শৈলকুপায় নির্বাচনী সহিংসতায় প্রার্থীর ভাই খুন

শৈলকুপায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে লিয়াকত আলী বল্টু নামে একজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন। উপজেলা শহরের কবিরপুর এলাকায় বুধবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পথসভায় গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও অপর প্রার্থী আলমগীর হোসেন খান বাবুর সর্মথকরা কবিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে আহত হন প্রার্থী শওকত আলীর ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী বল্টু।  কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। লিয়াকতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এ ঘটনায় পরে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাত ১১ টার দিকে পুলিশ সুপার মো. মুনতাসিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত লিয়াকত আলী বল্টু ১৩নং উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শওকত আলীর সমর্থক নজরুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে লিয়াকত আলী বল্টু গলির ভেতর পড়ে যান। এসময় আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

রাজশাহীতে গুলি ও বোমা হামলা: রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। আড়ানী পৌর সদরের তালতলা বাজারে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী শহিদুজ্জামান শাহিদের পথসভায় গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এছাড়া তালতলা বাজারে শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট হয়েছে। মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিদের ভাগ্নে তুষার (২৮) আহত হয়েছেন। তালতলা বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবারও রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

এর আগে ৮ জানুয়ারি মুক্তারের সমর্থকরা মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বড়পুকুরিয়ায় দুর্নীতি মামলায় সাবেক ৬ এমডিসহ ২২ জন কারাগারে

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে ২৪৩ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতির মামলায় সাবেক ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার দিনাজপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল করিম এ আদেশ দেন।

ওই ছয় সাবেক এমডি হলেন মো. আবদুল আজীজ খান, খুরশিদ আলম, কামরুজ্জামন, মো. আনিসুজ্জামান, এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব ও হাবিব উদ্দিন আহমেদ।

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মহাব্যবস্থাপক শরিফুল আলম, মো. আবুল কাশেম প্রধানিয়া ও আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মো. আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান, উপব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান, মো. মোর্শেদুজ্জামান, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ ও মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপক সোহেবুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম খাদেমুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার এবং উপমহাব্যবস্থাপক মো. জোবায়ের আলী।

আজ দুপুরে ওই আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তখন এ আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

 

ওই কয়লাখনিতে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। এর আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা।

এজাহার থেকে জানা যায়, ওই কয়লাখনিতে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। এর আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। দুদকের উপপরিচালক সামসুল আলম মামলাটির তদন্ত পরিচালনা করেন।

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সাবেক সাতজন এমডিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, আসামিরা ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঘাটতি ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাৎ করেন। তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগপত্রে এজাহারনামীয় ছাড়াও ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় পাঁচজনকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসামি সাবেক এমডি মো. মাহবুবুর রহমান মারা যান।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, আসামিদের বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাঈদ খোকনের ‘মানহানিকর বক্তব্যে’ আইনি ব্যবস্থা নেবেন তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বক্তব্যকে মানহানিকর উল্লেখ করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর মানিকনগর এলাকার স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

তাপস বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাঁর বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুঁটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি।’

আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না, এ প্রশ্নে তাপস বলেন, মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।

তাপসকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল ছিল জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এর আগেই ৯ তারিখে আমরা লক্ষ করলাম, তিনি (সাঈদ খোকন) ঘটা করে একটা সভা ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করলেন। আমার মনে হয়, এটা ওনার ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।’

গত শনিবার দুপুরে হাইকোর্ট এলাকায় আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নানা অভিযোগ তোলেন শেখ তাপসের বিরুদ্ধে। সাঈদ খোকনের এসব অভিযোগের বিষয়ে গতকাল রোববার তাপস বলেন, ‘কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু বলে থাকেন, সেটার জবাব আমি দায়িত্বশীল পদে থেকে দেওয়াটা সমীচীন মনে করি না।’ গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস 

ঢাকা দক্ষিণের সাবেক ও বর্তমান মেয়রের এই বাদানুবাদ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়। আজ আবার সাঈদ খোকনের বক্তব্য নিয়ে বলেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৭ মে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করেছি। সেখানে আপনারা লক্ষ করেছেন, মার্কেটসংক্রান্ত কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংবাদকর্মীরা আপনারাই সেগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছেন। সেখানে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়েছে। যাঁদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়েছে, যাঁরা লেনদেন করেছেন, তাঁরাই অভিযোগ এনেছেন।’

তাপস বলেন, ‘আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনোভাবেই কোনো অভিযোগ আনিনি। যেসব ব্যবসায়ী ও দোকানদারের অবৈধ দখলে জায়গাগুলো দখলে ছিল, তাঁরা অর্থ লেনদেন করেছেন। এখন তিনি পুরো দোষ আমার ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। সেটা আমি মনে করি খুবই অনভিপ্রেত।‌ শুধু আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তিনি এই বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।’

ঢাকায় পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে সমাবেশ, লাঠিচার্জে আহত ৭০, গ্রেপ্তার ৫০, বিবিধ মামলায় আসামী হাজারের উপরে – গায়েবী মামলার অভিযোগ

পুলিশি হামলা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ সারাদেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালনের সময়ও রাজধানী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে দলটির কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও লাঠিচার্জে ৭০ জন আহত হয়েছে। এগুলোর সূত্র ধরে কমপক্ষে সাতটি আলাদা এবং সম্পূরক মামলা হয়েছে যেগুলোতে প্রায় ১১০০ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এই ১১০০ ব্যক্তির মধ্যে ৮০০-র বেশি অজ্ঞাতনামা এবং অভিযোগ উঠেছে এমন অনেককেই আসামী করা হয়েছে যারা কোনো মিছিল, সভা, সভাবেশ বা প্রতিবাদ র‍্যালীতে ছিলেননা।

প্রসঙ্গতঃ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীদের পুলিশি বাধা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অব্যাহত গতিতে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পুলিশি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের কাছে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কোনো মূল্য নেই। দেশে করোনা সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়ার বদলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখাকেই সরকার তাদের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত করেছে।

সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে সমবেত হন। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা মৎস্য ভবন, তোপখানা সড়কের মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয় এবং বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বিএনপির অবস্থানের কারণে এ সময় যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে জনগণ।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সচিবালয়ের পশ্চিম সড়ক হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে সমাবেশস্থল থেকে মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানোর পর উত্তেজনা থিতিয়ে আসে। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির প্রশিকায় ৬০/৭০ জনের মিছিলে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেত্তৃত্বে মিছিলে পুলিশ ও যুবলীগের কর্মীরা বেপরোয়া হামলা চালালে অনেকেই আহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২১ সালে সরকার পরিবর্তনের প্রত্যাশায় জনঐক্যের সংকল্প ব্যক্ত করে বলেন, নতুন বছরে আমাদের সবার একটাই সংকল্প, একটাই শপথ হবে- ‘ঐক্য’। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই লক্ষ্যে সবাইকে এক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে উদ্ধারের যে সংগ্রাম; সে সংগ্রাম শুধু বিএনপির একার নয়। সব রাজনৈতিক দলকে, সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সরিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেই আকাঙ্ক্ষা ও চেতনাকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, প্রশাসনের জোরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা বাংলাদেশের সব অর্জন ধবংস করেছে। তারা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

৩০ ডিসেম্বরে পুলিশি আচরণের নিন্দা করে বিএনপির প্রচার ও গণযোগাযোগ দপ্তরের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এম.পি. জহির উদ্দীন স্বপন বলেন,  সরকারী এমন জুলুম আর বেশিদিন চলবে না। মানুষ জেগে উঠছে। নির্লজ্জ সরকার নীতিভ্রষ্টভাবে দেশ চালাচ্ছে এবং গত দুই নির্বাচনের মহা কারচুপি কারো অজানা নয়। অবৈধ গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় অযাচিত ও অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপিকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্যে, বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। উদাহরণস্বপরূপ উনি বলেন, মিরপুরের রূপনগর থানায় আমার সমর্থক দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং শুধু তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই আওয়ামী পুলিশ শান্তি পাননি, তারা এই দুজনের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও ঢুকিয়ে দিয়েছে মামলায়। এর ভেতর একজন থাকেনই যুক্তরাজ্যে, যার একমাত্র অপরাধ আমার সাথে তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। এভাবে কোনো দেশে ন্যায়বিচার চলতে পারে? ৮০০-র বেশি নাকি অজ্ঞাতনামা আসামী!! এইগুলা কী আমরা বুঝিনা? আমাদের কী তারা বোকা পেয়েছেন? তাদের ক্ষমতার অপব্যাবহারের দিন আর বেশি নেই।

এইসূত্রে রূপনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে জবাবে বলা হয়, যাদের গ্রেপ্তার করা  হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাদের নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। যথাসময়ে তা প্রকাশ করা হবে। গায়েবী মামলার অভিযোগে থানার এস.আই  বলেন – মোঃ শহীদুল ইসলাম ও মোঃ মইন উদ্দিন চৌঃ এর নামে এজাহারে দেয়ার যথার্থ কারণ আছে। দেশের বাইরে থাকলেই কেউ অপরাধ সংগঠন করতে পারেনা বাংলাদেশে, এই ধারণা ভুল। কেইস কোর্টে উঠলে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আলামত সহকারে হাজির করা হবে। এর বেশি এই মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না।

 

আলেমদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার চায় জামায়াত

ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে ভাস্কর্য ও মূর্তিবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভাস্কর্য ও মূর্তি নির্মাণ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল শরিয়তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরকার বিরত থাকবে। কিন্তু উল্টো বরেণ্য আলেমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অন্যায় করা হয়েছে।

চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদ: পৃথক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব ছয়টি চিনিকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চিনিকল বন্ধ হলে শ্রমিকদের পথ বসা ছাড়া উপায় নেই। করোনা পরিস্থিতিতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আখ মাড়াইয়ের মৌসুমে চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্তে কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লোকসানের অজুহাতে চিনিকল বন্ধ করা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রতিবেশী দেশ থেকে চিনি আমদানি করতেই সরকার এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘শেখ হাসিনার কাছ থেকেই গালি দেয়া শিখেছি’- মাওলানা মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গালি দেয়া এবং রাজনৈতিক অসৌজন্য আচরণ শিখেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডিয়া হাউস রানার মিডিয়ার একটি টকশোতে। তিনি আরো বলেন, তিনি একাই নন তাঁর দলের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরাও শেখ হাসিনার কাছ থেকেই এই ভাষা শিখেছেন। রানার টিভি’র এই টকশোতে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার, ব্লগার ও লেখক নিঝুম মজুমদার।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহরিয়ার কবিরকে বিভিন্ন ইসলামি ওয়াজে কেন তিনি ‘মুরগী চোর’; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কেন ‘বলদ ষাঁড়’ এবং সূপ্রীম কোর্টের আপীলেট ডিভিশানের বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কেন তিনি বাংলাদেশের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই জুতা খুলে পেটাতে হবে বলেন, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের এমন প্রশ্নের জবাবেই মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এই ভাষা ও স্বভাব তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখেছেন।

তিনি বলেন, ডক্টর জাফর ইকবাল ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিয়োরীতে বিশ্বাস করেন বলেই তাঁকে তিনি ‘বলদ ষাঁড়’ বলে ডাকেন। একই সাথে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে একজন ‘সেক্টর কমান্ডার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনাব সিদ্দিকী শাহরিয়ার কবিরকে ‘মুরগী চোর’ বলে ডাকেন বলেই তিনিও সেই নামে ডাকবেন। এ সময়ে ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার শরীয়া কিংবা কোরান হাদীসের আয়াতে তাঁর এই ভাষা অন্যায় বলে অভিহিত করলে তিনি তার সদুত্তর না দিয়েই একটি পর্যায়ে তিনি তাঁর ‘অন্য কাজ’ আছে বলে হঠাৎ করেই টকশো ছেড়ে চলে যান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক আসম মাসুম। তিনি আরো জানান, ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ে তাঁকে ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গালি শিখেছেন এই বক্তব্যের পরপরই হেফাজতে ইসলামীর বিভিন্ন মহল থেকে টকশো বন্ধ করবার ব্যাপক চাপ আসতে থাকে রানার মিডিয়ার কাছ থেকে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুনুলের এমন বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামী অত্যন্ত বিব্রত। সরকারের সাথে বসে যখন তাঁরা সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলাপের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন এমন সময় এই ধরনের কথা হেফাজতকে অত্যন্ত বিব্রত করেছে বলেই অনেক নেতার অভিমত।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে হেফাজত ইসলামের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান যে, ‘মামুনুল নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এখন আমাদের ভবিষ্যত নিয়েও খেলা শুরু করেছে। এই কথার চরম খেসারত দিতে হতে পারে পুরো সংগঠনকে’

এই ব্যাপারে  গতকাল থেকেই তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও ব্যাক্তিরা ক্ষোভ ঝারছেন মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। একজন ইসলামি ব্যাক্তিত্ব ও স্কলার কিভাবে এমন অসৌজন্য ভাষায় কথা বলে সেটি প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিতে পারেন, এটি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

জাহাঙ্গীর/১২৭/জক-৪

বাবুনগরী ও মামুনুলের গ্রেপ্তার দাবি ৬৫ সংগঠনের

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও তাঁদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬৫টি সংগঠন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সংগঠনগুলো একযোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এ দাবি জানিয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে বেলা আড়াইটার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ মোড় ঘুরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
বেলা তিনটার দিকে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘একটি গোষ্ঠী’ ভাস্কর্যবিরোধী ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিচ্ছে। এই গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এটি চরম ধৃষ্টতা ও জাতির পিতা, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা। এই গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তারপরও তারা যদি ধৃষ্টতা দেখায়, তবে তাদের এর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান। এতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত হেফাজত-খেলাফতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক নেতারা ওয়াজের নামে সমাবেশ করে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তাঁরা পাকিস্তান ও তালেবানি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ফুল নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে শিখা চিরন্তনে যান সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ফুল নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে শিখা চিরন্তনে যান সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতায় সরব রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। তাই আজকের কর্মসূচিরও মূল দাবি ছিল এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে বাংলাদেশে জামায়াত-হেফাজতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ওয়াজ মাহফিলের নামে ভিন্নমত, নারী এবং ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য সম্পর্কে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জানানোর কোনো ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। তারাই এ কাজ করছে যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বলেছে “বাংলা” ইসলামের ভাষা নয়, ১৯৫৪-এর নির্বাচনের সময় বলেছে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। তারাই ১৯৭০-এর নির্বাচনে ইসলামকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে ঠেকাতে চেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে।’ এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের ‘আস্ফালন’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আস্ফালন বন্ধ করুন, না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ রাজপথেই এর জবাব দেবে, যার পরিণাম ভালো হবে না। আর ধৃষ্টতা দেখালে পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, তারাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য বালকও বোঝে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে কেউ ঠেকাতে পারবে না ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরাই এর বিরোধিতা করছে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি।’

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য কামরুল হাসান খান বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বারবার ষড়যন্ত্র করেছে, এখন আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ শিরীন আখতার বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে। এই ব্যবসায়ীদের বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে মারা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা এখনো জীবিত আছি। মৌলবাদী শক্তিকে যে করেই হোক প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, জাতির পিতাকে যারা অবমাননা করছে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচিতে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মুনীরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। তবে এমন প্রতিবাদী কর্মসূচি বিজয়ের মাসজুড়ে চলবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

অংশ নেওয়া সংগঠন

আজকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, গৌরব ’৭১, অপরাজেয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, কর্মজীবী নারী, জাতীয় নারী জোট, নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ চ্যাপটার), জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ, ইয়ুথ ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঘাসফুল শিশু কিশোর সংগঠন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।

সরকারের উসকানিতেই উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে: নুরুল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়ায় বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক৷

তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে সরকার অপপ্রচার করছে। ঠিক একইভাবে বিরোধী দল ও ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন ও হামলা-মামলা করে তারা একদলীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে৷’

রাজধানীর পল্টন মোড়ে আজ বুধবার রাতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে নুরুল হক এসব কথা বলেন। ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে ছাত্র ও অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের অতর্কিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ তাৎক্ষণিক এই কর্মসূচি করে নুরুলের সংগঠন ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ।

মানববন্ধনে নুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার যখন সারা বাংলাদেশে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে, সেই সময়ে ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিনির্মাণের জন্য আমরা রাজনৈতিক সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সরকার যখন বুঝতে পেরেছে যে তাদের গদি নড়বড়ে হওয়া শুরু হয়েছে, তখন হামলা ও মিথ্যা মামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখতে চাইছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে হামলা করে কম্বল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। আমরা এর নিন্দা জানাই।’

ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশে নুরুল বলেন, ‘খুব শিগগির বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। আপনারা ভয় পাবেন না, সাহস নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যান, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মানুষকে সচেতন করুন।’

সমাবেশের আগে বিজয়নগর মোড় থেকে মশাল মিছিল করেন নুরুলেরা। মিছিলটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও কাকরাইল মোড় হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে নুরুল ছাড়াও যুব অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ফরিদুল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান বক্তব্য দেন।

অনুমতি ছাড়া মিছিল-সমাবেশ করলেই ব্যবস্থা

রাজধানী ঢাকাতে অনুমতি ছাড়া মিছিল ও সভা-সমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আর এই নির্দেশনা করে কেউ যদি মিছিল ও সমাবেশ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।

২ ডিসেম্বর, বুধবার ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে ডিএমপি এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণজমায়েতসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। ফলে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে বৈধ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকলেও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে।

তবে সাধারণ জনগণের নাগরিক সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে এ ধরনের কর্মসূচি পালন এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহারের জন্য ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসারে ডিএমপি কমিশনারের পূর্বানুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আরো বলা হয়, ডিএমপি ঢাকা মহানগরের নাগরিকদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো প্রকার মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ এবং এ জন্য শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছে। পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ এরূপ কার্যকলাপে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

স্বাধীনতার ধারণাকে জনপ্রিয় করেন বঙ্গবন্ধু: মুহিত

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ধারণাকে বঙ্গবন্ধু ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে বোধগম্য করে তুলেছিলেন। এভাবে তিনি জাতি গঠন ও রাষ্ট্রের ধারণাকে জনপ্রিয় করেছেন।

বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজধানীর সুগন্ধায় নবনির্মিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ লেকচার সিরিজের আয়োজন করে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল সংকল্প, সাহস, উদারতা এবং দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য উর্বর ভূমি, বিশাল জনগোষ্ঠীসহ সবকিছুই তাঁর ছিল। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনকল্যাণের নীতি অনুসরণ করেন জাতির পিতা।

আবদুল মুহিত বলেন, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। বিখ্যাত নেতা সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর আজীবন সম্পর্ক ছিল ছাত্র-শিক্ষকের। জাতির পিতা মাত্র তিন বছর সাত মাসে সংবিধান সংশোধনসহ ৫১৯টি আইন পাস বা সংশোধন করেছিলেন, যাতে জনগণের সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন পাস করেছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৮টি বৈদেশিক মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ প্রবাসীদের অংশগ্রহণে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বনেতাদের কাছে আমরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে চাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুজন বিশিষ্ট কূটনীতিককে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং একজন বিদেশিকে স্বর্ণপদক দিতে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাম ঘোষণা করা হবে।
বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের আলোচনায় আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এ ছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বুদ্ধিজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি এ আলোচনায় অংশ নেন।