Blog

রাজশাহীতে সার্জেন্টকে পেটানো যুবক শনাক্ত, মামলা

রাজশাহীতে তল্লাশিচৌকিতে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্ত যুবকের নাম-পরিচয় শনাক্ত করেছে। তবে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে মারপিটের শিকার সার্জেন্ট বিপুল ভট্টাচার্য বাদী হয়ে নগরের রাজপাড়া থানায় মামলা করেছেন।

অভিযুক্ত যুবকের নাম বেলাল হোসেন (২৬)। তিনি নগরের রাজপাড়া থানাধীন লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার শামসুল হকের ছেলে। বেলালকে ধরতে রাজপাড়া থানা ছাড়াও নগর পুলিশের একটি কেন্দ্রীয় বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে নগরের রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকার ঐতিহ্য চত্বরের মোড়ে সার্জেন্ট বিপুল ভট্টাচার্যকে (৩২) কাঠের চলা দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন বেলাল। পরে আহত অবস্থায় বিপুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন মেডিকেলের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় তাঁর বাঁ হাত ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসকের বরাতে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজ পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছিলেন সার্জেন্ট বিপুল ভট্টাচার্য (৩২)। এ সময় তিনি মোটরসাইকেল আরোহী যুবককে থামিয়ে তাঁর মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান। এ নিয়ে প্রথমে বিপুলের সঙ্গে ওই যুবকের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে একপর্যায়ে ওই যুবক সার্জেন্ট বিপুলের ওপর হামলা করেন। ওই যুবক বিপুলকে কাঠের চলা দিয়ে পিটিয়ে জখম করে মোটরসাইকেল ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে আহত সার্জেন্টকে হাসপাতালে নেয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হেলমেট না পরায় সার্জেন্ট ওই যুবককে থামায়। পরে হেলমেট না থাকায় এবং মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকার কারণে মামলা দিতে শুরু করলে আচমকা চেলাকাঠ নিয়ে এসে হামলা করেন বেলাল হোসেন।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, সার্জেন্টকে মারধরের ঘটনায় যুবক ছিলেন একজন। তাঁর নাম-পরিচয়-ঠিকানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুবকের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তিনি পালিয়ে গেছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ওই যুবককে গ্রেপ্তারে নগর পুলিশের একটি বিশেষ কেন্দ্রীয় টিম কাজ করছে। দ্রুতই ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হবে।

শেষবেলায়ও সৌজন্য নেই ট্রাম্প-মেলানিয়ার

হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজ শেষ দিন। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প চলে যাবেন। যাওয়ার আগে জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বিদায়বেলায় করমর্দনের কোনো কর্মসূচি রাখেননি ট্রাম্প। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কর্মসূচিও একই ধরনের। উত্তরসূরি ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে কোনো আমন্ত্রণ জানাননি তিনি।

ট্রাম্প নিজেই জয়েন্ট এন্ড্রু বেস থেকে নিজের ফেয়ারওয়েল নেবেন। স্থানীয় সময় দুপুরে জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার আগেই তিনি বোয়িং-৭৪৭ নিয়ে ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে যাবেন। জো বাইডেন শপথ নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজে এয়ারফোর্স ওয়ান সাইন থাকবে। এয়ারফোর্স ওয়ানের সাইন নিয়েই ফ্লোরিডা যাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প।

ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও স্বামীর পথেই হাঁটছেন। ট্রাম্পের মতোই আচরণ করেছেন তাঁর স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও। প্রথা অনুযায়ী পূর্বসূরি ফার্স্ট লেডি উত্তরসূরিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। নানা কক্ষ ঘুরে দেখান। হোয়াইট হাউসে বসবাসের বিষয়ে নানা তথ্য দেন। মেলানিয়াও উত্তরসূরি ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে কোনো আমন্ত্রণ করেননি।

জো বাইডেনের মেয়ে অ্যাশলি বাইডেন বলেছেন, মেলানিয়া ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য লঙ্ঘন করেছেন। তবে অ্যাশলি বাইডেন বলেন, টি অ্যান্ড টুর নামে পূর্বসূরি এবং উত্তরসূরি ফার্স্ট লেডিদের অনুষ্ঠান না হলেও তাঁরা নিজেরা ঠিক আছেন। ঠিক থাকবেন।

জো বাইডেন ও জিল বাইডেন ।

জো বাইডেন ও জিল বাইডেন । 
রয়টার্স ফাইল ছবি।

জো বাইডেনের প্রতি শেষ সৌজন্যও দেখাননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথা অনুযায়ী উত্তরসূরি প্রেসিডেন্টকে নিতে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট এয়ারফোর্সের বিমান পাঠান। ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ওয়াশিংটনে শপথ নিতে আসার জন্য নিউইয়র্কে এয়ারফোর্সের বিমান পাঠিয়েছিলেন পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

তবে বাইডেনের ক্ষেত্রে তা করেননি ট্রাম্প। বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে ভাড়া করা বিমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে যেতে হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ভাড়া করা বোয়িং-৭৩৭ বিমানে এন্ড্রু জয়েন্ট বেসে নামেন জো বাইডেন। তখন রানওয়েতে এয়ারফোর্সের বিমানটি দাঁড়িয়ে ছিল।

জো বাইডেন অবশ্য শপথ নিতে উইমলিংটন শহর থেকে দেড় ঘণ্টার পথ ট্রেনে করেই ওয়াশিংটন ডিসিতে যেতে চেয়েছিলেন। সিনেটর হিসেবে ৩০ বছর ধরে তিনি এভাবে যাত্রা করেছেন। নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এমন যাত্রা না করতে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

জো বাইডেন যখন ওয়াশিংটনে নামেন, তখন হোয়াইট হাউস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ মিনিটের ভিডিও বার্তা অবমুক্ত করা হয়। জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনের নামটাও মুখে নেননি। জানাননি কোনো অভিনন্দন। আমেরিকার সংস্কৃতিতে এসবই এক বিরল ঘটনা।

আজ বুধবার ওয়াশিংটন সময় মধ্যদুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। কংগ্রেস ভবন পেছনে রেখে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ মঞ্চ। এখানে দাঁড়িয়েই শপথ নেবেন তাঁরা। তাঁদের শপথ পড়াবেন যথাক্রমে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র।

অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন হাজারখানেক অতিথি, যাঁদের অধিকাংশই কংগ্রেস সদস্য ও বাইডেন-হ্যারিস পরিবারের লোকজন। থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানের ঘণ্টা তিনেক আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাবেন ফ্লোরিডায়।

প্রমোদতরিতে করে রাতে যাবেন, দিনে ফিরবেন

জাহাজের কেবিন ও আসনে ৫১১ জন পর্যটক। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ঠিক পৌনে ১২টায় পতেঙ্গার ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে তাঁদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘এমভি বে ওয়ান’।
চট্টগ্রাম–সেন্ট মার্টিন সাগরপথে এমভি বে ওয়ানের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে বাস, ট্রেন ও উড়োজাহাজে চেপে ঢাকা থেকেও অনেক পর্যটক এসেছেন। জাপানের টোকাই কিসেন কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজটি কিনে এনেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। জাপানে জাহাজটির নাম ছিল ‘সিলভিয়া মারু’, যা টোকিওর পাঁচটি দ্বীপে পর্যটক আনা–নেওয়া করত।

জাহাজটি যখন কর্ণফুলী নদীর মোহনা পার হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে, তখন পর্যটকদের আনন্দ যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজগুলো দেখতে থাকেন। মধ্যরাতে সাত–আটতলা উঁচু বড় বড় জাহাজকে দূর থেকে উঁচু ভবনের মতোই মনে হচ্ছিল। বড় বড় জাহাজের দৃশ্য দেখা শেষ না হতেই ওপরের ডেকে শুরু হয়ে যায় গানবাজনা। কেবিন ছেড়ে অনেকেই জাহাজের ডেকে এসে গান উপভোগ করেন।

শীত মৌসুম হওয়ায় এখন সাগরে ঢেউ নেই। ভারসাম্য থাকায় শিশু, নারী, কিশোর, বৃদ্ধনির্বিশেষে যাত্রীদের কারও জাহাজে ঘুরতে সমস্যা হচ্ছিল না। তবে নাবিকেরা জানালেন, ঢেউ থাকলেও জাহাজে ভারসাম্য রাখার ডানা আছে। তাই এটি হেলেদুলে চলে না। বাণিজ্যিক জাহাজের মতো ইঞ্জিনের শব্দও কানে বাজে না।

মধ্যরাতে ডেকের সোফায় বসে প্রথম যাত্রা উপভোগ করছিলেন সৈয়দ আকতার নামের এক পর্যটক। বললেন, ‘জীবনে ৪১টি দেশ ভ্রমণ করলেও আগে কখনো পর্যটকবাহী জাহাজে চড়া হয়নি। এবার সে সাধ মিটল। খুবই ভালো লাগছে।’
গান শোনা, আড্ডা আর ঘণ্টা তিনেকের এক ঘুমে কেটে গেল রাত। সকাল পৌনে সাতটার দিকে সাউন্ড সিস্টেমে প্রথম যাত্রা শেষ হওয়ার খবর শোনা গেল। প্রথম যাত্রায় লেগেছে সাত ঘণ্টা। সেন্ট মার্টিন জেটির এক কিলোমিটার দূরে নোঙর করল জাহাজটি। নাবিকেরা জানান, সেন্ট মার্টিন জেটিতে গভীরতা কম থাকায় এক কিলোমিটার দূরেই নোঙর করতে হয়েছে। সেখান থেকে আরেকটি ছোট জাহাজ ১০ মিনিটে যাত্রীদের জেটিতে নিয়ে নামাল।

এরপর ঘণ্টা পাঁচেক দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ঘুরে দুপুর সোয়া ১২টায় যাত্রীরা আবার জাহাজে উঠলেন। এবার দিনের বেলায় সাগরে ভ্রমণ। দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ দূরে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে যেন মিশে গেছে। শান্ত সাগরের বুক চিরে জাহাজটি চট্টগ্রামের দিকে ছুটছে, আর পর্যটকেরা নীল জলরাশি, মাছ ধরার ট্রলার থেকে জাল ফেলার দৃশ্য দেখছেন।

কে চালাচ্ছেন এই জাহাজ, তা জানার জন্য যেতে হলো ব্রিজে। সেখানেই কথা হয় জাহাজটির মাস্টার ক্যাপ্টেন আলমগীর কবিরের সঙ্গে। ওখান থেকেই জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কত গতিতে চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পর্দার দিকে ইঙ্গিত করলেন। দেখা গেল, ১৮ দশমিক ৭ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলছে। তবে সর্বোচ্চ গতি পাওয়া গেছে ২২ নটিক্যাল মাইল।

ফিরতি পথে স্রোতের প্রতিকূলে জাহাজের গতি ধরে রাখা যায়নি। তাই সেন্ট মার্টিন থেকে চট্টগ্রাম ফিরতে সাড়ে আট ঘণ্টা লেগে গেল। সাগরে জট না থাকলেও স্রোতের প্রতিকূলতা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো কঠিন করে দেয়।

জাহাজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাশুক হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে বললেন, দেশের পর্যটকেরা এই প্রথম ক্রুজে পর্যটনের স্বাদ উপভোগ করলেন। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতিতে এই পর্যটন বড় অবদান রাখবে।

প্রমোদতরি থেকে দেখা সুর্যাস্তও

ভাড়া ও সুযোগ–সুবিধা

এই জাহাজে সাশ্রয়ী প্যাকেজ হলো সর্বনিম্ন জনপ্রতি তিন হাজার ও চার হাজার টাকা। চেয়ারে বসে যাওয়া এবং আসার ভাড়া এটি। সবচেয়ে দামি প্যাকেজ হলো দুজনের শয্যার ভিভিআইপি কেবিন। ফিরতি টিকিটসহ সেটির ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এরপরে রয়্যাল প্যাকেজ ৪৫ হাজার এবং প্রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ ৩০ হাজার টাকা। চার শয্যার ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে ফিরতি টিকিটসহ একজনের শয্যার ভাড়া ১০ হাজার টাকা। যাওয়া–আসা ছাড়াও একপথের টিকিট আছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার ফিরতি টিকিটের অর্ধেকের কাছাকাছি।

সাইফুল ইসলাম নামে জাহাজের এক যাত্রী জানালেন, সড়কপথের তুলনা করলে এই জাহাজ তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া সাশ্রয়ী। তবে কেবিনের সুবিধা থাকলেও ভাড়া বেশি। তবে জাহাজটিতে খাবারেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি এত দিন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সড়কপথে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ এবং সেখান থেকে নৌপথে সেন্ট মার্টিন যেতে হতো। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে সময় লাগে কম–বেশি আট ঘণ্টা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস ও নৌযান মিলে ভাড়া গুনতে হয় আসা–যাওয়াসহ জনপ্রতি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। আর সাগরপথে চট্টগ্রাম থেকে ২৩৬ কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন যেতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে না বলে জানালেন এমভি বে ওয়ান জাহাজের কর্মকর্তারা। চাইলে আপনারাও একবার ঘুরে আসতে পারেন।

গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির মিছিলে পুলিশের হামলা-একই পরিবারের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা-প্রবাসে থেকেও মামলার আসামী!

নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনকে বাংলাদেশের এক কলংকিত অধ্যায় আখ্যায়িত করে  ৩০ ডিসেম্বরকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ এও এর ব্যাত্যয় ঘটেনি। গোটা দেশজুড়ে অসংখ্য কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো। এর মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা জেলা ও মহানগর বিএনপি। কিন্তু দেশজুড়ে সমস্ত সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে আগাতে পারেনি – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুমতি মেলেনি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভি্যোগে সরকার-দল সমর্থিত ছাত্রলীগ/যুবলীগ ও পুলিশ-এর হামলায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস পুরোপুরি পালন করা গেছে বলা যায়না। অসংখ্য গ্রেপ্তার, হাজারের-ও বেশির বিরূদ্ধে মামলা দেয়া, হয়রানি করার মতো অভিযোগ বিএনপি করেছে।

বিএনপির এইসব অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিরপুরের রূপনগর থানায় ৩০ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিল হতে উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক (দুজনেই একই পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দীন স্বপন এর ঘনিষ্ঠ সমর্থক) গ্রেপ্তার দেখানো হয় জি.আর মামলা নং – ৫২২০/২০২০ এ।

সেই একই মামলায় আরো সাত জনকে আসামী করা হয় এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়। এই মামলায় ফৌজদারী আইনের ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় আসামীদের। সম্প্রতি এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় – যদিও উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক জামিন পেয়েছেন, ঐ একই মামলায় তাদেরই আরেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মোঃ শহীদুল ইসলাম-কে আসামী দেখানো হয়েছে যিনি গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন বলে জানান তার পারিবারিক সূতর।

শুধু তা-ই না, মোঃ শহিদুল ইসলাম এর আরো তিন সহোদরকেও এবং তাদের আরেক মামা, আওলাদ হোসাইন, যিনি উলিয়ার হোসাইন এর ভাই, তাকেও সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলার আসামী তালিকায় ওঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করে হাজতবাসী করা হয়েছে। এদের মধ্যে আওলাদ হোসাইন এর জামিন হয়েছে কিন্তু মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলাম এখনো জামিন পাননি যদিও তারা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।

একই মামলায় মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকে দেখানো হয়েছে যিনি নিজেও যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বহু বচর ধরে। শহীদুল ইসলামের একজন পারিবারিক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান – এইসব তাদের পরিবারে নতুন নয়। উলিয়ার হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসার ফলে এবং পুরো পরিবার-ই বিএনপি সমর্থক হওয়ার কারণে এসব ভোগান্তি আগেও পোহাতে হয়েছে।

উলিয়ার হোসাইন এর বিপক্ষে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি জেল করা হচ্ছে গত ১০ বছর ধরে, তবে এইবারের ঘটনা একদমি নজিরবিহীন। এইভাবে পরিবারের প্রায় সব পুরূষকে অত্যাচার হেনস্থা করা হবে, এটা কেউই কল্পনায় আনেননি। স্থানীয় যুবদল নেতা জুয়েল বলেন এই ধরণের হয়রানি লাখ লাখ বিএনপি সমর্থক, নেতা কর্মীর জন্যে চরম অবমাননাকর এবং কষ্টের। একদল এক-রাষ্ট্র করবার জন্যে আওয়ামী লীগ এমন করছে বলে উনি জানান।

এই ব্যাপারে  গত রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, অসংখ্য মৃত ব্যাক্তি, প্রবাসী ব্যাক্তিদের নামে যত্রতত্র মামলা দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত এইসমস্ত মামলা খারিজ না করে উলটো আমলে নেন যেকারণে মানুষের হয়রানি করবার সুযোগ পুলিশ পায়। আইনের শাসন না থাকলে এই-ই হয় বলে উনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৯৯টি আসনে একযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। মোট ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের নামে গেজেট জারি করা হয়।নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই জিতে ২৫৭টি আসনে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট পায় ৭টি আসন।

চীনের মধ্যস্থতায় আগামীকাল ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শুরু হচ্ছে। এই বৈঠকে আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এবং রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট গ্রাম ধরে তালিকা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে জোর দেবে বাংলাদেশ।

তিন দেশের পররাষ্ট্রসচিবকে নিয়ে এ ধরনের বৈঠক এটিই প্রথম। তবে এই বৈঠকে নাটকীয় কিছু ঘটবে, এমনটা আশা করছেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় যত শিগগির সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু হোক। চীনের সহায়তায় বৈঠকটি হচ্ছে। আগেও চীন একবার তারিখ দিয়েছিল, কিন্তু মিয়ানমার রাজি না থাকায় বৈঠকটি হয়নি।’

প্রত্যাবাসনের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় দফায় মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই করে ফেরত পাঠিয়েছে। তবে তালিকা পরিবারভিত্তিক হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
ফাইল ছবি

এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় বাংলাদেশের অগ্রাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, অতীতে যা হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সুতরাং, একই ভুল বা একই পথে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গাদের তালিকা না পাঠিয়ে সুনির্দিষ্ট গ্রাম ধরে তালিকার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত উপায়ে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা যেতে পারে। যাচাই–বাছাইয়ের পর যে তালিকা এসেছে, সেখান থেকে গ্রামভিত্তিক তালিকা করা যায়। সেই সংখ্যা এক থেকে দুই হাজার হতে পারে। বিষয়টি চীনকেও বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ চায় বর্ষার আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

আইসিটির তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হলেন সানাউল হক

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম. সানাউল হক। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি নিজে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবগত করেন।

সানাউল হক বলেন, আজ আমি তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়ার অফিস আদেশ পেয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান মারা যান। আব্দুল হান্নান খানের স্থলাভিষিক্ত হলেন এম সানাউল হক।

২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে এম. সানাউল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ভারতের ‘উপহার’ ২০ লাখ ডোজ টিকা আসছে বুধবার

আগামী ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসছে ভারতের উপহার স্বরূপ সেরামের ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে সময়নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন আনার অনুমতিও দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানান, এ মুহূর্তে গোটা স্বাস্থ্যখাতের ব্যস্ততা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই করোনাকালীন স্বাস্থ্যখাতে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিজের পক্ষে সাফাই গান মন্ত্রী। জানান দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যখাত, নেই শয্যা কিংবা আইসিইউ সংকট।

মন্ত্রী বলেন, সপ্তাখানেকের মধ্যেই দেশে আসছে ভারতের সেরাম থেকে নেওয়া অক্সফোর্ডের প্রথম ৫০ লাখের চালান। এর আগেই আসতে পারে ভারত সরকারারের উপহার হিসেবে দেওয়া কিছু ভ্যাকসিন। যদিও সেই টিকা কোন ব্র্যান্ড বা সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় থাকছে বিশেষ নজরদারি। আমাদের ভারত সরকারও কিছু ভ্যাকসিন উপহারস্বরূপ দেবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, এ টিকা দেওয়ার পর কী হবে, আমরা তা জানি না। আমরা অন্যান্য দেশে দেখেছি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। টিকার বুথগুলো হাসপাতালের কাছে থাকলে ভালো হয়।

তিনি জানান, ৪ লাখ মানুষের জন্য ফাইজারের ৮ লাখ ডোজ আসবে। এ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে কোল্ড চেইন সীমিত আছে। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি ভ্যাকসিন রাখার উপযোগী রেফ্রিজারেটর আনা হচ্ছে জাতিসংঘের সহায়তায়।

নীতিমালা মেনে প্রাইভেট সেক্টরে যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই ভ্যাকসিন আনতে পারবে। তবে দামে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলেও জানান জাহিদ মালেক।

তীব্র শীতে জবুথবু কেশবপুরের জনজীবন

মাঘের তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে কেশবপুরের মানুষের জীবন। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) ঘন কুয়াশা থাকায় বেলা ১১টায়ও দেখা মেলেনি সূর্যের। সকাল ১০টায়ও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

ঘন কুয়াশার কারণে যশোর-চুকনগর সড়কে যানবাহন কিছুটা হলেও কম চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে যে সকল যানবাহন চলাচল করছে সেগুলোর হেডলাইট জ্বালিয়ে নিয়েছে। যাত্রীবাহী বাসের এক চালক জানান, ‘ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে চালাতে হচ্ছে। অন্যদিনের তুলনায় আজ যাত্রী কম।’

মধ্যকুল গ্রামের কৃষক নওশের আলী বলেন, ‘সকালে ক্ষেতে ধানের পাতা (চারা) রোপণ করতে গিয়েছিলাম। মাঠের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস বইছে। প্রচন্ড শীতে কাজ করত না পেরে ফিরে আসছি।’

ইঞ্জিন চালিত ভ্যান চালক খলিল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোরে ভাড়ায় খাটতে ভ্যান নিয়ে বের হই। আজ বেলা ১১টায় বের হয়েও যাত্রী না পেয়ে বসে আছি।

মস্কোয় পা রাখামাত্র আটক নাভালনি

বার্লিন থেকে মস্কোয় ফেরামাত্র আটক হলেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১৭ জানুয়ারি মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আসার পর ৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে আটক করে রুশ পুলিশ।

বার্লিন থেকে আসা উড়োজাহাজটির মস্কোর আরেকটি বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। নাভালনিকে দেখতে সেখানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটি শেষ পর্যন্ত সেখানে অবতরণ না করে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

নাভালনিকে আটকের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। গতকালই তিনি এই নিন্দা জানান। নাভালনিকে আটক করা অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। নাভালনিকে দ্রুত ছেড়ে দিতে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাভালনি। তিনি মস্কোয় ফেরামাত্র আটক বা গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল রুশ কর্তৃপক্ষ।

রাশিয়ার কারা বিভাগ জানিয়েছিল, জালিয়াতির মামলায় ২০১৪ সালের স্থগিত দণ্ডের শর্ত লঙ্ঘনের জন্য মস্কোতে আসামাত্র নাভালনিকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

আটক বা গ্রেপ্তারের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই রাশিয়ায় ফেরেন নাভালনি। নাভালনি রাশিয়ায় ফৌজদারি অপরাধের মামলারও মুখোমুখি হতে পারেন।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীরা রুশ কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করছেন।

গত বছরের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। প্রথমে তাঁকে সাইবেরিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে যান।

নাভালনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে ধীর ধীরে সেরে ওঠেন তিনি। মাস কয়েক বার্লিনে থাকার পর নিজ দেশ রাশিয়ায় ফিরলেন তিনি।

নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নাভালনিকে সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।

যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের কারিগরেরা ফিরছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের ঝুঁকি

বুশ জুনিয়রের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দরুন ওবামা বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ওবামার কপালে জুটেছে যুদ্ধবাজের তকমা। ওবামা আফগানিস্তানে ড্রোন দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছেন। লিবিয়া এবং সিরিয়ায় গণতন্ত্র পাচার করতে গিয়ে কোটি মানুষের জীবন তছনছ করেছেন।

আজ আবার অনেকটা ওবামার সঙ্গে মিল রেখেই বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে বাইডেন ক্ষমতায় এসেছেন। ট্রাম্পের বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বাইডেনের বিজয়ে শান্তির বার্তা ছিল। কিন্তু মার্কিন রাজনীতির অলিগলি সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বাইডেনের নীতির মধ্যে বরং যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছেন।

এই সম্ভাবনাকে মজবুত করেছে বাইডেনের নিয়োগকৃত মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের অতীত কর্মকাণ্ড। মোটাদাগে ওবামা আমলের যুদ্ধের কারিগরেরা আবার ওয়াশিংটনে ফিরে এসেছেন। নড়াচড়া শুরু হয়েছে অস্ত্র বাজারে। আর হতাশায় মুখ ঢাকতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ।

বেশ কয়েক ধাপে বাইডেন তাঁর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কর্তাদের তালিকা উন্মোচন করেছেন। তালিকায় স্থান পাওয়াদের একটি অংশ আগাম কাজও শুরু করে দিয়েছেন। আল-জাজিরার খবরে প্রকাশ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ব্লিংকেন ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অনুগত, যিনি প্রায় দুই যুগ ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নীতিনির্ধারকদের একজন। ব্লিংকেন ওবামা আমলে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে মনোনীত করেছেন বাইডেন। নিন্দুকেরা কৃষ্ণাঙ্গ গ্রিনফিল্ডকে ডেমোক্র্যাটদের কন্ডোলিৎসা রাইস বলে অবহিত করেন। শুরুতে বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে সুসান রাইসের নাম শোনা গেলেও নিয়োগ পেয়েছেন জেইক সুলিভ্যান।

ব্লিংকেনের মতো সুলিভ্যানও ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অত্যন্ত কাছের মানুষ। হিলারির সহযোগী হিসেবে ইরান পরমাণু চুক্তিসহ মার্কিন কূটনৈতিক অঙ্গনে সুলিভ্যান পরিচিত নাম। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে তাঁর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গিয়েছে ব্রেট ম্যাকগার্কের বিতর্কিত নিয়োগ। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে বাইডেন ম্যাকগার্ককে নিয়োগ দিয়েছেন। সিরিয়া ভেঙে যে তিন-চারটি নতুন রাষ্ট্রের চিত্র অঙ্কন করা হচ্ছে, তা অনেকটাই ম্যাকগার্কের চিন্তাপ্রসূত

বাইডেনের নিয়োগকৃত এই সব কূটনৈতিক পশ্চিমা গণমাধ্যমে ঝানু কূটনৈতিক এবং মার্কিনদের স্বার্থ রক্ষার কারিগর হিসেবে অবহিত করলেও এই সব কূটনৈতিকদের অতীত মিহিন নয়। বরং প্রায় সবার বিরুদ্ধে রয়েছে মিথ্যা যুদ্ধের অভিযোগ। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন যেভাবে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের এবং বর্তমান ইয়েমেন যুদ্ধের অন্যতম হোতা, ঠিক একইভাবে ব্রেট ম্যাকগার্ককে বলা হয় সিরিয়া যুদ্ধের অন্যতম নকশাবিদ। ম্যাকগার্কের নীতির ওপর নির্ভর করে ওবামা পিকেকের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেছিলেন, যা তুরস্ককে প্রায় ভেঙে দেওয়ার উপক্রম তৈরি করেছিল। সিরিয়াকে পরিণত করেছে শ্মশানে। ব্রেট ম্যাকগার্কের নিয়োগ প্রমাণ করছে যে বাইডেনের আমলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সমাধান তো মিলবেই না বরং যুদ্ধের পরিধি বিস্তৃত হবে। একই সঙ্গে জেইক সুলিভ্যান যেভাবে হিলারি ক্লিনটনের লিবিয়া আক্রমণের সঙ্গী ছিলেন, ঠিক একইভাবে জন কেরির বিরুদ্ধে সিরিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত এবং ২০১৬ সালে তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে মদদের অভিযোগ রয়েছে।

বিরোধকে সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে খোদাই করে লিখে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাবেন বাইডেন।

জন কেরি, অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ব্রেট ম্যাকগার্ক এবং জেইক সুলিভ্যানের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়েমেন, সিরিয়া গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা শূন্যে হ্রাস পেয়েছে। লিবিয়ার দ্বিখণ্ডিত করার পরিকল্পনা খরস্রোতা হয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যে উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলন, বেগবান হবে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপন।

সিরিয়ার যুদ্ধ এবং আইএসএসকে থামাতে অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং ম্যাকগার্ক পিকেকের সিরিয়ান শাখা ওয়াইপিজিকে একটি সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। ওবামা আমলে মার্কিনদের সহায়তায় জন্ম নেওয়া বাহিনীর সদস্য আজ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। মার্কিনরা ২০২১ সালে ওয়াইপিজির জন্য বরাদ্দ রেখেছে ২০০ মিলিয়ন ডলার। অত্যাধুনিক মার্কিন হাতিয়ার এবং অর্থ সরবরাহ করে এই সেনাবাহিনীকে অপ্রতিরোধ্য করেছে। এমনকি স্বল্পমাত্রার বিমান বিধ্বংসী রাডারও সরবরাহ করেছে। এই বৃহৎ একটি সেনাবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সমাধানের সম্ভাবনা শূন্য। তুরস্ক কোনোভাবেই নিজ সীমান্তে ওয়াইপিজির নেতৃত্বে নতুন রাষ্ট্র মেনে নেবে না। তাই সংঘর্ষ অনিবার্য। সময় বলে দেবে এই সংঘর্ষে মার্কিনরা নাকি আঙ্কারা পিছু হটবে।

সিরিয়ার মতো লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়েও বাইডেন প্রশাসন কোনো সুসংবাদ দিতে পারবে না। ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা অবৈধ যুদ্ধবাজ হাফতারকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আসলে ত্রিপোলির জাতীয় ঐকমত্যের সরকার এবং হাফতারের মধ্যে বিরোধিতাকে পুঁজি করে মার্কিনরা কোরিয়া উপদ্বীপের কায়দায় লিবিয়াকে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

বর্তমান ত্রিপোলিকে ঘিরে একটি এবং বেনগাজিকে নিয়ে একটি দেশ গঠন হবে। গাদ্দাফিকে হত্যা করে লিবিয়াকে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করার অন্যতম কুশীলব জেইক সুলিভ্যান নিয়োগ পেয়েছেন বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে। সিরিয়ার মতোই লিবিয়ার মানুষের শিগগিরই মার্কিনদের যুদ্ধ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা কম।

তবে অভিবাসী মুসলিম আর মার্কিন উদারনৈতিকদের নিজ আবক্ষে আটকে রাখতে বাইডেন বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। প্রথমত, পরিবর্তন আসতে পারে ফিলিস্তিন প্রশ্নে। বাইডেন ট্রাম্পের বন্ধ করে দেওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দের তালা আবার খুলতে পারেন। জেরুজালেম থেকে মার্কিন দূতাবাস ফিরিয়ে না নিলেও ফিলিস্তিনিদের খুশি রাখতে পূর্ব জেরুজালেমে একটি মার্কিন কনস্যুলেটের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, স্বল্প পরিসরে হলেও ইরান চুক্তিতে ফিরতে পারেন। তৃতীয়ত, নামকাওয়াস্তে সৌদি বিশেষ করে বিন সালমানকে শাসাতে পারেন। কিন্তু এই সবকিছুই কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন আনবে না মধ্যপ্রাচ্যে। মার্কিনদের চাপিয়ে দেওয়ার বিরতিহীন যুদ্ধের ইতি টানবে না।

বাইডেন যখন ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অংশীদার এই সব যুদ্ধপ্রিয় কর্তাদের পররাষ্ট্রনীতির চেয়ারে বসিয়েছেন, তখন বিশ্ববাসী কীভাবে বাইডেনের মধ্যে শান্তির ঝলক দেখতে পায়, তা বোঝা মুশকিল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা নারী স্বাধীনতা নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনদের প্রধান লক্ষ্য ধর্ম, ভাষা এবং শিয়া-সুন্নি বিরোধকে উসকে সংঘর্ষ জিইয়ে রাখা।

বিরোধকে সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে খোদাই করে লিখে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাবেন বাইডেন। যে গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বৈধভাবে চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করা হয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের ময়দান প্রস্তুত করা হয় আর ইরানকে মোকাবিলা আর সংস্কারের নামে বিন সালমানের বর্বরতাকে নীরবে উৎসাহিত করা হয়।