রমজান সামনে রেখে সিন্ডিকেটের ফাঁদ

রমজান ঘিরে এবারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। রমজান শুরুর দুই মাস আগ থেকে নিত্যপণ্যের দাম নীরবে পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হচ্ছে-রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে-এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে।

এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে সব ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, হলুদ-মরিচ, চিনি-লবণ এমনকি খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। গরুর মাংস ও মুরগির দামও বেড়েছে। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে।

ভোক্তারা জানান, বরাবরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

মনে হচ্ছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ৫-১০ রোজা পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হবে। এরপর হয়তো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকের পর দাম কমতে শুরু করবে।

কিন্তু দেখা যাবে, যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, সে পরিমাণে কমানো হয়নি। তাই রোজার আগে বাজারের দিকে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ১৬ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

এর মধ্যে প্রতি কেজি ছোট দানা মসুর বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি মুগ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা।

খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা, এক মাস আগে যা বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিু আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তিনি আরও বলেন, বাজার নজরদারির জন্য আমরা সব সময় বলে আসছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

টিসিবির তথ্যমতে সোমবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫ টাকা, এক মাস আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হয়, এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি কেজি দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয় ৩০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। দেশি হলুদ বিক্রি হয় ২৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকা।

প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৬০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ ও দেশি মুরগি বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা, এক মাস আগে ১৩৫ ও ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাশাপাশি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি খেজুর (সাধারণমানের) বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়।

রমজান আসার এক থেকে দুমাস আগে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।

এ কারণে রমজান আসার আগে বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থায় বর্তমানে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা নেই।

অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। এ প্রবণতা ভোক্তা কিংবা সরকার কারও জন্যই শুভ নয়।

তিনি বলেন, আজ থেকে বাজার ঠিকমতো মনিটরিং করা না হলে যে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে, তা রমজান পর্যন্ত থামানো যাবে না। তাই এখন থেকে বাজার গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তদারকি করা উচিত।

ভোক্তাদের উদ্দেশে গোলাম রহমান বলেন, রমজান ঘিরে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ১৫ দিনের পণ্য যাতে একদিনে না কেনেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজান সামনে রেখে সব পণ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। রমজানে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সে জন্য সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে।

রমজান ঘিরেও তদারকি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের টিমের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদারকি সদস্যরা কাজ করছেন।

পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত

সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে এমন সিদ্ধান্ত

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। গতকাল মঙ্গলবার জামুকার ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার গতকালের সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় জামুকার সদস্য ও সাংসদ শাজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। তিনি তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। পরে জামুকার সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল।

জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কাকরাইলের কার্যালয়ে কথা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।

হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বে অনেকেরই নোবেল পুরস্কার, ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে।’

যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি

গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া জামুকার দুজন সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, জামুকার সদস্য ও সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলমসহ বৈঠকে উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্য তখন বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে অনেক সময় লাগবে। পরে প্রয়োজন হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবে। আইনি কোনো জটিলতা থাকলে তা সুরাহা করবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘স্মরণীয় যাঁরা, বরণীয় যাঁরা’ (লাল মুক্তিবার্তা) এমন একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামি বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজনের নাম এখনো কীভাবে রয়ে গেছে, তা নিয়েও জামুকার গতকালের সভায় আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে একটি কমিটি কাজ করবে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে শাজাহান খানকে। এই কমিটি বিতর্কিতদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করবে। এই কমিটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও কি বাতিল হবে জানতে চাইলে শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিল হচ্ছে। বাকি স্বাধীনতা পদক, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত দিকগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও প্রকৌশলীর আবেদন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাঁর প্রস্তাব পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি এখন একটি উপকমিটিতে পাঠিয়েছে জামুকা।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেখিয়েছে জামুকা। একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে জামুকা। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছাদিকুর রহমান ওরফে হিরু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। শাজাহান খান গতকালের বৈঠকে ছাদিকুরের পক্ষে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

গত মাসেই এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জামুকা। ৭০তম সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত গতকালের সভায় (৭২তম) পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে এখন বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনি অস্ত্র জমা দিয়েছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেছেন জামুকার সদস্য ও সাংসদ মোশাররফ হোসেন।

এ ছাড়া বৈঠকে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১০২টি উপজেলা থেকে প্রতিবেদন এসেছে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

জামুকার গতকালের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাকসহ অন্য বিতর্কিতদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নীতিগতভাবে তিনি তা সর্মথন করেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এটা ঠিক, কিন্তু তাঁদের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। তাই তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক খেতাবের যোগ্য নন বলে মনে করেন তিনি।

বিমানবন্দরে খাবারের গাড়িতে ৬০ পিস স্বর্ণ, আটক ৭

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের খাবার সরবরাহকারী ক্যাটারিং সার্ভিসের গাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা মূল্যের ৬০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন সাত জন আটক করেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাতটায় ইউএস বাংলার দুবাই থেকে আসা ফ্লাইট বিএস ৩৪২ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরে যাত্রীদের উচ্ছিষ্ট খাবারের বক্স গাড়িতে তোলার পর তল্লাশি চালিয়ে একটি বক্স থেকে ৬০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সদস্যরা।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালায় সংস্থাটি। এ ঘটনায় ইউএস বাংলার ক্যাটারিং সার্ভিসের কর্মীরা জড়িত বলে ধারণা করছে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নিয়াজুর রহমান খান।

উড়োজাহাজটি জব্দ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিযানে সম্পৃক্ত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।

আটক স্বর্ণের মূল্য আনুমানিক সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা হতে পারে।

এ ঘটনায় আটক সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

ডে কেয়ার সেন্টারে চালু হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা

বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কার্যালয়ে স্থাপিত ডে কেয়ার সেন্টারে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডে কেয়ার সেন্টারের চার বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডে কেয়ার সেন্টারের চার বছরের বেশি বয়সী (ফোর প্লাস) শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ৪ প্লাস’ অর্ন্তবর্তীকালীন প্যাকেজের আওতায় ২০২১ সালে নির্বাচিত ২ হাজার ৬৩৩টি ক্লাস্টারে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি চার বছরের বেশি বয়সি শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর ২০২২ সালে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

গত বছর ২২ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের কাছে তার আফিস ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ৪ প্লাস’ অর্ন্তবর্তীকালীন এই প্যাকেজ হস্তান্তর করেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের একটি গভীর সংযোগ রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ছোট ছোট শিশুদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধবৃত্তিক, ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ -এ ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত কর্মপরিকল্পনায় প্রাক-প্রাথমিক স্তর এক বছর থেকে দুই বছরে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

পরিকল্পনাটি গত বছরের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ প্লাস বয়সি শিশুদের জন্য প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার বিষয়টি অনুমোদন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে অর্ন্তবর্তীকালীন প্যাকেজের মাধ্যমে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ৫ প্লাস বছর বয়সি শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষক্রমের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে ৫ প্লাস বয়সী শিশুদের জন্য সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা রয়েছে।

পি কে হালদারের সহযোগী সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর!

পি কে হালদারের দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল হক মালয়েশিয়া থেকে বিবিএ পাস করে দেশে ফিরে ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কম্পানিতে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এর কয়েক বছর পর পি কে হালদারের অধীনে এভিপি হিসেবে যোগ দেন আইআইডিএফসিতে। পরে পি কে হালদার এমডি থাকা অবস্থায় রিলায়েন্স ফিন্যান্সে এসভিপি হিসেবে যোগ দেন তিনি।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, জবানবন্দিতে রাশেদুল হক আদালতকে জানান, পি কে হালদার খেয়াল-খুশিমতো গ্রাহকদের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করতেন। গ্রাহককে না জানিয়েই ঋণ নেওয়া হতো। এভাবে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন রিলায়েন্স ফিন্যান্সের কর্মকর্তা রুনাই আহমেদ, আল মামুন সোহাগ ও রাফসান আহমেদ চৌধুরী। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এসব অপকর্মে পি কে হালদারকে সহায়তা করতেন।

পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবালের এমডি হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে রাশেদুল হককে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি করে গেলেও মূল কর্তৃত্ব ছিল তাঁর হাতেই। এই কর্তৃত্ব ধরে রাখতে রিলায়েন্স লিজিংয়ে তাঁর অনুসারী রুনাই আহমেদ, আল মামুন সোহাগ, রাফসান, অভীক সাহাকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নিয়ে আসেন। এঁদের সঙ্গে পি কে হালদারের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

রাশেদুল হক জানান, ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগ ছিলেন পি কে হালদারের আত্মীয়-স্বজন। তাঁরা পি কে হালদারের কাছে ঋণের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতেন রাশেদুল হকের কাছে। রাশেদ সেটি রুনাই আহমেদের কাছে পাঠালে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ প্রস্তাবে স্বাক্ষর দিতেন রুনাই, সোহাগ ও রাফসান। সব বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে পি কে হালদার ঋণ প্রস্তাব পাস করতে বাধ্য করতেন।

রাশেদুল জবানবন্দিতে আরো জানান, মো. নওশের উল ইসলাম, মমতাজ বেগম, পাপিয়া ব্যানার্জি, বাসুদেব ব্যানার্জি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক হওয়ার পরও বেআইনিভাবে তাঁদের ভুয়া প্রতিষ্ঠান এমএসটি মেরিন, এমএসটি ফার্মা, নিউট্রিক্যাল, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ পি কে হালদার তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করে উত্তোলনের পর বিদেশে পাচার করেছেন।

জেনিথ ও লিপরো ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ১২৫ কোটি টাকার ঋণ। রিলায়েন্স লিজিংকে তিনটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ভাউচারের মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা দিয়েছেন রুনাই, সোহাগ, অভীক, রাফসান ও রাশেদ।

ট্রেজারি বিভাগ থেকে কোনো ঋণ অনুমোদন ছাড়াই শর্ট টার্ম ঋণের নামে এমডি রাশেদুল হক পিপলস লিজিংকে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ওই সময় পিপলস লিজিংয়ের এমডি ছিলেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী। পরে তা ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে উত্তোলন দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে এমডি রাশেদুল হক প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ দিয়েছেন। আনাম কেমিক্যাল, রহমান কেমিক্যাল, নর্দান জুটসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে পরে উত্তোলন করে পাচার করেন পি কে হালদার।

এসএসসিতে ‘অটোপাসের’ দাবি সড়কে শিক্ষার্থীরা

এসএসসি ও সমমানের ২০২১ সালের পরীক্ষায় ‘অটোপাসের’ দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরীক্ষার্থীরা। নরসিংদীতে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীতেও একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

নরসিংদীতে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরে মিছিলটি ডিসি রোড ঘুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান ও প্লে কার্ড প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপজেলার মোড়ে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করেন।

এ সময় কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। শিক্ষার্থীরা পুলিশের না মানলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) বেলাল হোসেন, সদর মডেল থানার ওসি বিপ্লব কুমার চৌধুরী, ওসি তদন্ত আতাউর রহমান, শিক্ষাবিদ ড. মশিউর রহমান মৃধাসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার জানান, তাদের দাবির বিষয়ে সরকারকে অবহিত করার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে জেএসসি বা নবম শ্রেণির ফলাফল মূল্যায়নের ভিত্তিতে অটোপাস দেয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, পুরো দুই বছর ক্লাস, টেস্ট পরীক্ষাসহ সব দিক থেকেই প্রস্তুতি সত্ত্বেও ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হয়েছে। আমরা পুরো এক বছর ক্লাসের বাইরে ছিলাম। তারপরও পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটা আমাদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমাদের পিইসি এবং জেএসসির ফলাফল মূল্যায়ন করে অটোপাস দেয়া হোক।

অটোপাসের দাবিতে জানুয়ারি মাস থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব ও কুড়িলসহ দেশের বিভিন্ন বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।

অব্যবহৃত পড়ে আছে বিটিএমসি’র সাড়ে ৬শ’ একর জমি!

সাত বছরেও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সম্পূর্ণ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের ২৫টি মিলের ৬৩৬ একর জমি। বিরাট সম্ভাবনা থাকার পরও যা কাজে লাগাতে পারছে না সরকার।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

মন্ত্রী জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)’র বন্ধ মিলগুলো চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার প্রেক্ষিতে তখন বন্ধ মিলগুলো পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)’র মাধ্যমে পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্তগ্রহণ করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রায় সাত বছরেও সেখানে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি আনতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন ব্যবসাবান্ধব স্থানে বিটিএমসি’র ২৫টি মিলের ৬৩৬.৩৮ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।  বিটিএমসি’র ২৫টি মিলের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) নীতিগত অনুমোদন পাওয়া ১৬টি মিলের মধ্যে ইতোমধ্যে কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল, ওরিয়ন গ্রুপ ও আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলটি কনসোর্টিয়াম অব তানজিনা ফ্যাশন লিমিটেডকে পিপিপি’র মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। এবার চট্টগ্রামের আর আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এসব মিলের জমি পিপিপি’র মাধ্যমে উৎপাদন খাতে ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে, অপরদিকে, দেশের জিডিপি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতি আরো সুদৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশই প্রথম পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ-পিপিপি’র মাধ্যমে বন্ধ টেক্সটাইল মিলগুলোকে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বন্ধ এসব মিলগুলো আবার চালু করা গেলে এসব শিল্প-প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ জন্যই, সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বন্ধ টেক্সটাইল মিলগুলো পিপিপি’র মাধ্যমে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

এ সময় বস্ত্র ও পাটসচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য শিল্পায়নের কোন বিকল্প নাই। পাশাপাশি বেকার সমস্যা দ্রুত দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে শিল্পায়নের মাধ্যমে কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় বিজেএমসি ও বিটিএমসির মিলগুলো পিপিপি মডেলের মাধ্যমে উৎপাদনের ধারায় ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠানে, শিল্পকারখানার ইউটিলিটি সমস্যার সমাধানে সরকারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলেও নিশ্চিত করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বন্দর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন এই সরকারের আমলেই হয়েছে। বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তা, স্টেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যখনই বস্ত্রখাতে কোন সমস্যা হয়েছে তখনই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বেগম সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন- বিটিএমসি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, বস্ত্র উৎপাদন ও বস্ত্র বিপণনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক

ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এখনও পারের অপেক্ষায় রয়েছে ঘাটে ৭ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন। তীব্র শীতে ভোগান্তিতে যাত্রী ও শ্রমিকরা। 

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, রাত ১১টা থেকে কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার মাত্রাও বাড়তে থাকে। রাত ১টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে বিকন বাতি ও মার্কিং পয়েন্টের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।

এ সময মাঝ নদীতে ৩৮টি যানবাহন নিয়ে আটকে পড়ে ছোট-বড় ৩টি ফেরি। ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর কুয়াশার মাত্রা কমে এলে সকাল থেকে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়।

১৪ দিনের মাথায় শিশু রিফান হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

১৪ দিনের মাথায় কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের শিশু রিফান (৫) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

মাছ ধরার বড়শির ছিপ তৈরির সময় দুষ্টুমি করছিল নিহত শিশু রিফান। তখন বিরক্ত হয়ে শাকিল ইট ছুড়ে মারলে তা মাথায় লাগে। ওই আঘাতে মারা যায় রিফান। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করেছেন হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম।

মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে আসামি শাকিলকে জেলহাজতে হয়েছে।

নিহত রিফান ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. শরীফুল ইসলামের ছেলে এবং বৈদ্যনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র। শাকিল (২২) একই গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে।

জানা যায়, সোমবার রাতে মেঘনার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর এলাকা থেকে হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বে মেঘনা থানার পুলিশ শাকিল নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে।

উল্লেখ্য, উপজেলার বৈধ্যনাথপুর গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী শরিফ হোসেনের পাঁচ বছরের শিশু রিফানুল ইসলাম রিফান গত ১২ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির পাশে খেলাধুলা করতে গিয়ে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে শিশুটির মা রজনী বেগম বাদী হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মেঘনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

গত শুক্রবার সকালে উপজেলার ওমরাকান্দা ব্রিজের নিচে বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।

মেঘনা থানার ওসি আব্দুল মজিদ জানান, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার রসুলপুর এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়।

টিকা নিতে অনীহা ও ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্ব

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কাউকেই টিকা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্র বাধ্য করবে না। এটাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার নীতিতত্ত্ব। তবে এটা সত্য যে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে আইন কখনো কখনো ব্যক্তিকে বাধ্য করে। যেমন সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালানো অথবা প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শুধু ব্যক্তির নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থেই নয়, সমাজের অন্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়ে থাকে।

মূল বিষয়টি হলো, মানুষের দেহে প্রয়োগযোগ্য যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই তাঁর সিদ্ধান্ত নেবেন, অন্য কেউ নন; যতক্ষণ পর্যন্ত রোগী নিজে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও সংক্রামক ব্যাধির টিকা শুধু ওই টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিকেই নয়, তাঁর আশপাশে থাকা অন্যদেরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়, তারপরও রাষ্ট্র ব্যক্তিকে টিকা নিতে বাধ্য করতে পারে না।

এটি মনে রাখা জরুরি যে বাংলাদেশ জাতীয় টিকা কার্যক্রমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সফল একটি দেশ ও টিকা দ্বারা পোলিওসহ নিয়ন্ত্রণযোগ্য বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধে দেশটি কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে। কিন্তু করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশের মানুষের মধ্যেই আস্থাহীনতা লক্ষণীয়। বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও যদি একই পরিস্থিতি হয়, তবে সেই দেশগুলো কীভাবে এই পরিস্থিতির সামাল দেবে? এমন একটি পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই কোনো সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো হতাশ হয়ে বসে থাকতে পারে না। যখন বাধ্য করার নীতিটি অনৈতিক, তখন আচরণ-অর্থনীতির তত্ত্বের আলোকে ভিন্ন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ বিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড থ্যালার ২০১৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। অধ্যাপক থ্যালার ও ক্যাশ সানস্টেইন আচরণগত অর্থনীতির নজ থিওরি বা ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্ব নিয়ে ২০০৮ সালে ‘নজ ইমপ্রুভিং ডিসিশন অ্যাবাউট হেলথ, ওয়েলথ অ্যান্ড হ্যাপিনেস’ বইটি প্রকাশ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বিশেষ লক্ষ্যে মৃদু ধাক্কা দিলে তাদের সেই গন্তব্যের দিকে ধাবিত হতে দেখা যায়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ধাক্কা ভালোই কাজ করে।

যেমন ধরুন, রেস্টুরেন্টের মেনু থেকে কোন খাবারটা পছন্দ করবেন। আপনার পাশের বন্ধুটি কিছুক্ষণ আপনার এই অবস্থা দেখে মেনুটা নিজের হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখল ও তারপর বলল, ‘২০৫ নম্বর খাবারটা ভালো হবে। দেখো, এটাতে প্রচুর সবজি আছে, সঙ্গে মাছ। নিউট্রিশন ভ্যালু অনেক।’ আপনি বন্ধুর এই যুক্তি ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই খাবারই আপনি অর্ডার করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুটি মূলত আপনাকে একটা মৃদু ধাক্কা দিয়ে একটি সিদ্ধান্তের দিকে ঢেলে দিল। এটা মৃদু ধাক্কা তত্ত্ব যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে, সেটাকেই তুলে ধরছে।

আমার এই লেখার প্রেক্ষাপট এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় কোভিড-১৯ বা করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বহুমুখী আলোচনাকে কেন্দ্র করে।

করোনার টিকা গ্রহণে বাংলাদেশের মানুষের অনাস্থার বেশ কিছু কারণ আছে। সে কারণগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও দেখা যায়।

প্রথমত, বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিটা পরিসংখ্যান অনুসারে ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কম বলেই মনে হয়। হয়তোবা বাস্তবের সঙ্গে সরকারি হিসাবের একটি ফারাক আছে, কিন্তু তা দেশের মানুষকে ভীতিকর কোনো পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়নি। এই তুলনামূলক কম ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনেকেই টিকা নিতে না–ও চাইতে পারেন।

টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যা–ই বলুন, সাধারণ মানুষ আস্থা পাচ্ছেন না। কেননা এটা উপলব্ধি করার মতো যথেষ্ট সময় পার হয়নি। ইতিমধ্যেই নরওয়েতে টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু বেশ অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। এই ব্যক্তিরা যে ৭৫-৮০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী ও বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেটা সাধারণ মানুষের অনেকেই সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করেন না।

দ্বিতীয়ত, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যা–ই বলুন, সাধারণ মানুষ আস্থা পাচ্ছেন না। কেননা এটা উপলব্ধি করার মতো যথেষ্ট সময় পার হয়নি। ইতিমধ্যেই নরওয়েতে টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু বেশ অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। এই ব্যক্তিরা যে ৭৫-৮০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী ও বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেটা সাধারণ মানুষের অনেকেই সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করেন না।

তৃতীয়ত, অনেকেই মনে করেন, টিকার কোল্ড চেইন সঠিকভাবে মেনে চলার মতো সক্ষমতা অনেক দেশই রাখে না। তার ফলে টিকা কার্যকরতা হারাবে। চতুর্থত, অনেকেই ভাবছেন, আগে অন্যরা নিন, পরে বুঝেশুনে নিজে টিকা নেবেন।

একদিকে করোনার টিকা নিয়ে জনমনের শঙ্কা ও অনাস্থা, অন্যদিকে টিকা গ্রহণে বাধ্য করতে না পারার নীতিতত্ত্ব বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু উন্নয়নশীল দেশকে এক জটিল সমস্যায় ফেলেছে। তথাপি বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনেক কিছুই করার আছে সাধারণ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য। আচরণ অর্থনীতির ‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্বের ব্যবহার করে বাংলাদেশ অনেকটাই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ‘ঐচ্ছিক’ থেকে কিছুটা ‘বাধ্যবাধকতার’ দিকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে টিকা গ্রহণের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কারা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্রমান্বয়ে টিকা পাবেন, তা সুনির্দিষ্ট করা ও গণমাধ্যমের সাহায্যে এটি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা অপরিহার্য।

শিক্ষা ও প্ররোচনার মাধ্যমে জনগণকে মৃদু ধাক্কা দেওয়ার জন্য টিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য নিয়মিত গণমাধ্যমে তুলে ধরে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে অবহিত রাখার মাধ্যমে জনগণকে টিকার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা যায়। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো ধরনের উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না লুকিয়ে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা ও সেটির গুরুত্ব তুলে ধরাও এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে। এতে টিকা সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর সুযোগও কমে আসবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (তখন নির্বাচিত) স্বেচ্ছায় টিকা নিয়ে সেখানকার নাগরিকদের টিকা গ্রহণের দিকে কিছুটা ঠেলে দিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও আমরা একই কাজ করতে দেখেছি। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি দেশের ও বিভিন্ন অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, যেমন রাজনীতিবিদ (বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় সাংসদ, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান), সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক, ইমাম, পুরোহিত, পাদরি এবং স্থানীয় সমাজপতিরা প্রথম টিকা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘টিকা কর্মসূচির’ উদ্বোধন করতে পারেন।

উদ্দীপনা ও বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির মাধ্যমেও জনগণকে টিকা নেওয়ার দিকে মৃদু ধাক্কা দেওয়া যায়। জনমনে উদ্দীপনা তৈরির জন্য টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের চাকরিস্থলে কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এমনকি কিছু জবরদস্তি, যেমন ধরুন, হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য, উপাসনালয়ে যেতে হলে টিকা বাধ্যতামূলক করা যায়। এমনকি আন্তজেলা ভ্রমণ ও বিভিন্ন হোটেলে অবকাশ যাপনের জন্য যেতে হলে টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

পুরো টিকাদান পদ্ধতিকে কার্যকরী বা সক্ষম করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে করে জনগণের আস্থা তৈরি হয় ও তা বহাল থাকে। প্রতিদিন কী পরিমাণ মানুষ টিকা নিলেন, কোন এলাকায় কোন বয়স ও লিঙ্গের, সরকার তা প্রকাশ করবে গণমাধ্যমে। সরকার ছাড়া অন্য কেউ এই টিকা প্রদানের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। নকল টিকা প্রতিরোধ করার সব ব্যবস্থা প্রথমেই নিতে হবে। একবার আস্থা হারালে, তা স্বল্প সময়ে ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না ও টিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হবে। কোনো ধরনের অব্যবস্থা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সরকার নিজের ত্রুটি হিসেবে না দেখলে তা গণমাধ্যমে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করবে ও ভবিষ্যতে তা রোধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নিল, তা পরিষ্কার করবে।

‘মৃদু ধাক্কা’ তত্ত্বকে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সহযোগী সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে অতিসত্বর এক বা একাধিক কর্মশালার আয়োজন করে একটি নীতিমালা ও কার্যপ্রণালি তৈরি করা জরুরি। অন্যথায় বহুবিধ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। সর্বোপরি, এটা না বললেই নয়, করোনা সংক্রমণ ও তাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে যে অবস্থায়ই আছে, তাতে টিকাদান কর্মসূচি ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট; এমনকি বহির্বিশ্বের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। কেননা অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।