স্যুটের ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন

ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন সম্পর্কে আমরা তেমন করে জানি না। স্যুট-প্যান্ট বা শার্টের কাপড় কিনতে গেলে সব সময় একরঙা কাপড় কিনতেই তাঁরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, বেশির ভাগ ছেলেরাই ভাবেন, এতে মিক্স ও ম্যাচ করা সহজ; আর প্যাটার্নড ফ্যাব্রিকে তা কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। ধারণাটি একদম ভুল। একরঙা কাপড়ের একঘেয়েমি এড়াতে প্যাটার্নড ফ্যাব্রিকের কোনো বিকল্প নেই। প্যাটার্ন কাপড় কেনার সময় এর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি, কারণ, এটি লুক ও ব্যক্তিত্বে বেশ বড় একটি প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন কিছু স্যুট প্যাটার্ন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পিনস্ট্রাইপ
বিজনেস স্যুটের জন্য এটি খুব ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন। পিনস্ট্রাইপ খুব সরু হয়ে থাকে। সাধারণত এক রঙের কাপড়ের ওপর সাদা অথবা ধূসর রঙের লাইন দিয়ে স্ট্রাইপ করা হয়। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লম্বালম্বি থাকে এটি। স্যুট ও শার্টে এ প্যাটার্ন দেখা যায় বেশি। যাঁরা গঠনে খাটো ও মোটা, তাঁদের পিনস্ট্রাইপের প্যাটার্নের পোশাকে লম্বা ও চিকন দেখায়।

চক স্ট্রাইপ
পিনস্ট্রাইপেরই আরেকটি ধরন হলো ‘চক স্ট্রাইপ’। লম্বালম্বি হলেও এর লাইনগুলো বেশ মোটা ও ফাঁকা ফাঁকা হয়ে থাকে। সেমি ফরমাল স্যুটে এই প্যাটার্ন বেশি দেখা যায়। যাঁদের গঠন চিকন, তাঁদের জন্য এটি বেশ ভালো।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি
ছবি: এমরে কেশাভাপজ, পেকজেলসডটম

সেলফ স্ট্রাইপ
এ স্ট্রাইপ কাপড়ের রঙেই হয়ে থাকে। তবে আরও সূক্ষ্ম। কাপড় বোনার সময় এ প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। ফরমাল অনুষ্ঠানের স্যুট ও প্যান্টে এ ফ্যাব্রিক প্যাটার্ন ব্যবহার করা যায়।

ক্রসহ্যাচ
এক রঙের কাপড়ে এটি দেখা যায়। দেখলে মনে হয়, কাপড়ের ওপর আড়াআড়ি বা লম্বালম্বি কিংবা সমান্তরালভাবে ব্রাশের হালকা রেখা টানা হয়েছে। একসময় ক্ল্যাসিক ধূসর বা চারকোল স্যুটে প্যাটার্নটি বেশি দেখা যেত। এখন অন্য অনেক রঙের স্যুটের পাশাপাশি ডেনিম ফ্যাব্রিকেও ক্রসহ্যাচ প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে।

হেরিংবোন
এটি খুবই ক্যাজুয়াল একটি প্যাটার্ন। ভারী উল বা টুইডের মতো ঘন বুননের কাপড়ে এটি দেখা যায়। ভি শেপের কন্ট্রাস্টিং এ প্যাটার্ন দেখতে হেরিং মাছের কাঁটার মতো। তাই এ প্যাটার্নকে হেরিং বোন বলা হয়। এটি ক্যাজুয়াল স্যুট ও স্পোর্টস জ্যাকেটে বেশি ব্যবহৃত হয়। এ প্যাটার্নের কোট বা জ্যাকেট জিনসের সঙ্গে ভালো মানায়

হেরিংবোন প্যাটার্ন

হেরিংবোন প্যাটার্ন
ছবি: উইকিপিডিয়া

বার্লিকর্ন
গরম ও আরামদায়ক ভারী টুইড কাপড়ে বার্লিকর্ন বেশি ব্যবহৃত হয়। এ প্যাটার্নের কাপড়ের বুনন খুব ঘন ও মজবুত। এটি ছোট গোল বা ওভাল শেপের হয়ে থাকে। যেসব স্পোর্টস জ্যাকেট, হ্যাট বা ব্যাগ টুইড কাপড়ে তৈরি, সেগুলোয় এ প্যাটার্ন দেখা যায়।

বার্ডস আই ও নেইলহেড
প্রায় বার্লিকর্নের মতো দেখতে এ প্যাটার্ন দুটি খুব সূক্ষ্ম বুননের হালকা কাপড়ে দেখা যায়। বার্ডস আই ছোট গোলাকার আর নেইলহেড ছোট চারকোনা শেপ। দূর থেকে এ প্যাটার্নের কাপড়গুলোকে সলিড কালারের মনে হয় কিন্তু কাছে গেলে ক্ষুদ্র টেক্সার ডটগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই এ প্যাটার্নের কাপড় ফরমাল স্যুট বানানোর জন্য বেশ ভালো।

পরিস্কার করে কিছু বললেন না বুবলি

চিত্রনায়িকা বুবলি অন্তঃসত্ত্বা এমন খবার গত বছরের শুরুতে ছড়িয়েছিল। কেউ বলেছেন, সন্তান জন্ম দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন। সন্তানের বাবা কে এ নিয়ে বিভিন্ন কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেকে চলচ্চিত্রের একজন শীর্ষ নায়কের সাথে বুবলির বিয়ে এবং সন্তান হওয়ার কথা বলেন। ফলে বিষয়টি অনেকটা রহস্যাবৃত হয়ে পড়ে। প্রায় দশ মাসের বেশি সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা বুবলী সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলতে শুরু করেছেন। তাকে নিয়ে গুঞ্জণ বিষয়ে বলেছেন, এখন আমি নিজ বাসা উত্তরাতে আছি। চলচ্চিত্র সম্পর্কিত একটি কোর্স করতে গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলাম। তিন মাসের কোর্স থাকলেও লকডাউন থাকায় আটকে পড়ি। এজন্য এতদিন আমাকে দেখা যায়নি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বুবলী সরাসরি কিছু না বলে বলেন, সময়ের সঙ্গে সবকিছুই পরিষ্কার হবে। আমরা যারা বিনোদন অঙ্গনে কাজ করি, কাজের জন্য সবাই আমাদের ভালোবাসেন। তাই আমিও চাই না, ব্যক্তিগত জীবন কাজের চেয়ে বেশি প্রকাশিত হোক। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমি এভাবে চলার চেষ্টা করেছি। একতরফা অনেকে অনেক কিছুই শোনা যায়। এটাও ঠিক, আমরা যারা বিনোদন অঙ্গনে কাজ করি, তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও অনেকে অনেক কিছু জানতে চান। সেই চাওয়া ও আগ্রহকে অবশ্যই সম্মান করি। তাই বলে কল্পকাহিনী ছড়ানো ঠিক নয়। সবকিছু একটা নির্দিষ্ট সময় পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়। বুবলি বলেন, গল্পের পেছনেও অনেক গল্প থাকে, তাই আমরা আপাতত ওসবে কান না দিই। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টর বলছেন, বুবলির এমন ধোঁয়াশাচ্ছন্ন কথায় তার বিয়ে এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি পরিস্কার হয়নি। যদি এই গুঞ্জণের কোনো ভিত্তি না থাকত, তাহলে তিনি সরাসরি তা নাকচ করে দিতে পারতেন। তিনি তা করেননি। এ থেকে বোঝা যায়, বিয়ে হোক আর অন্তঃসত্ত্বা হোক, তার কিছু না কিছু হয়েছে।

কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন বেনজেমা

এক ‘সেক্সটেপ’ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে ফ্রান্স ফুটবল অধ্যায় প্রায় শেষ করে ফেলেছেন করিম বেনজেমা। তদন্তে আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত এই স্ট্রাইকারের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন তার বিরুদ্ধে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ তারকাকে।

karim benzema 2020 21 1করিম বেনজেমা

এই কেলেঙ্কারির কারণে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্রান্স জাতীয় দল থেকে দূরে আছেন বেনজেমা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘সেক্সটেপ‘ ইস্যুতে সতীর্থ ফুটবলার ম্যাথু ভালবুয়েনাকে হুমকি দিয়েছেন। এরপর ফরাসি ফুটবলের প্রধানকর্তা নোয়েল লে গ্রাত বেনজেমার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরার আভাস দেন।

যদিও পরবর্তীতে সুর পাল্টান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় বেনজেমার ফ্রান্স দলের দরজা। এরপর অন্য দেশের হয়ে খেলার আবেদন জানান তিনি। বেনজেমার কাছে অবশ্য ঐচ্ছিকতা অনেক আগেই এসেছিল। ২০০৬ সালে আলজেরিয়ার হয়ে আফ্রিকান নেশনস কাপ খেলার সুযোগ ছিল তার। যদিও বেনজেমা বেছে নেন ফ্রান্সকে।

benzema and zidaneকোচের সঙ্গে খুনসুটি

এখন সেই আলজেরিয়ার হয়েই খেলার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ যাত্রায় তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা মামলার মারপ্যাচ। যেখানে অনেকটাই গেঁথে গেছেন তিনি। খুব শিগগিরই বেনজেমার ট্রায়াল শুরু হবে আদালতে। তার আইনজীবীর দাবি, রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার কাউকে কোনো ধরনের হুমকি দেননি এবং সেক্সটেপে তার সম্পৃক্ততা নেই।

বৃহস্পতিবার ফরাসি গণমাধ্যম এল’ইকুইপকে বেনজেমার আইনজীবী পল-আলবার্ট লেভিন্স বলেছেন, ‘তার বিচার করার সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অন্যায় এবং নিষ্ঠুরতা। এক্ষেত্রে বেনজেমার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।’ জাতীয় দল থেকে নির্বাসনে যাওয়ার আগে ফ্রান্সের হয়ে ৮১ ম্যাচ খেলেছেন বেনজেমা।

ট্রাম্প আরও কী করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল সত্যায়নের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনের সময় কংগ্রেস ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা, ভাঙচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা কেবল অভূতপূর্বই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় বলেই চিহ্নিত হবে। এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ঐতিহ্য কালিমাময় হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নির্বাচনের আগে থেকে যে ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছে। ট্রাম্প–সমর্থকদের এই আচরণকে সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। কেননা, রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদের লক্ষণগুলোর প্রায় সবই এই হামলার মধ্যে উপস্থিত ছিল। ৩ নভেম্বর মার্কিন নাগরিকেরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে রায় দিয়েছেন, তা পাল্টে দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান ট্রাম্প। তাঁর সমর্থকেরা সেই ইচ্ছা পূরণের জন্যই এই হামলা চালিয়েছেন, সাংবিধানিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছেন। সেই কারণেই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল লোকজন একে বিদ্রোহ এবং অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করছেন। এই বর্ণনা যথোপযুক্ত।

বুধবার সমাবেশ ডেকে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উসকানি দিয়েছেন। যখন তাঁর সমর্থকেরা কংগ্রেস ভবনে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন, সেই সময়ে তিনি নীরব থেকেছেন। যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে আহ্বান জানান এখনই তাঁর সমর্থকদের শান্ত করতে এবং এমনকি রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে, তখন তিনি একটি ভিডিও বার্তা দেন। কিন্তু তাতেও তিনি হামলাকারীদের নিন্দা না করে তাঁদের দেশপ্রেমিক বলে বর্ণনা করেন এবং তাঁদের প্রতি ‘ভালোবাসার’ কথা বলেন। পরে টুইট করে একই ধরনের সমর্থনই ব্যক্ত করেছেন। এই ঘটনাপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর একটি বড় আঘাত। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র গৃহযুদ্ধের পর এতটা প্রত্যক্ষভাবে হামলার শিকার হয়নি। আর সেই হামলা যে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিজেই তৈরি করেছেন, সেটাই আরও বেশি উদ্বেগের।

হামলা ও সন্ত্রাসের এই ঘটনা আপাতদৃষ্টে অভাবনীয় মনে হলেও এটি একার্থে মোটেই বিস্ময়কর নয়। চার বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাম্প যেভাবে এক উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, রিপাবলিকান পার্টিকে তাঁর করায়ত্ত করেছেন, স্বৈরাচারী আচরণ করেছেন, সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন এবং দেশকে বিভক্ত করেছেন, তাতে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় ছিল না। গত গ্রীষ্মকাল থেকে তিনি নির্বাচনের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেসব আয়োজন করেছেন এবং নির্বাচনের পর থেকে জালিয়াতি হয়েছে বলে মিথ্যাচার করেছেন, এই পরিস্থিতি তারই পরিণতি। তাঁর কট্টর সমর্থকদের তিনি তাতিয়ে তুলেছেন নির্বাচনী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেকোনো স্বৈরাচার নেতা যেভাবে তা করেন, ট্রাম্প তা থেকে ভিন্ন আচরণ করেননি। তাঁর সমর্থকদের এখন কার্যত লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করতে।

কিন্তু এই পরিস্থিতির দায় একা ট্রাম্পের নয়। রিপাবলিকান পার্টির যেসব নেতা গত চার বছর তাঁকে এই আচরণ করতে সাহায্য করেছেন, তাঁকে দায়মুক্তি দিয়েছেন, এই অবস্থার দায় তাঁদেরও। বুধবার যা হওয়ার কথা ছিল, সত্যায়নের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। রিপাবলিকান পার্টির যেসব কংগ্রেস সদস্য ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিলাষের কারণে একে ট্রাম্পের ক্ষমতা রক্ষার উপায়ে পরিণত করেছেন, এর দায় তাঁদের। যাঁরা এই মিথ্যাচার অব্যাহতভাবে প্রচার করেছেন যে নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে, এমনকি আদালতে ৬০টি মামলা খারিজের পরও তা থেকে বিরত হননি, এই পরিস্থিতি তৈরির দায় থেকে তাঁরা মুক্ত থাকতে পারেন না। এই হামলার পর যেসব কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্পের হয়ে কংগ্রেসে ফল সত্যায়নে আপত্তি জানিয়ে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের এই আচরণও এখন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেই বিবেচিত হওয়া দরকার।

ভবিষ্যতে ট্রাম্প কী করবেন এবং নিরাপত্তার প্রশ্ন কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আছে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন সময় উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার।

প্রশ্ন হচ্ছে, এরপর কী হবে? এই সন্ত্রাসী ঘটনাই কি শেষ ঘটনা? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এখানেই তার শেষ হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ট্রাম্পের সমর্থক এবং রিপাবলিকান পার্টির একাংশ এই ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রাখবে, যদিও দলের একাংশের মধ্যে এখন সামান্য হলেও বোধোদয় হয়েছে। আশা করা যায় যে যাঁরা এত দিন ট্রাম্পকে ‘শান্তিবাদী’ বলে মনে করতেন—দেশে এবং দেশের বাইরে—তাঁরা বুঝতে পারছেন যে তিনি এবং তাঁর সমর্থকেরা শান্তি নয়, আইনের শাসন নয়, চান যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। এই উদ্বেগের মধ্যেও সান্ত্বনার বিষয় হচ্ছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক প্রত্যাখ্যান করেছেন ২০১৬ সালে এবং ২০২০ সালে আরও বড় আকারে। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একাংশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, কিন্তু ট্রাম্পকেই যুক্তরাষ্ট্র মনে করার কারণ নেই। নাগরিকদের মধ্যে তাঁর আবেদনের যে সীমা আছে, সেটা বিবেচনায় না রাখলে মার্কিন রাজনীতির ভবিষ্যৎ বোঝা যাবে না।

এই হামলার পর কংগ্রেসের যুক্ত অধিবেশন আবার বসেছে সাংবিধানিকভাবে, যে দায়িত্ব কংগ্রেসের ওপর দেওয়া আছে, সদস্যরা তা পালন করেছেন—এটা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর, শাসনকাঠামোর শক্তির প্রমাণ দিচ্ছে। ৩ নভেম্বরের পর রাজ্য সরকারগুলোর কাঠামোগত শক্তি, আদালতের স্বাধীনতার অসংখ্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের অধিবেশন অব্যাহত রাখা এবং জো বাইডেনের বিজয়ের সত্যায়নের প্রক্রিয়ায় জনগণের ভোটের প্রতিফলন ঘটেছে। এই বিষয়েও সন্দেহের কারণ নেই, ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। ট্রাম্প চান অথবা না চান, তাঁর সমর্থকেরা আরও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালালেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে, তার ভঙ্গুরতা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। বুধবারের ঘটনাপ্রবাহ আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা সেই বিষয়ে কী করবেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।

এই প্রশ্নও উঠেছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহ কী ধরনের আচরণ করবেন, গণতন্ত্রের ওপরে সহিংস হামলার যে পথ তিনি উন্মুক্ত করেছেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাবেন। কেননা, ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন বেপরোয়া। নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহার ঘটিয়ে তিনি আবার এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করবেন না বা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে অভ্যুত্থানের চেষ্টা তিনি করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়। তাঁর এবং তাঁর সমর্থকদের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যই হুমকি হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস ভবনের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রীষ্মকালে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বলে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলন মোকাবিলা নির্বিচার শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা দেখা যায়নি, কিন্তু একটি সমাবেশের কথা জানার পরও কোনো রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার ছিল না, সেটা অবশ্যই প্রশ্নের উদ্রেক করে।

ভবিষ্যতে ট্রাম্প কী করবেন এবং নিরাপত্তার প্রশ্ন কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আছে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন সময় উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার।

আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা

নির্বাচনের আগে-পরে তাঁর আচরণ ছিল অসংযত। ভোটের ফল তাঁর পক্ষে না এলে তিনি যে তা মানবেন না, তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মানেনওনি। এমনকি গতকাল জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনে নিজের দুই প্রার্থী হেরে যাওয়ার পরও তা মানতে চাননি। আর এরপর যা হলো, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক কৃষ্ণ অধ্যায়।

খোদ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ রিপাবলিকান পার্টির অনেক বড় নেতার মুখেই শোনা গেল এ কথা। ঠিক সেই হামলার সময় উগ্র সমর্থকদের ফিরে যাওয়ার কথা বলেও অত্যন্ত স্বচ্ছ এ নির্বাচন নিয়ে বিষোদগার করছিলেন। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে গতকাল বুধবার নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটল।

আর এই ঘটনার পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই উসকানি। কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ক্রমাগতভাবে গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিজ সমর্থকদের কান ভারী করে আসছিলেন। উসকানির চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর শত শত উগ্র সমর্থক মার্কিন গণতন্ত্রকে প্রতিনিধিত্ব করা ওই ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ করে একপর্যায়ে হামলাই করে বসলেন।

নির্বাচনে স্পষ্ট ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু হার মানতে নারাজ তিনি। তাঁর দাবির সপক্ষে মিছিল নিয়ে গতকাল ওয়াশিংটনে আসতে তিনি কয়েকবার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে যৌথ অধিবেশন বসে কংগ্রেসের।

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ ডিসেম্বর এক টুইটে লেখেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে ২০২০-এর নির্বাচনে হার মেনে নেওয়াটা অসম্ভব। ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় বিক্ষোভ। সেখানে আসুন। ঝোড়ো বিক্ষোভ হবে!’
প্রেসিডেন্টের কথামতো ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তাঁর হাজারো সমর্থক। তাঁরা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও ফলাফল বাতিলে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ট্রাম্পের ক্যাপিটল ভবন অভিমুখে মিছিল করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

এর আগে হোয়াইট হাউসে দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলে যেতে চলেছি। সেখানে আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও উইমেনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করব।’

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দৃশ্যত এটি ছিল ট্রাম্পের সর্বশেষ জনসভা। সেখানে উপস্থিত হওয়া সমর্থকদের তিনি ‘লড়াইয়ে’ উৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা কখনো হাল ছাড়ব না, কখনো পরাজয় মানব না।’ ডেমোক্র্যাটদের বিজয়কে বাজে কথা বলে আখ্যায়িত করে সমর্থকদের উজ্জীবিত করে তোলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সমর্থকেরাও ‘বাজে কথা, বাজে কথা, বাজে কথা’ বলে স্লোগান দেন।
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ভন্ডুল করতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তাঁর এই চেষ্টায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে সহায়তা করেছে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (চুরি বন্ধ করো)-এর মতো কয়েকটি গ্রুপ।

এসব চেষ্টার চূড়ান্ত রূপ গতকালের হামলা, সহিংসতা। সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প প্রায় ৫০ মিনিট বক্তৃতা দেন। বক্তৃতা চলাকালেই কোনো কোনো সমর্থক দলীয় পতাকা উড়িয়ে ক্যাপিটল হিলের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

পরে ট্রাম্পের উত্তেজিত সমর্থকেরা মিছিল করে ক্যাপিটল ভবনে জড়ো হন। পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে ঝোড়ো গতিতে একেবারে ভবনের ভেতর আইনপ্রণেতাদের অধিবেশনকক্ষে ঢুকে পড়েন। তাঁদের তাণ্ডবে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় যৌথ অধিবেশন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা সরিয়ে নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও অন্য কংগ্রেস সদস্যদের। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। রাত নেমে এলে ক্যাপিটলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তখনো ভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন এই সমর্থকদের অনেকে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন কট্টর ডানপন্থী গ্রুপের সদস্যরাও।

আমরা ক্যাপিটলে যেতে চলেছি। সেখানে আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও উইমেনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করব।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায়

‘আমি জানি আপনারা ব্যথিত’
টেলিভিশনের পর্দায় ওভাল অফিস থেকে সমর্থকদের তাণ্ডব দেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁদের হামলা ও সহিংসতায় ক্যাপিটল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর টুইট করেন তিনি। তাতে বিক্ষোভকারীদের ‘শান্ত থাকা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প এই দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন বলে সমালোচনা শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য তাঁকে আরও কিছু বলার অনুরোধ জানান প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ও হোয়াইট হাউসের কয়েকজন উপদেষ্টা। এমনকি জো বাইডেনকে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠানে আসতে হয়। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা কোনো বিক্ষোভ না, এটা বিদ্রোহ।’ ট্রাম্পের প্রতি এ অবস্থার অবসান ঘটানোর দাবি জানান তিনি।

শেষমেশ ট্রাম্প টুইটারে তাঁর আগে ধারণ করা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা ব্যথিত হয়েছেন। আমাদের এমন এক নির্বাচন হয়েছে, যেখানে আমাদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছিল এক ভূমিধস নির্বাচন।’ মিথ্যা দাবির পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘তবে এখন আপনাদের ঘরে ফিরে যাওয়া দরকার। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’ আরেক বার্তায় তিনি তাঁর উন্মত্ত সমর্থকদের ‘মহান দেশপ্রেমী’ আখ্যায়িত করেন।

আফগানিস্তানে পৃথক হামলায় ১১ জন নিহত

কাতারের রাজধানী দোহায় যখন তালেবান ও সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে, তখন ফের রক্তাক্ত হলো আফগানিস্তান। বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় উরুজগান ও হেলমন্দ প্রদেশে পৃথক হামলায় ৫ বেসামরিক নাগরিকসহ ১১ জন নিহত হয়েছে।

প্রাদেশিক কাউন্সিলের একজন সদস্য এখবর দিয়েছেন। খবর ডন অনলাইনের।

উরুজগান প্রদেশের ওই কাউন্সিল মেম্বার জানিয়েছেন, তিরিনকোটের একটি সামরিক ক্যাম্পে হামলা হয়। তবে নিহতের সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত করে জানাননি তিনি। তবে বিস্ফোরণটা এত শক্তিশালী ছিল যে, এর ধাক্কায় পুরো শহরটাই যেন কেঁপে উঠেছিল বলে জানান। তবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো উরুজগানে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ জন সদস্য নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।

এর আগে বুধবার হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লশকরগাহে ৫ বেসামরিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান আতাউল্লাহ আফগান এ খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিহতদের সবাই নারী ও শিশু।

এসব হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল নবি ইলহাম জানিয়েছেন, কারা দায়ী, সেটা জানতে তদন্ত চলছে।

রাজাপুরে ইয়াবাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঝালকাঠির রাজাপুরের মেডিকেলমোড় এলাকা থেকে ৫০ পিস ইয়বাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন- উপজেলা সদর ইউনিয়নের তুলাতলা গ্রামের মো. সরোয়ারের ছেলে মো. মাইনুল ইসলাম (১৯), আলগী গ্রামের মো. সেকান্দার ভান্ডারীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (২০) ও মো. ইউনুচ হাওলাদারের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২০)।

বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঝালকাঠি আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশাল খুলনা মহাসড়কের মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইমরান হোসেন দীর্ঘ দিন থেকে এলাকায় মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। অপর দু’জন তার সহযোগী।

রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে বুধবার রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার দায়ের করে। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঝালকাঠি আদালতে পাঠানো হয়েছে।

কলাবাগানে ও-লেভেল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা

রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ও-লেভেল পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। নিহত কিশোরীর নাম আনুশকাহ নূর আমিন (১৮)। সে মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ছাত্রী।

এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ আনুশকাহর বন্ধু দিহানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু আনুশকাহকে ধানমন্ডির মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বিকালে হাসপাতালে আনুশকাহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আনুশকাহ শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তার পেটের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস বলেন, ওই ছাত্রীর বাসা ধানমন্ডির সোবহানবাগে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় যায় ওই ছাত্রী। দিহানের বাসা তখন ফাঁকা ছিল। সেখানে ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহান তার তিন বন্ধুকে ফোন করে ডেকে আনে। পরে তারা অসুস্থ ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিকালে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মিয়ানমারে ১০০ রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার

মিয়ানমারের পুলিশ ১০০ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো একথা জানিয়েছে। খবর রয়টার্সের।

স্থানীয় টুমরো নিউজ জার্নাল নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, খালি পায়ের কিছু পুরুষ এবং মাথায় রঙিন স্কার্ফ পরা কিছু লোক আদালত প্রাঙ্গনে মাটিতে বসে আছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকদের বারবার গ্রেপ্তার করা হয়। এদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। এমনকী তাদের রোহিঙ্গা বলেও স্বীকার করে না দেশটির কর্তৃপক্ষ। নিজেদের রাজ্য রাখাইন থেকে পালিয়ে যেতে পারে, এ সন্দেহে সারাক্ষণ নজর রাখা হয় তাদের ওপর।

টিন মং লুইন নামর একজন পুলিশ বলেছেন, শহরের শোয়ে পিই থার এলাকা থেকে এদের আটক করা হয়। এর বেশি কিছু অবশ্য জানাননি ওই পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, এখনো তদন্ত চলছে। ৯৮/৯৯ জনকে আটক করে আনা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে, এ সতর্কতায় তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

ট্রাম্পকে সরানোর প্রাথমিক লক্ষণ?

কট্টর ট্রাম্প সমর্থকেরা যখন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাল, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্লিপ্ত। যেকোনো ধরনের সহিংসতায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের কথা বলা ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ তো নিলেনই না, বরং এমন কিছু যাতে না হয়, তা ঠেকানোরও চেষ্টা করেন। গত দুই শতকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে পড়া মার্কিন রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাঁচাতে তখন মুখ্য ভূমিকাটি রাখলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যাশনাল গার্ড ডাকার যাবতীয় কাজটিও তিনিই করলেন। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংকটকালে প্রকৃত নেতা হয়ে সামনে এলেন পেন্স।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ন্যাশনাল গার্ড নামানোর কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছিল। কিন্তু ৬ জানুয়ারি যখন কট্টর ট্রাম্প-সমর্থকদের কারণে সত্যিকার অর্থেই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রয়োজন পড়ল, তখন ট্রাম্প নিষ্ক্রিয় বসে থাকলেন। এমনকি হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ক্যাপিটল হিল রক্ষায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রশ্ন এলে, তা আটকানোর চেষ্টাও করেছিলেন ট্রাম্প। এ সময় পেন্স সামনে এগিয়ে এলেন। পেন্টাগনের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ তিনিই করলেন। পেন্টাগনকে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানালেন।

ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে এর আগে ১৮১৪ সালে হামলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের সময়। ক্যাপিটল ভবনে হামলার সেই ঘটনার ২০৬ বছর পর এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল খোদ মার্কিনদের হাতেই। এই সংকটকালে প্রেসিডেন্টের নিষ্ক্রিয়তার সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নিজের ভূমিকার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তিনিই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমোদনও তিনিই দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার।

ক্রান্তিকালে প্রেসিডেন্টের বদলে ভাইস প্রেসিডেন্টের এই ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসার কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের যে বিলম্বিত আলোচনায় মন্ত্রিসভা বসেছে, তা বাস্তবায়নের পথে এটি অনেক বড় একটি ইঙ্গিত

ক্রিস্টোফার মিলার বিষয়টি এক বিবৃতির মাধ্যমে জানান। এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে এমনকি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। বরং প্রথম যোগাযোগটিই তিনি করেছিলেন পেন্সের সঙ্গে। কারণ, তাঁর নাম নিয়ে ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের চালানো হামলার নিন্দা তখন পর্যন্ত জানাননি প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় ভরসা পাননি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র।

পেন্সের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি আরেকটি সূত্র থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু দল রিপাবলিকান দলের নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ৬ জানুয়ারি রাতেই জানান, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি এসেছে পেন্সের কাছ থেকে। তিনিই এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছেন।

ক্রান্তিকালে প্রেসিডেন্টের বদলে ভাইস প্রেসিডেন্টের এই ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসার কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের যে বিলম্বিত আলোচনায় মন্ত্রিসভা বসেছে, তা বাস্তবায়নের পথে এটি অনেক বড় একটি ইঙ্গিত। এটা নিশ্চিত যে, ট্রাম্প নিজে থেকে ক্ষমতা পেন্সের হাতে ছাড়বেন না। কিন্তু ক্ষমতার শেষ কিছুদিন ৬ জানুয়ারির নিষ্ক্রিয়তার মতো করে তাঁকে সম্ভবত নিষ্ক্রিয় করে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।