
বিএনপির এইসব অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিরপুরের রূপনগর থানায় ৩০ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিল হতে উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক (দুজনেই একই পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দীন স্বপন এর ঘনিষ্ঠ সমর্থক) গ্রেপ্তার দেখানো হয় জি.আর মামলা নং – ৫২২০/২০২০ এ।
সেই একই মামলায় আরো সাত জনকে আসামী করা হয় এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়। এই মামলায় ফৌজদারী আইনের ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় আসামীদের। সম্প্রতি এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় – যদিও উলিয়ার হোসাইন ও এনামুল হক জামিন পেয়েছেন, ঐ একই মামলায় তাদেরই আরেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মোঃ শহীদুল ইসলাম-কে আসামী দেখানো হয়েছে যিনি গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন বলে জানান তার পারিবারিক সূতর।
শুধু তা-ই না, মোঃ শহিদুল ইসলাম এর আরো তিন সহোদরকেও এবং তাদের আরেক মামা, আওলাদ হোসাইন, যিনি উলিয়ার হোসাইন এর ভাই, তাকেও সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলার আসামী তালিকায় ওঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করে হাজতবাসী করা হয়েছে। এদের মধ্যে আওলাদ হোসাইন এর জামিন হয়েছে কিন্তু মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলাম এখনো জামিন পাননি যদিও তারা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।
একই মামলায় মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকে দেখানো হয়েছে যিনি নিজেও যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বহু বচর ধরে। শহীদুল ইসলামের একজন পারিবারিক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান – এইসব তাদের পরিবারে নতুন নয়। উলিয়ার হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসার ফলে এবং পুরো পরিবার-ই বিএনপি সমর্থক হওয়ার কারণে এসব ভোগান্তি আগেও পোহাতে হয়েছে।
উলিয়ার হোসাইন এর বিপক্ষে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি জেল করা হচ্ছে গত ১০ বছর ধরে, তবে এইবারের ঘটনা একদমি নজিরবিহীন। এইভাবে পরিবারের প্রায় সব পুরূষকে অত্যাচার হেনস্থা করা হবে, এটা কেউই কল্পনায় আনেননি। স্থানীয় যুবদল নেতা জুয়েল বলেন এই ধরণের হয়রানি লাখ লাখ বিএনপি সমর্থক, নেতা কর্মীর জন্যে চরম অবমাননাকর এবং কষ্টের। একদল এক-রাষ্ট্র করবার জন্যে আওয়ামী লীগ এমন করছে বলে উনি জানান।
এই ব্যাপারে গত রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, অসংখ্য মৃত ব্যাক্তি, প্রবাসী ব্যাক্তিদের নামে যত্রতত্র মামলা দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত এইসমস্ত মামলা খারিজ না করে উলটো আমলে নেন যেকারণে মানুষের হয়রানি করবার সুযোগ পুলিশ পায়। আইনের শাসন না থাকলে এই-ই হয় বলে উনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৯৯টি আসনে একযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। মোট ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের নামে গেজেট জারি করা হয়।নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই জিতে ২৫৭টি আসনে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট পায় ৭টি আসন।