলাম। নুরনগর গ্রামের কদমতলা থেকে পশ্চিম দিকে ২০০ গজ আসতেই দেখতে পাই স্থানীয় নাসির উদ্দিনের ছেলে আশিক আহম্মেদ, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর ছেলে রাজু আহম্মেদ, সেকেন্দার আলীর ছেলে সজল হোসেন, সুলতান আলীর ছেলে শরীফ হোসেনসহ মুখ বাঁধা আরও ৫-৬ জন। মুক্তার আলীর ছেলের হাতে চাইনিজ কুড়াল, আশিকের হাতে ডেগার। তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আশিক আমার বগলের নিচ দিয়ে ডেগার ঢুকিয়ে দেয়। এতে আমি পড়ে যাই। মুক্তার আলীর ছেলে এসে পায়ের ওপর চারটি কোপ দেয়। মুখ বাঁধা কয়েকজনও আমার পিঠের ওপর চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। আমি মারা গেছি ভেবে বালুর মধ্যে ফেলে চলে যায় তারা। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারি, আমার ভাগ্নের পেটে আশিক ডেগার ঢুকিয়ে দিয়েছে। তার নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে গেছে। বজলুর আরও বলেন, ঘটনার পর লোক মারফত জানতে পারি, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আমাকে হত্যা করার জন্য আশিকের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছে।’

আহত আরিফের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার মামাতো বোন আঁখি খাতুন বলেন, ‘আরিফ সিএনজি চালক। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। তাকে চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পার না হলে তিনি বাঁচবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।’

এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, হামলার শিকার ও হামলাকারীরা পরস্পরের আত্মীয়। যারা আহত হয়েছেন, তারা নৌকার সমর্থক। আর যারা হামলা করেছে তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। নৌকার প্রার্থীকে ফোন করে এটুকু জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। মৌখিকভাবে খবর পেয়ে হামলাকারীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বাড়িতে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুধবার রাতে আড়ানী বাজারের তালতলায় নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভায় হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা। এ সময় নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস, ৫টি মোটরসাইকেল ও শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলাকারীরা একের পর এক গুলি ছোড়ে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে নৌকার প্রার্থীর ২৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এ ঘটনায় নৌকার নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন মতি বাদী হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নামোল্লেখসহ ৫০০/৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় মিলন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ওই হামলায় আড়ানী বাজারের শত শত ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, বাজারে থমথমে পরিবেশ। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট খোলেননি। কোনো ক্রেতাও নেই। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দোকানের মালামাল। আওয়ামী লীগের দুপক্ষের লোকজন দুদিকে অবস্থান নিয়ে আছেন। একটি মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, জবাই করা মুরগি পড়ে আছে। খাঁচায় শ খানেক মুরগি ডাকাডাকি করছে। ভয়ে দোকানে যেতে পারছেন না মালিক। এর পাশে একটি ছোট চায়ের দোকানের চুলাসহ চিমনিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তছনছ করা হয় বসার টুলগুলোও। দোকানের পাশের বাড়িতেই থাকেন সুইপার সৈতন্য। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে গুলি ও বোমার শব্দে আমরা ভয়ে বাড়ি থেকে বের হইনি। বাজারের ব্যবসায়ী ও লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান। ওই বাজারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমার সবজি দোকানের অন্তত ৩০ হাজার টাকার মালামাল তছনছ করে দিয়েছে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ তার লোকজন। এ ব্যাপারে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী বলেন, শাহীদের লোকজনই আগে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে।

এদিকে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে ১৩ পদে ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে চারজন। তবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রিবন আহম্মেদ বাপ্পি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯ ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাঘা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। গুরুত্বপূর্র্ণ কেন্দ্র ৯টি, বুথ ৪৬টি। প্রিসাইডিং অফিসার নয়জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪৬ জন, পোলিং অফিসার ৯২ জন, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার ১৮ জন, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৩টি মোবাইল টিম নিয়োগ করা হয়েছে। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৪টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৮৭৮ ও নারী ভোটার ৭ হাজার ১০৬ জন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন : নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ, ধানের শীষের প্রার্থী তোজাম্মেল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী।

বাঘা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুজিবুল আলম বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। শন্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা ভোটগ্রহণ চলছে

দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ওইসব এলাকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোটের সময় সংঘর্ষের বিষয় মাথায় রেখেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বসুরহাট পৌরসভার সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

২৪ জেলার ৩৮ পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতার কারণেও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপের বেশ কয়েকটি পৌরসভাতেও সহিংসতা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় একজন মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দ্বিতীয় ধাপের যেসব পৌরসভা নিয়ে শঙ্কা আছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য দেওয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি আমাদের কঠোর প্রস্তুতির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর- এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে।

তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হচ্ছে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নেই।

সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

৬০ পৌরসভায় ভোট : দ্বিতীয় ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে, সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব, শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী। এছাড়াও রয়েছে গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর, ঢাকার সাভার, দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ।
নওগাঁর নজিপুর, পাবনার ভাগুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী ও ভবানীগঞ্জভ সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর, মেহেরপুরের গাংনী এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা।

খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর ও কুলিয়ারচর, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার, নোয়াখালীর বসুরহাট ও বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট।

সবার আগে ভোট দিয়ে যা বললেন কাদের মির্জা

সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ইভিএম পদ্ধিতে ভোটগ্রহণ চলছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের। নির্বাচনে সবার আগে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই এবং আওয়ামী লীগের আলোচিত মেয়রপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণের শুরুতেই নিজ কেন্দ্র উদয়ন প্রি-ক্যাডেট একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। এসময় তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট নেয়ার জন্য।

সকাল ৮টায় ইভিএমে ভোট শুরুর কথা থাকলেও আগেই কেন্দ্রে যান কাদের মির্জা। এ সময় ভোটারদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এক নম্বর ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রটিতে ভোট শুরুর পর প্রথম ভোটটি তিনিই দেন।

পরে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। এই ভোটের মাধ্যমে সন্ত্রাস, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জয় হবে। তবে ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দেন কাদের মির্জা।

তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে ভোট অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

এর আগে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নিজের বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য আলোচিত ছিলেন তিনি। নিজের দল আওয়ামী লীগ এবং দলটির মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে তুমুল আলোচনায় আসেন তিনি। সমালোচনা করেছেন নিজের বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অভিযোগ করেন, তাকে হারানোর জন্য একাধিক সংসদ সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে টাকা ঢেলেছেন।

বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আজ সেখানে ভোট দেবেন ২১ হাজার ১১৬ জন ভোটার। তিন জন মেয়র প্রার্থী ও ৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

করোনায় যেভাবে খারাপ হচ্ছে ফ্রন্টলাইনারদের মানসিক স্বাস্থ্য

শরীরের সঙ্গে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও মারাত্বক প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। মানুষ নতুন করে অবসাদ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মত সমস্যায় ভুগছে। আবার যারা আগে থেকেই মানসিক রোগের স্বীকার ছিলেন তাদের মধ্যে সমস্যা আরো বেড়েছে।

ফ্রন্টলাইনাররা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। রোগের সঙ্গে মোকেবেলা করতে যেয়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে করোনার জন্যই স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার যথেষ্ঠ ঝুঁকি রয়েছে। দ্য জার্নাল অফ সাইক্রিয়াটিক রিসার্চে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণা থেকে জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং এদের মধ্যে উদ্বেগ, অবসাদ, হতাশা, ইনসোমনিয়ার মত সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এই গবেষণার জন্য বিশেষজ্ঞরা ৫৭১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর গবেষণা করেছেন। এদের মধ্যে ৯৮ জন হলেন চিকিৎসক ও নার্স। বাকি ৪৭৩ জনের মধ্যে রয়েছেন পুলিশকর্মী, দমকলকর্মী। এছাড়া যাদের উপর গবেষণা করা হয়েছে তাদের ৫৬ শতাংশের মধ্যে মানসিক ডিজওঅর্ডার মিলছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইনসমনিয়ায় ভুগছে, কেউ অবসাদ বা উদ্বেগে ভুগছে।

সূত্র: নিউজ১৮

রাজনীতিই শেষ হয়ে যেতে পারে ট্রাম্পের

আরেকটি লজ্জার নজির গড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হলেন তিনি। সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে তাঁকে অভিশংসন করার প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তাঁর নিজ দলের কয়েকজন আইন প্রণেতাও।

ভোটের পর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আরেকবার প্রমাণ করে দেখাল যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও।’

অভিশংসনের এই প্রস্তাব এবার উঠবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে ট্রাম্পের ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্পের জন্য স্বস্তির খবর এতটুকুই যে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে না। কারণ নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার আগে অভিশংসন নিয়ে ভোটাভুটির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন সিনেটপ্রধান মিচ ম্যাককনেল। আর ট্রাম্পের জন্য অস্বস্তির খবর হলো—সিনেটে অভিযুক্ত হলে তাঁর আরেকবার নির্বাচনে লড়ার স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যেতে পারে।

যেভাবে দ্বিতীয় অভিশংসন

আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। গত ৬ জানুয়ারি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস। ওই দিন ট্রাম্পের আহ্বানে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় তাঁর সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পাশাপাশি কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে প্রায় চার ঘণ্টা ভাঙচুর চালায় তারা। এ ঘটনায় নিহত হয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন। ঘটনার পর বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা দাবি তোলে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পকে অপসারণ করা হোক। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানান ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের অনেক আইন প্রণেতাও। ট্রাম্পকে সরাতে দুটি পদ্ধতি হাতে ছিল ডেমোক্র্যাটদের। প্রথম চেষ্টায় সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে অনুরোধ জানান তাঁরা। কিন্তু পেন্স তাতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বিকল্প হিসেবে অভিশংসনের প্রস্তাব নিয়ে গত বুধবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। আর সেই ভোটেই অভিশংসিত হন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হননি। এর আগে ২০১৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। কিন্তু সিনেটে তিনি দায়মুক্তি পেয়ে যান।

প্রস্তাবে যা বলা আছে

অভিশংসনের অভিযোগ রাজনৈতিক, ফৌজদারি নয়। এবারের অভিশংসনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার নির্বাচনে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ করে আসছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এরপর জনগণের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি স্বেচ্ছাচারীর মতো একই অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়া তিনি কর্মী-সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনে যাওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর ওই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জানুয়ারি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে এবং কয়েকজনকে প্রাণ হারাতে হয়।’ প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের অখণ্ডতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলে হস্তক্ষেপ করেছেন।’

বুধবারের ভোটাভুটিতে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন ২৩২ জন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৭টি। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের ১০ আইন প্রণেতাও। তাঁদের একজন অ্যাডাম কিনজিংগার। তিনি বলেন, ‘এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছি।’

এরপর যা ঘটতে পারে

অভিশংসনের এই প্রস্তাব সিনেটে তোলা হবে। সিনেটের সদস্যসংখ্যা ১০০ জন। সেখানে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করতে হলে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন পড়বে। অর্থাৎ, অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরকে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে। গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে রাজি আছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিনেটে অভিযুক্ত হলে আইন প্রণেতারা আরেকটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি করতে পারবেন। ওই প্রস্তাব পাস হলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না। এমনকি সরকারি কোনো পদে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে ২০ জানুয়ারির আগে সিনেটে কোনো ভোটাভুটির সম্ভাবনা নেই। সিনেটপ্রধান মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, অভিশংসন নিয়ে পড়ে না থেকে আইন প্রণেতাদের উচিত হবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করা। ২০ জানুয়ারির পর ভোটাভুটিতে কোনো বাধা নেই বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

ট্রাম্প-বাইডেনের প্রতিক্রিয়া

অভিশংসন নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। তবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমার সত্যিকারের কোনো সমর্থক সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে না।’ ট্রাম্পপন্থীরা ২০ জানুয়ারির আগে দেশজুড়ে সশস্ত্র বিক্ষোভ করতে পারে—এফবিআইয়ের এমন সতর্কতার পর এই বার্তা দিলেন ট্রাম্প।

এদিকে বুধবারের ভোটের ফলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। তবে শুধু অভিশংসন নিয়ে পড়ে না থাকতে আইন প্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আইন প্রণেতারা অভিশংসনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। তবে নতুন মন্ত্রিসভা ও করোনা মহামারির প্রণোদনা অনুমোদনের বিষয়গুলোর প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।’

সামরিক সদস্যদের জন্য সতর্কবার্তা

মার্কিন সামরিক বাহিনী সাধারণত রাজনীতি এড়িয়ে চলে। কিন্তু ৬ জানুয়ারির ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান সেনা সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে উদ্বেগ তৈরি হয়। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে পেন্টাগনের ওপর চাপ তৈরি করে ডেমোক্র্যাটরাও। এ অবস্থায় স্থল, নৌ, বিমানবাহিনীসহ মার্কিন সামরিক বাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কমান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যের প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ক্যাপিটল ভবনে হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ওপর সরাসরি হামলা।’ সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

ঢাকায় করোনা আক্রান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার

বাংলাদেশ সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে দলের সদস্য হেইডেন ওয়ালশ করোনা আক্রান্ত; তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।  বাংলাদেশে আসার পর করা প্রথম টেস্টে তার নেগেটিভ রেজাল্ট আসলেও দ্বিতীয় টেস্টে পজিটিভ এসেছে।  শুক্রবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। 

গেল বুধবার করা করোনা পরীক্ষায় এই লেগ স্পিনারের পজিটিভ রেজাল্ট আসে। যদিও তার কোনো উপসর্গ নেই। আপাতত তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের চিকিৎসক  প্রাইমানন্দ সিংয়ের তত্ত্বাবধানে আছেন।

বাংলাদেশে আসার পর থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রতিটি সদস্যই আলাদাভাবে আছেন।  ইংল্যান্ড হয়ে  বাংলাদেশে আসায় তাদের তিনদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।  বিসিবির কোভিড প্রোটোকল অনুযায়ী তিন দিনের ব্যবধানে দুই বার করোনা নেগেটিভ ফল আসলেই কেবল মাঠে নামার অনুমতি দেয়া হবে। সে অনুযায়ী হেইডেন ওয়ালশ ছাড়া বাকি ক্রিকেটারদের করোনা নেগেটিভ আসায় বৃহস্পতিবার তারা প্রথমবারের মতো অনুশীলন করেন।

বাংলাদেশ সফরে আসার আগে এবং বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর গেল ১১ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের প্রতি সদস্যের চারবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।  হেইডেন ওয়ালশ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে খেলতে পারবেন না।

আগামী ২০ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এ সিরিজ দিয়ে ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।