নেপালের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট জিতলে ভালো। না জিতলেও ক্ষতি নেই। ৬ দিনের এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য থাকবে নতুন ফুটবলারদের পরখ করে নেওয়া। এই মন্ত্রেই ১৮ মার্চ কাঠমান্ডু যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ( বাফুফে) ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে বারবারই বললেন, টুর্নামেন্ট জয়ের চেয়ে তাঁর মূল মনোযোগ নবীনদের সুযোগ দেওয়া।
তবে জেমি ডে এ কথা বলতে ভোলেননি, ‘নেপালে ট্রফি জিতলে সেটি হবে দারুণ ব্যাপার। আমাদের জন্য বোনাস। ঢাকা ফিরে ট্রফিটা সামনে নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা। আমরা যদি এই টুর্নামেন্টে নতুন ফুটবলারদের পরখ করতে পারি, তাহলে সেটি হবে জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ৩ ম্যাচের জন্য দারুণ ব্যাপার।’
আফগানিস্তান, ভারত ও ওমানের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের বাকি ৩টি ম্যাচ জুনে কাতারে। এই ম্যাচগুলো দেশের মাটিতে ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে ম্যাচগুলো চলে গেছে নির্দিষ্ট এক ভেন্যুতে। যেটিকে বাংলাদেশের জন্য হতাশার বলছেন জেমি, ‘আমরা ভারত, আফগানিস্তান, ওমানের সঙ্গে ঘরের মাঠে খেলার বড় সুযোগ হারিয়েছি। কিন্তু কিছু করার নেই। এখন আমাদের ভালো প্রস্তুতি নেওয়া চাই। সেই প্রস্তুতিরই একটা অংশ বলতে পারেন নেপালের টুর্নামেন্ট।’
তবে নেপালের মাটিতে খেলা সহজ নয় লাল-সবুজের জন্য। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসএ গেমসে ভরাডুবি হয়েছে অনূর্ধ্ব–২৩ দলের। ভূপৃষ্ঠ থেকে নেপালের উচ্চতা বাংলাদেশের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে মনে করা হচ্ছে। ফুটবলাররাও বলছেন সফরটা সহজ হবে না। চোটের কারণে এই সফরে ডাক না পাওয়া অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সফরটা কঠিনই হবে। কারণ, নেপালের উচ্চতা বরাবরই ফুটবলাদের জন্য একটা সমস্যা।’

বাংলাদেশ দলে ২৪ জন ফুটবলারকে ডাকা হয়েছিল। ২৫তম ফুটবলার হিসেবে যোগ করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জুয়েলকে। এই ২৫ জনকে নিয়েই বাংলাদদেশ দল কাঠমান্ডু যাবে। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৩ মার্চ কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব–২৩ দলের সঙ্গে। ২৭ মার্চ দ্বিতীয় ও শেষ গ্রুপ ম্যাচ নেপালের বিপক্ষে। ফাইনাল ২৯ মার্চ।
কিরগিজস্তান অলিম্পিক দলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ হারলে ফাইনালে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে। তবে কোচ জেমি ডে মনে করেন সুযোগ তখনো থাকবে। সেই সুযোগ নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে বাংলাদেশ। তবে কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব–২৩ দলকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রাখছেন কোচ। বলছেন, ‘ওরা অলিম্পিক টিম হলেও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে আমি বলব, আমাদের জিততে হবে।’
জেমি তাকিয়ে তরুণদের দিকেই, ‘আমি আসলে ফলাফলের ওপর চোখ রাখছি না। আমি ভাবছি বরং অন্য। আমরা কীভাবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য তৈরি হতে পারি, সেটাই ভাবছি।’ দলে ডাক পাওয়া ৫ নতুন ফুটবলারকে অনুশীলনে দেখে তাঁর ভালো লেগেছে জানিয়ে কোচের সংযাজন, ‘দারুণ লেগেছে নতুনদের দেখে। ওরা সবাই খুব আগ্রহী এবং ভালো কিছু করতে মুখিয়ে আছে।’
সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসও সুর মেলান কোচের সঙ্গে। বাংলাদেশের জন্য এই সফর নতুনদের সুযোগ দেওয়া জানিয়ে ওয়াটকিসের কথা, ‘নেপালে আমরা যাব, ভালো কথা। কিন্তু সবাই ফলাফলকেই মূল বিষয় ভাববেন না দয়া করে। আমরা জিততে মরিয়া থাকব, সেটা ঠিক আছে। তবে সবার উচিত বৃহত্তর ছবিটা দেখা। জুনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আমাদের জন্য অনেক অনেক কঠিন। সেটা নিয়েই আমাদের অনেক বেশি ভাবতে হবে এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া চাই।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে ৭ মার্চ। ফুটবলারদের ফিটনেস সমস্যা নেই। সবাই ফিট আছে উল্লেখ করে কোচ বলছেন, ‘আমাদের জন্য এটা ভালো খবর যে ফুটবলাররা খেলার মধ্যে থাকায় সবাই ফিট আছে। নিশ্চয়ই সেটা আমাদের ভালো খেলতে সাহায্য করবে। এটা ভালো দিক।’
২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসে সোনা জয়ের পর ফুটবলে বড় কোনো সাফল্য নেই। তাই নেপালের এই টুর্নামেন্ট জেতা উচিত মনে করছেন অনেকেই। জেমি ডে নিজে কী মনে করছেন? প্রশ্ন শুনে হেসে দেন কোচ। বলেন, ‘আমার মূল মনোযোগ টুর্নামেন্ট জেতার দিকে নয়। আমার মনোযোগ দল তৈরি করা। সেটাই আমরা করব। টুর্নামেন্টটা না জিতলে হতাশার কিছু নেই। ফুটবলাররা অভিজ্ঞতা পাবে, সেটাই বরং জুনে আমাদের বেশি কাজে আসবে।’