ট্রাম্পকে সরানোর প্রাথমিক লক্ষণ?

ট্রাম্পকে সরানোর প্রাথমিক লক্ষণ?

কট্টর ট্রাম্প সমর্থকেরা যখন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাল, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্লিপ্ত। যেকোনো ধরনের সহিংসতায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের কথা বলা ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ তো নিলেনই না, বরং এমন কিছু যাতে না হয়, তা ঠেকানোরও চেষ্টা করেন। গত দুই শতকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে পড়া মার্কিন রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাঁচাতে তখন মুখ্য ভূমিকাটি রাখলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যাশনাল গার্ড ডাকার যাবতীয় কাজটিও তিনিই করলেন। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংকটকালে প্রকৃত নেতা হয়ে সামনে এলেন পেন্স।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ন্যাশনাল গার্ড নামানোর কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছিল। কিন্তু ৬ জানুয়ারি যখন কট্টর ট্রাম্প-সমর্থকদের কারণে সত্যিকার অর্থেই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রয়োজন পড়ল, তখন ট্রাম্প নিষ্ক্রিয় বসে থাকলেন। এমনকি হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ক্যাপিটল হিল রক্ষায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রশ্ন এলে, তা আটকানোর চেষ্টাও করেছিলেন ট্রাম্প। এ সময় পেন্স সামনে এগিয়ে এলেন। পেন্টাগনের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ তিনিই করলেন। পেন্টাগনকে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানালেন।

ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে এর আগে ১৮১৪ সালে হামলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের সময়। ক্যাপিটল ভবনে হামলার সেই ঘটনার ২০৬ বছর পর এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল খোদ মার্কিনদের হাতেই। এই সংকটকালে প্রেসিডেন্টের নিষ্ক্রিয়তার সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নিজের ভূমিকার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তিনিই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমোদনও তিনিই দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার।

ক্রান্তিকালে প্রেসিডেন্টের বদলে ভাইস প্রেসিডেন্টের এই ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসার কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের যে বিলম্বিত আলোচনায় মন্ত্রিসভা বসেছে, তা বাস্তবায়নের পথে এটি অনেক বড় একটি ইঙ্গিত

ক্রিস্টোফার মিলার বিষয়টি এক বিবৃতির মাধ্যমে জানান। এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে এমনকি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। বরং প্রথম যোগাযোগটিই তিনি করেছিলেন পেন্সের সঙ্গে। কারণ, তাঁর নাম নিয়ে ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের চালানো হামলার নিন্দা তখন পর্যন্ত জানাননি প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় ভরসা পাননি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র।

পেন্সের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি আরেকটি সূত্র থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু দল রিপাবলিকান দলের নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ৬ জানুয়ারি রাতেই জানান, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি এসেছে পেন্সের কাছ থেকে। তিনিই এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছেন।

ক্রান্তিকালে প্রেসিডেন্টের বদলে ভাইস প্রেসিডেন্টের এই ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসার কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের যে বিলম্বিত আলোচনায় মন্ত্রিসভা বসেছে, তা বাস্তবায়নের পথে এটি অনেক বড় একটি ইঙ্গিত। এটা নিশ্চিত যে, ট্রাম্প নিজে থেকে ক্ষমতা পেন্সের হাতে ছাড়বেন না। কিন্তু ক্ষমতার শেষ কিছুদিন ৬ জানুয়ারির নিষ্ক্রিয়তার মতো করে তাঁকে সম্ভবত নিষ্ক্রিয় করে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *