শৈলকুপায় নির্বাচনী সহিংসতায় প্রার্থীর ভাই খুন

শৈলকুপায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে লিয়াকত আলী বল্টু নামে একজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন। উপজেলা শহরের কবিরপুর এলাকায় বুধবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পথসভায় গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও অপর প্রার্থী আলমগীর হোসেন খান বাবুর সর্মথকরা কবিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে আহত হন প্রার্থী শওকত আলীর ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী বল্টু।  কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। লিয়াকতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এ ঘটনায় পরে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাত ১১ টার দিকে পুলিশ সুপার মো. মুনতাসিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত লিয়াকত আলী বল্টু ১৩নং উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শওকত আলীর সমর্থক নজরুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে লিয়াকত আলী বল্টু গলির ভেতর পড়ে যান। এসময় আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

রাজশাহীতে গুলি ও বোমা হামলা: রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। আড়ানী পৌর সদরের তালতলা বাজারে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী শহিদুজ্জামান শাহিদের পথসভায় গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এছাড়া তালতলা বাজারে শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট হয়েছে। মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিদের ভাগ্নে তুষার (২৮) আহত হয়েছেন। তালতলা বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবারও রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

এর আগে ৮ জানুয়ারি মুক্তারের সমর্থকরা মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বড়পুকুরিয়ায় দুর্নীতি মামলায় সাবেক ৬ এমডিসহ ২২ জন কারাগারে

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে ২৪৩ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতির মামলায় সাবেক ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার দিনাজপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল করিম এ আদেশ দেন।

ওই ছয় সাবেক এমডি হলেন মো. আবদুল আজীজ খান, খুরশিদ আলম, কামরুজ্জামন, মো. আনিসুজ্জামান, এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব ও হাবিব উদ্দিন আহমেদ।

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মহাব্যবস্থাপক শরিফুল আলম, মো. আবুল কাশেম প্রধানিয়া ও আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মো. আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান, উপব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান, মো. মোর্শেদুজ্জামান, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ ও মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপক সোহেবুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম খাদেমুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার এবং উপমহাব্যবস্থাপক মো. জোবায়ের আলী।

আজ দুপুরে ওই আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তখন এ আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

 

ওই কয়লাখনিতে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। এর আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা।

এজাহার থেকে জানা যায়, ওই কয়লাখনিতে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। এর আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। দুদকের উপপরিচালক সামসুল আলম মামলাটির তদন্ত পরিচালনা করেন।

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সাবেক সাতজন এমডিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, আসামিরা ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঘাটতি ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাৎ করেন। তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগপত্রে এজাহারনামীয় ছাড়াও ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় পাঁচজনকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসামি সাবেক এমডি মো. মাহবুবুর রহমান মারা যান।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, আসামিদের বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলায় ৭৫ কেজির বাগাড়

পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে নতুন ধানের চাল গুঁড়া করার ধুম পড়ে, ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানান স্বাদের পিঠাপুলি। নদীমাতৃক গ্রামবাংলার কোথাও এখনো দিনটিতে বসে জমজমাট মাছের মেলা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সে রকমই এক মাছের মেলায় সাড়া ফেলে দিয়েছে ৭৫ কেজির এক বাগাড়। বিক্রেতা মাছটির দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা!

যুগ যুগের ঐতিহ্য মেনে দিনব্যাপী এ মেলা বসেছে আজ বুধবার শ্রীমঙ্গল শহরের নতুন বাজারে। পৌষসংক্রান্তি কাল বৃহস্পতিবার হলেও পুরো মৌলভীবাজারে বিভিন্ন স্থানে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই বসতে শুরু করেছে পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা। এসব মেলায় দূরদূরান্ত থেকে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় সব মাছ। এর বেশির ভাগই নদী-হাওর-পুকুরের দেশি মাছ। কোনো কোনোটি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের।

আজকের মেলায় এ রকমই একটি এই ৭৫ কেজির বাগাড়। মেলায় আসা সব মাছের মধ্যে সবার আকর্ষণ হয়ে উঠেছে বিশাল এই মাছ। মাছটি বাজারে এনেছেন হাফিজ আহমেদ নামের এক মাছ বিক্রেতা। দুপুর পর্যন্ত এই বাগাড়ের দাম উঠেছে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রেতা হাফিজ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা না হলে মাছটি বিক্রি করবেন না পণ করেছেন। প্রত্যেকে একবার হলেও মাছটির কাছে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কেনার সাধ্য না থাকলেও নজর বোলাতে তো অসুবিধা নেই!

পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়।

হাফিজ বলেন, তাঁর আনা বাগাড় মাছটির ওজন ৭৫ কেজি। এই মাছটি মেঘনা নদী থেকে ধরা হয়েছে। মাছটির দাম ৮০ হাজার টাকা উঠলেও আরও বেশি দামে বিক্রির অপেক্ষায় আছেন তিনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাবেন বলে তিনি মনে করছেন।

সকালে মাছবাজারে দেখা যায়, বাগাড়টি ছাড়াও বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া রয়েছে বাগাড়, চিতল, আইড়, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। ক্রেতা ও বিক্রেতার আগমনে জমে উঠেছে মাছের এই মেলা। উৎসবমুখর পরিবেশে একেকজন ক্রেতা মাছ কিনে হাসিমুখে হাঁটা ধরছেন বাড়ির পথ।

জোনাইদ মিয়া নামের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল মাছবাজারে বড় বড় মাছ উঠেছে। এ মাছগুলো হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর ও মেঘনা নদী থেকে আনা হয়েছে।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

সনেট দেব চৌধুরী নামের এক ক্রেতা বলেন, সারা বছরের তুলনায় পৌষসংক্রান্তিতেই বেশি মাছ আসে। দূরদূরান্ত থেকে এখানে মাছ নিয়ে আসা হয়। এত বড় বড় মাছ একসঙ্গে সব সময় বাজারে ওঠে না। এই সময়ই পাওয়া যায় বলে ক্রেতা সমাগমও বেশি।

পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা বসেছে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, শহীদনগর ও মুন্সীবাজারেও। মুন্সীবাজারে মাছের মেলা বসেছিল গতকাল। আজ সকাল থেকে মাছের মেলা বসেছে শমশেরনগর ও শহীদনগরে। সকাল থেকেই এই দুই মাছের মেলায় লেগেছে প্রচণ্ড ভিড়।

করোনা সংক্রমণের কারণে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ মাছের মেলাটি এবার বসছে না। তাই এবার শমশেরনগরে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

সকালে শমশেরনগর মাছের মেলায় এক কোণে দেখা যায়, আড়তদার জোরে জোরে হাঁক দিচ্ছেন মাছের দাম। খুচরা বিক্রেতারা এসে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের মাছ। আড়তদারের কাছে খুচরা ক্রেতাদের কেনার সুযোগ নেই। পাইকারি মাছ কিনে বিক্রেতারা তাঁদের থালায় সাজিয়েছেন বড় আকারের রুই, চিতল, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, বাউশ, গ্রাস কার্প, বোয়াল, পাবদা, শোল, গজার, তেলাপিয়া, আইড়, কমন কার্প (কার্পু), বাঘ মাছসহ নানা জাতের মাছ। মেলায় সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের রুই, বোয়াল, চিতল, কার্প, আইড় ও বাঘ মাছ উঠেছে।

এসব বড় মাছের একেকটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে কেজি হিসাবে চাচ্ছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। শমশেরনগর মাছের মেলায় আসা ক্রেতা অলক সাহা ও বাচ্চু সেন শর্ম্মা বলেন, পৌষসংক্রান্তিতে বাসায় তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠাপুলি। তার সঙ্গে মেলা থেকে বড় আকারের পছন্দের মাছ না কিনলে উৎসব জমে না।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

একই কথা জানান স্বপন ও সুজিত দেবনাথ নামের আরও দুই ক্রেতা। তাঁরা বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ মাছের মেলাটি এবার বসছে না। তাই এবার শমশেরনগরে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

মাছের মেলায় দেখা যায়, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা পছন্দমতো বড় আকারের মাছ কিনছেন। আর স্বল্প আয়ের মানুষজন তুলনামূলক ছোট আকারের মাছ কিনছেন।
শমশেরনগর মাছের মেলায় মাছ বিক্রেতা মানিক মিয়া ও আবদুল মন্নান জানান, পৌষসংক্রান্তি কাল হলেও এখানে আজ গভীর রাত পর্যন্ত এক দিনব্যাপী মাছের মেলা থাকবে। দেশের বিভিন্ন হাওর অঞ্চল, ভৈরব, চাঁদপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এখানে মাছ আনা হয়েছে।

মুন্সীবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সাপ্তাহিক হাটবার বলে সেখানে সেদিনই এক দিনের মাছের মেলা বসেছিল। পতনঊষার ইউনিয়নের শহীদনগর বাজারেও আজ ছোট আকারে পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা বসেছে।

নকল দম্পতির গল্প নিয়ে নাটক

বিয়ে না করেও স্বামী-স্ত্রী সেজে বাসা ভাড়া নিয়েছেন, এমন এক দম্পতিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটক ‘ব্যাচেলর ভাড়া হয় না’। মাহমুদুল হাসানের গল্পভাবনা থেকে নাটকের চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তৌহিদ আশরাফ।

নাটকটিতে নকল দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান ও নিশাত প্রিয়ম। এই জুটির পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়নাল জ্যাক, সাফিজ মামুন, কাজী জাকির প্রমুখ।

নির্মাতা জানান, নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে রাজধানীতে আসা রোহান ও অন্তি নামের দুই তরুণ-তরুণীকে নিয়ে। যারা ব্যাচেলর হওয়ার কারণে কোনো বাসা ভাড়া নিতে পারছেন না। এই বাসা খুঁজতে গিয়েই রোহানের সঙ্গে অন্তির পরিচয়। সমস্যা সমাধানে একজনের পরামর্শে তারা নকল স্বামী-স্ত্রী সাজেন। পেয়েও যান বাসা। একসঙ্গে দম্পতি সেজে থাকা শুরু করেন তারা। হঠাৎ একদিন রোহানের অসুস্থ বাবা ঢাকায় আসেন চিকিৎসার জন্য। তারপরেই কাহিনি মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। এমন গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকটি শিগগিরই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে বলেও নির্মাতা জানান।

খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খাবেন যেসব কারণে

থানকুনি পাতা অতি পরিচিত। সাধারণত পুকুর পাড় বা জলাশয়ে এ পাতা দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই পেটের রোগ সারাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করেন। তবে অনেকের হয়তো জানা নেই, ভেষজ উপাদানে ভরপুর থানকুনি পাতা পেটের রোগ সারাতে দারুণ কার্যকরী। বিশেষ করে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ সারাতে থানকুনি পাতার জুড়ি নেই। নিয়মিত এই পাতার রস খেলে আরো যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-

ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায় : শুধু পেটই নয়, আলসার, অ্যাজমাসহ নানা চর্মরোগ সারাতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। এতে ত্বকের সজীবতা বাড়ে। প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায় থানকুনি পাতা। কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে : থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেনটাসাইক্লিক ট্রিটারপেন্স নামের  একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এতে মস্তিষ্কের সেলের ক্ষমতা বেড়ে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বয়স্ক মানুষরাও যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খান, তা হলে শেষ বয়সে অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে এই পাতার রস।

অনিদ্রার সমস্যা দূর হয় : থানকুনি পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি মানসিক চাপ কমায়। সেই সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা কমে যায়। এছাড়া বয়স বাড়লেও, ত্বকে তারুণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে।

শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে : শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সাহায্য করে থানকুনি পাতা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে যদি ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এতে শরীর সুস্থ থােক।  সূত্র : এই সময়

চট্টগ্রামে ধর্ষণের শিকার হওয়া ৬৪ শতাংশই শিশু-কিশোরী

কন্যাশিশুটির বয়স পাঁচ বছর। বাবা রিকশাচালক। মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। ঘরে একাই থাকে শিশুটি। প্রতিবেশী এক নারী শিশুটিকে দেখাশোনা করেন। সারা দিন বাসায় একা থাকা শিশুটির মন চায় খেলতে। বাসার পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে শিকার হয় ধর্ষণের। স্থানীয় লোকজন ধর্ষণের অভিযোগে নির্মল চন্দ্র নামের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে দেন। কিন্তু ‘দায়সারা’ তদন্ত শেষে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

গত বছরের ৪ মে বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছিল। দুই দিন পর ৭ মে শিশুটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেয়। সেখানে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয় সে। এ ছাড়া শিশুটির বাবা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় নির্মলকে আসামি করে মামলা করেন। শারীরিক পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা প্রতিবেদন দিয়েছেন, শিশুটি ধর্ষিত হয়েছে। শিশুটির ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করে পুলিশ। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির সঙ্গে নমুনা মিলিয়ে দেখেননি তদন্ত কর্মকর্তা।

সাঈদ খোকনের ‘মানহানিকর বক্তব্যে’ আইনি ব্যবস্থা নেবেন তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বক্তব্যকে মানহানিকর উল্লেখ করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর মানিকনগর এলাকার স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

তাপস বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাঁর বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুঁটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি।’

আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না, এ প্রশ্নে তাপস বলেন, মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।

তাপসকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল ছিল জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এর আগেই ৯ তারিখে আমরা লক্ষ করলাম, তিনি (সাঈদ খোকন) ঘটা করে একটা সভা ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করলেন। আমার মনে হয়, এটা ওনার ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।’

গত শনিবার দুপুরে হাইকোর্ট এলাকায় আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নানা অভিযোগ তোলেন শেখ তাপসের বিরুদ্ধে। সাঈদ খোকনের এসব অভিযোগের বিষয়ে গতকাল রোববার তাপস বলেন, ‘কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু বলে থাকেন, সেটার জবাব আমি দায়িত্বশীল পদে থেকে দেওয়াটা সমীচীন মনে করি না।’ গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস 

ঢাকা দক্ষিণের সাবেক ও বর্তমান মেয়রের এই বাদানুবাদ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়। আজ আবার সাঈদ খোকনের বক্তব্য নিয়ে বলেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৭ মে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করেছি। সেখানে আপনারা লক্ষ করেছেন, মার্কেটসংক্রান্ত কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংবাদকর্মীরা আপনারাই সেগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছেন। সেখানে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়েছে। যাঁদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়েছে, যাঁরা লেনদেন করেছেন, তাঁরাই অভিযোগ এনেছেন।’

তাপস বলেন, ‘আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনোভাবেই কোনো অভিযোগ আনিনি। যেসব ব্যবসায়ী ও দোকানদারের অবৈধ দখলে জায়গাগুলো দখলে ছিল, তাঁরা অর্থ লেনদেন করেছেন। এখন তিনি পুরো দোষ আমার ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। সেটা আমি মনে করি খুবই অনভিপ্রেত।‌ শুধু আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তিনি এই বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।’

পুরান ঢাকায় ঘুড়ি কিনতে ঘোরাঘুরি

পুরান ঢাকার অলিগলিতে চলছে ‍ঘুড়ি-নাটাই বেচাকেনা। ১৪ জানুয়ারি পুরান ঢাকায় ঘুড়ি ওড়ানোর সাকরাইন উৎসব। করোনা সংক্রমণের মধ্যে উৎসব আয়োজনে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। উৎসবটি এখন শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানীতে বসবাসকারী সব মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনকি ঢাকার বাইরেও এটি উদ্‌যাপন করা হয়।

বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। এটি ঘুড়ি উৎসব বা পৌষসংক্রান্তি নামেও পরিচিত। পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার সূত্রাপুর এলাকায় এবং পরদিন শুক্রবার শাঁখারীবাজার এলাকায় এ উৎসব উদ্‌যাপন করা হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সাকরাইনে নতুন চালের পিঠাপুলি খেয়ে, ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উৎসব করার রেওয়াজ বহু পুরোনো। কালের আবর্তনে উৎসবে এসেছে পরিবর্তন। উৎসবের দিন ভোরের কুয়াশার আবছায়ায়ই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুশ। শেষ বিকেলে শীতের হাওয়ায় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। আর সন্ধ্যায় আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি আর ফানুসে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। এ ছাড়া উৎসবের দিনদুপুরে মন্দিরগুলোয় হবে, ‘বুড়ো-বুড়ি’ পূজা।

পুরান ঢাকায় ঘুড়ি কিনতে ঘোরাঘুরি

ফাইল ছবি।

করোনা পরিস্থিতিতে উৎসব একইভাবে হবে কি না জানতে চাইলে শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি-নাটাই কিনতে আসা অরূপ কুমার বলেন, বাড়ির ছাদে আর নিজেদের মধ্যে উৎসব উদ্‌যাপন করায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম।

শরৎ কুমার ও তাঁর বন্ধুরা বলেন, ঘুড়ি ও সুতা, আবির, আতশবাজি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস কেনা হয়েছে। দাম আগের বছরের মতোই আছে। আগে সুতা কিনে মাঞ্জা দিতে হতো। এখন মাঞ্জা দেওয়া বিদেশি সুতা কিনতে পাওয়া যায়।
গতকাল রোববার পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, নারিন্দা, সূত্রাপুর, লালবাগ এলাকায় ঘুরে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চোখে পড়ে। পাড়া ও মহল্লার ছোট দোকানেও বিক্রি করা হচ্ছে ঘুড়ি। অনেকেই আবার উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি বিক্রির মৌসুমি ব্যবসা শুরু করেছেন।

দোকানদারেরা জানালেন, চোখদার, পানদার, কথাদার, মালাদার, পঙ্খিরাজ, চলনদার, পেটিদার, পাংদার, প্রজাপতি, দাপস, বাদুড়, চিলসহ নানান নামের বিভিন্ন নকশা ও আকৃতির ঘুড়ি পাওয়া যায়। সাধারণ ঘুড়িগুলো আকৃতি ভেদে ৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। বিভিন্ন নকশা ও বিদেশি ঘুড়িগুলোর দাম ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। নাটাইয়ের দাম ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। মাঞ্জা দেওয়া ভারত বা চীনের সুতার দাম এক হাজার গজের দাম পড়ে ১৫০ টাকা। তবে পরিমাণে বেশি নিলে দামও কমে।

পুরান ঢাকায় ঘুড়ি কিনতে ঘোরাঘুরি

ফাইল ছবি।

১৯ নম্বর শাঁখারীবাজারের সুর ঘুড়িঘরের স্বত্বাধিকারী মোহন সুর জানালেন, গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেচাবিক্রি কম। দাম আগের মতোই আছে। তবে ক্রেতা কম থাকায় এবার কম লাভেই ঘুড়ি-নাটাই বিক্রি করা হচ্ছে। সাকরাইনের আগে বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে।

উৎসব
আয়োজন করবে সিটি করপোরেশন:

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো এই উৎসব আয়োজন করছে। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগান সামনে রেখে সংস্থাটির ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটি সব ওয়ার্ডে উৎসব পালন করবে। বেলা দুইটা থেকে শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত উৎসব চলবে।

আয়োজন সম্পর্কে কমিটির সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐতিহ্যগুলোকে উৎসবে পরিণত করা। মৌলবাদ, মাদক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি থেকে যুবসমাজকে সরিয়ে আনার জন্য এই আয়োজন। এ ছাড়া কমিটির পক্ষ থেকে বছরব্যাপী নয়টি কর্মসূচির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, খেলাধুলা ও ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করা হবে।’

ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফাইজারের টিকা পাওয়ার সুযোগ

বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশের করোনার টিকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের এই টিকা নিতে চায় কি না, তা ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের ১৯২টি সদস্যদেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জানুয়ারির শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে স্বল্পসংখ্যক টিকা দেওয়া হবে। তারা বলছে, এটা টিকা বিতরণের ‘প্রথম ঢেউ’। এই টিকা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একা নিতে পারে না। এ চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছ থেকেই আসবে।’

জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার বাণিজ্যিক নাম ‘কমিরনাটি’। যুক্তরাজ্য প্রথম এই টিকার অনুমোদন দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এখন টিকাটির প্রয়োগ চলছে। এটি প্রয়োগের জন্য যে সুই-সিরিঞ্জ দরকার হয়, তা প্রচলিত সুই-সিরিঞ্জের চেয়ে আলাদা। এই টিকা তীব্র শীতল তাপমাত্রায় রাখার দরকার হয়। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা না হলে টিকার গুণ নষ্ট হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বল্পমূল্যে টিকা দেওয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই) নেতৃত্বে করোনার টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স গড়ে উঠেছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংকসহ অনেক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থা এ উদ্যোগে অর্থসহায়তা দিচ্ছে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে কোভ্যাক্স থেকে টিকা সহায়তা দেওয়া হবে।

কোভ্যাক্সের পক্ষে সদস্যদেশগুলোকে চিঠি দিয়েছেন গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেথ বার্কলি। তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি বলেছেন, ওষুধ কোম্পানি ফাইজার এবং যেসব দেশ ফাইজারের টিকা সংগ্রহ করেছে, তাদের সঙ্গে কোভ্যাক্স টিকার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। তার ভিত্তিতে কোভ্যাক্স জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারিতে সদস্যদেশগুলোকে টিকা দিতে পারবে।

চিঠিতে কিছু শর্তের কথা উল্লেখ আছে: এই টিকা ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে, জাতীয় করোনা টিকা পরিকল্পনায় একাধিক ধরনের টিকা ব্যবহারের ইচ্ছার প্রকাশ থাকতে হবে। এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইজারের টিকার অনুমোদন করাতে হবে। তার সঙ্গে ফাইজারের দায়মুক্তির একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চিঠিতে কিছু সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সদস্যদেশগুলোকে আগ্রহের বিষয়টি কোভ্যাক্সকে জানাতে হবে। ১৯ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ বা গ্যাভি সংশ্লিষ্ট দেশের আগ্রহপত্র ও অবকাঠামো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। তারা ২৯ জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ঢেউয়ের টিকা বিতরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে এবং সদস্যদেশগুলোকে জানিয়ে দেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইজারের টিকার জন্য যে ধরনের ‘কোল্ড চেইন’ বা হিম শৃঙ্খল দরকার, তা বাংলাদেশে নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কিছু রেফ্রিজারেটর আছে, যেখানে তীব্র শীতল তাপমাত্রায় এ ধরনের টিকা রাখা সম্ভব। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এই টিকা আনলে ঢাকা শহরের কিছু মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ন্যায্যতার কথা বলা হচ্ছে, তা এ ক্ষেত্রে বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’

জানা গেছে, বিএসএমএমইউ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) এ ধরনের রেফ্রিজারেটর আছে। তা ছাড়া আরও প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় হাসপাতালে এ ধরনের রেফ্রিজারেটর থাকার সম্ভাবনা আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, চিঠি পাওয়ার পর থেকেই কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রেফ্রিজারেটর কেনা সম্ভব কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহায়তা চাইবে। আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে টিকা বিষয়ে একটি সভা আছে, সেই সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু প্রায় ১৯ লাখ

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ২১৩ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৯ জনের। আর এ পর্যন্ত সেরে উঠেছেন ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ১০১ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩ জন। আর এই মহামারিতে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৪ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৪৯৮ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৭৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৬ জনের।

মৃত্যু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকো চতুর্থ স্থানে থাকলেও আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ১৩ নম্বরে। মেক্সিকোতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১ জনের।

যুক্তরাজ্য মৃত্যু ও আক্রান্ত বিবেচনায় রয়েছে পঞ্চম স্থানে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৮ হাজার ৬৩২ জনের।

আক্রান্ত বিবেচনায় চতুর্থ এবং মৃতের সংখ্যায় অষ্টম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ হাজার ৬২৮ জনের।

মৃত্যুর দিক দিয়ে ষষ্ঠ এবং আক্রান্তের সংখ্যায় অষ্টম স্থানে রয়েছে ইতালি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লাখ ২০ হাজার ৩৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৭ হাজার ২৯১ জনের।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৯১টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।