চীনের মধ্যস্থতায় আগামীকাল ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শুরু হচ্ছে। এই বৈঠকে আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এবং রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট গ্রাম ধরে তালিকা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে জোর দেবে বাংলাদেশ।

তিন দেশের পররাষ্ট্রসচিবকে নিয়ে এ ধরনের বৈঠক এটিই প্রথম। তবে এই বৈঠকে নাটকীয় কিছু ঘটবে, এমনটা আশা করছেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় যত শিগগির সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু হোক। চীনের সহায়তায় বৈঠকটি হচ্ছে। আগেও চীন একবার তারিখ দিয়েছিল, কিন্তু মিয়ানমার রাজি না থাকায় বৈঠকটি হয়নি।’

প্রত্যাবাসনের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় দফায় মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই করে ফেরত পাঠিয়েছে। তবে তালিকা পরিবারভিত্তিক হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
ফাইল ছবি

এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় বাংলাদেশের অগ্রাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, অতীতে যা হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সুতরাং, একই ভুল বা একই পথে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গাদের তালিকা না পাঠিয়ে সুনির্দিষ্ট গ্রাম ধরে তালিকার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত উপায়ে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা যেতে পারে। যাচাই–বাছাইয়ের পর যে তালিকা এসেছে, সেখান থেকে গ্রামভিত্তিক তালিকা করা যায়। সেই সংখ্যা এক থেকে দুই হাজার হতে পারে। বিষয়টি চীনকেও বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ চায় বর্ষার আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

ভারতের ‘উপহার’ ২০ লাখ ডোজ টিকা আসছে বুধবার

আগামী ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসছে ভারতের উপহার স্বরূপ সেরামের ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে সময়নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন আনার অনুমতিও দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানান, এ মুহূর্তে গোটা স্বাস্থ্যখাতের ব্যস্ততা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই করোনাকালীন স্বাস্থ্যখাতে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিজের পক্ষে সাফাই গান মন্ত্রী। জানান দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যখাত, নেই শয্যা কিংবা আইসিইউ সংকট।

মন্ত্রী বলেন, সপ্তাখানেকের মধ্যেই দেশে আসছে ভারতের সেরাম থেকে নেওয়া অক্সফোর্ডের প্রথম ৫০ লাখের চালান। এর আগেই আসতে পারে ভারত সরকারারের উপহার হিসেবে দেওয়া কিছু ভ্যাকসিন। যদিও সেই টিকা কোন ব্র্যান্ড বা সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় থাকছে বিশেষ নজরদারি। আমাদের ভারত সরকারও কিছু ভ্যাকসিন উপহারস্বরূপ দেবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, এ টিকা দেওয়ার পর কী হবে, আমরা তা জানি না। আমরা অন্যান্য দেশে দেখেছি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। টিকার বুথগুলো হাসপাতালের কাছে থাকলে ভালো হয়।

তিনি জানান, ৪ লাখ মানুষের জন্য ফাইজারের ৮ লাখ ডোজ আসবে। এ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে কোল্ড চেইন সীমিত আছে। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি ভ্যাকসিন রাখার উপযোগী রেফ্রিজারেটর আনা হচ্ছে জাতিসংঘের সহায়তায়।

নীতিমালা মেনে প্রাইভেট সেক্টরে যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই ভ্যাকসিন আনতে পারবে। তবে দামে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলেও জানান জাহিদ মালেক।

মস্কোয় পা রাখামাত্র আটক নাভালনি

বার্লিন থেকে মস্কোয় ফেরামাত্র আটক হলেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১৭ জানুয়ারি মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আসার পর ৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে আটক করে রুশ পুলিশ।

বার্লিন থেকে আসা উড়োজাহাজটির মস্কোর আরেকটি বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। নাভালনিকে দেখতে সেখানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটি শেষ পর্যন্ত সেখানে অবতরণ না করে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

নাভালনিকে আটকের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। গতকালই তিনি এই নিন্দা জানান। নাভালনিকে আটক করা অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। নাভালনিকে দ্রুত ছেড়ে দিতে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাভালনি। তিনি মস্কোয় ফেরামাত্র আটক বা গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল রুশ কর্তৃপক্ষ।

রাশিয়ার কারা বিভাগ জানিয়েছিল, জালিয়াতির মামলায় ২০১৪ সালের স্থগিত দণ্ডের শর্ত লঙ্ঘনের জন্য মস্কোতে আসামাত্র নাভালনিকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

আটক বা গ্রেপ্তারের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই রাশিয়ায় ফেরেন নাভালনি। নাভালনি রাশিয়ায় ফৌজদারি অপরাধের মামলারও মুখোমুখি হতে পারেন।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীরা রুশ কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করছেন।

গত বছরের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। প্রথমে তাঁকে সাইবেরিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে যান।

নাভালনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে ধীর ধীরে সেরে ওঠেন তিনি। মাস কয়েক বার্লিনে থাকার পর নিজ দেশ রাশিয়ায় ফিরলেন তিনি।

নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নাভালনিকে সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।

যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের কারিগরেরা ফিরছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের ঝুঁকি

বুশ জুনিয়রের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দরুন ওবামা বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ওবামার কপালে জুটেছে যুদ্ধবাজের তকমা। ওবামা আফগানিস্তানে ড্রোন দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছেন। লিবিয়া এবং সিরিয়ায় গণতন্ত্র পাচার করতে গিয়ে কোটি মানুষের জীবন তছনছ করেছেন।

আজ আবার অনেকটা ওবামার সঙ্গে মিল রেখেই বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে বাইডেন ক্ষমতায় এসেছেন। ট্রাম্পের বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বাইডেনের বিজয়ে শান্তির বার্তা ছিল। কিন্তু মার্কিন রাজনীতির অলিগলি সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বাইডেনের নীতির মধ্যে বরং যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছেন।

এই সম্ভাবনাকে মজবুত করেছে বাইডেনের নিয়োগকৃত মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের অতীত কর্মকাণ্ড। মোটাদাগে ওবামা আমলের যুদ্ধের কারিগরেরা আবার ওয়াশিংটনে ফিরে এসেছেন। নড়াচড়া শুরু হয়েছে অস্ত্র বাজারে। আর হতাশায় মুখ ঢাকতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ।

বেশ কয়েক ধাপে বাইডেন তাঁর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কর্তাদের তালিকা উন্মোচন করেছেন। তালিকায় স্থান পাওয়াদের একটি অংশ আগাম কাজও শুরু করে দিয়েছেন। আল-জাজিরার খবরে প্রকাশ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ব্লিংকেন ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অনুগত, যিনি প্রায় দুই যুগ ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নীতিনির্ধারকদের একজন। ব্লিংকেন ওবামা আমলে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে মনোনীত করেছেন বাইডেন। নিন্দুকেরা কৃষ্ণাঙ্গ গ্রিনফিল্ডকে ডেমোক্র্যাটদের কন্ডোলিৎসা রাইস বলে অবহিত করেন। শুরুতে বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে সুসান রাইসের নাম শোনা গেলেও নিয়োগ পেয়েছেন জেইক সুলিভ্যান।

ব্লিংকেনের মতো সুলিভ্যানও ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অত্যন্ত কাছের মানুষ। হিলারির সহযোগী হিসেবে ইরান পরমাণু চুক্তিসহ মার্কিন কূটনৈতিক অঙ্গনে সুলিভ্যান পরিচিত নাম। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে তাঁর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গিয়েছে ব্রেট ম্যাকগার্কের বিতর্কিত নিয়োগ। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে বাইডেন ম্যাকগার্ককে নিয়োগ দিয়েছেন। সিরিয়া ভেঙে যে তিন-চারটি নতুন রাষ্ট্রের চিত্র অঙ্কন করা হচ্ছে, তা অনেকটাই ম্যাকগার্কের চিন্তাপ্রসূত

বাইডেনের নিয়োগকৃত এই সব কূটনৈতিক পশ্চিমা গণমাধ্যমে ঝানু কূটনৈতিক এবং মার্কিনদের স্বার্থ রক্ষার কারিগর হিসেবে অবহিত করলেও এই সব কূটনৈতিকদের অতীত মিহিন নয়। বরং প্রায় সবার বিরুদ্ধে রয়েছে মিথ্যা যুদ্ধের অভিযোগ। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন যেভাবে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের এবং বর্তমান ইয়েমেন যুদ্ধের অন্যতম হোতা, ঠিক একইভাবে ব্রেট ম্যাকগার্ককে বলা হয় সিরিয়া যুদ্ধের অন্যতম নকশাবিদ। ম্যাকগার্কের নীতির ওপর নির্ভর করে ওবামা পিকেকের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেছিলেন, যা তুরস্ককে প্রায় ভেঙে দেওয়ার উপক্রম তৈরি করেছিল। সিরিয়াকে পরিণত করেছে শ্মশানে। ব্রেট ম্যাকগার্কের নিয়োগ প্রমাণ করছে যে বাইডেনের আমলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সমাধান তো মিলবেই না বরং যুদ্ধের পরিধি বিস্তৃত হবে। একই সঙ্গে জেইক সুলিভ্যান যেভাবে হিলারি ক্লিনটনের লিবিয়া আক্রমণের সঙ্গী ছিলেন, ঠিক একইভাবে জন কেরির বিরুদ্ধে সিরিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত এবং ২০১৬ সালে তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে মদদের অভিযোগ রয়েছে।

বিরোধকে সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে খোদাই করে লিখে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাবেন বাইডেন।

জন কেরি, অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ব্রেট ম্যাকগার্ক এবং জেইক সুলিভ্যানের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়েমেন, সিরিয়া গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা শূন্যে হ্রাস পেয়েছে। লিবিয়ার দ্বিখণ্ডিত করার পরিকল্পনা খরস্রোতা হয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যে উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলন, বেগবান হবে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপন।

সিরিয়ার যুদ্ধ এবং আইএসএসকে থামাতে অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং ম্যাকগার্ক পিকেকের সিরিয়ান শাখা ওয়াইপিজিকে একটি সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। ওবামা আমলে মার্কিনদের সহায়তায় জন্ম নেওয়া বাহিনীর সদস্য আজ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। মার্কিনরা ২০২১ সালে ওয়াইপিজির জন্য বরাদ্দ রেখেছে ২০০ মিলিয়ন ডলার। অত্যাধুনিক মার্কিন হাতিয়ার এবং অর্থ সরবরাহ করে এই সেনাবাহিনীকে অপ্রতিরোধ্য করেছে। এমনকি স্বল্পমাত্রার বিমান বিধ্বংসী রাডারও সরবরাহ করেছে। এই বৃহৎ একটি সেনাবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সমাধানের সম্ভাবনা শূন্য। তুরস্ক কোনোভাবেই নিজ সীমান্তে ওয়াইপিজির নেতৃত্বে নতুন রাষ্ট্র মেনে নেবে না। তাই সংঘর্ষ অনিবার্য। সময় বলে দেবে এই সংঘর্ষে মার্কিনরা নাকি আঙ্কারা পিছু হটবে।

সিরিয়ার মতো লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়েও বাইডেন প্রশাসন কোনো সুসংবাদ দিতে পারবে না। ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা অবৈধ যুদ্ধবাজ হাফতারকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আসলে ত্রিপোলির জাতীয় ঐকমত্যের সরকার এবং হাফতারের মধ্যে বিরোধিতাকে পুঁজি করে মার্কিনরা কোরিয়া উপদ্বীপের কায়দায় লিবিয়াকে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

বর্তমান ত্রিপোলিকে ঘিরে একটি এবং বেনগাজিকে নিয়ে একটি দেশ গঠন হবে। গাদ্দাফিকে হত্যা করে লিবিয়াকে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করার অন্যতম কুশীলব জেইক সুলিভ্যান নিয়োগ পেয়েছেন বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে। সিরিয়ার মতোই লিবিয়ার মানুষের শিগগিরই মার্কিনদের যুদ্ধ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা কম।

তবে অভিবাসী মুসলিম আর মার্কিন উদারনৈতিকদের নিজ আবক্ষে আটকে রাখতে বাইডেন বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। প্রথমত, পরিবর্তন আসতে পারে ফিলিস্তিন প্রশ্নে। বাইডেন ট্রাম্পের বন্ধ করে দেওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দের তালা আবার খুলতে পারেন। জেরুজালেম থেকে মার্কিন দূতাবাস ফিরিয়ে না নিলেও ফিলিস্তিনিদের খুশি রাখতে পূর্ব জেরুজালেমে একটি মার্কিন কনস্যুলেটের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, স্বল্প পরিসরে হলেও ইরান চুক্তিতে ফিরতে পারেন। তৃতীয়ত, নামকাওয়াস্তে সৌদি বিশেষ করে বিন সালমানকে শাসাতে পারেন। কিন্তু এই সবকিছুই কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন আনবে না মধ্যপ্রাচ্যে। মার্কিনদের চাপিয়ে দেওয়ার বিরতিহীন যুদ্ধের ইতি টানবে না।

বাইডেন যখন ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের অংশীদার এই সব যুদ্ধপ্রিয় কর্তাদের পররাষ্ট্রনীতির চেয়ারে বসিয়েছেন, তখন বিশ্ববাসী কীভাবে বাইডেনের মধ্যে শান্তির ঝলক দেখতে পায়, তা বোঝা মুশকিল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা নারী স্বাধীনতা নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনদের প্রধান লক্ষ্য ধর্ম, ভাষা এবং শিয়া-সুন্নি বিরোধকে উসকে সংঘর্ষ জিইয়ে রাখা।

বিরোধকে সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে খোদাই করে লিখে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাবেন বাইডেন। যে গতানুগতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বৈধভাবে চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করা হয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের ময়দান প্রস্তুত করা হয় আর ইরানকে মোকাবিলা আর সংস্কারের নামে বিন সালমানের বর্বরতাকে নীরবে উৎসাহিত করা হয়।

ক্যাপিটলে হামলা একটা বড় ভুল

বলা যায়, ভাগ্য তাঁর তেমন প্রসন্ন ছিল না। ভাগ্য তাঁকে ডাইনিংরুমের সহকারী না বানিয়ে বিলিয়নেয়ার বানিয়েছে; তাঁকে আরো ধনী করেছে। তাঁর দৃষ্টি আকৃষ্ট করে রেখেছে ট্যাবলয়েডের পাতায়। এর পরও তিনি দ্বিধান্বিত—আগন্তুক হিসেবে তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন কী ভুল হয়েছে তাঁর। একটা প্রহসন হিসেবে তাঁর প্রেসিডেন্ট জীবন শুরু হয়েছিল, সেটা শেষ হচ্ছে একটা ট্র্যাজেডি হিসেবে।

ভাগ্য সত্যিই নিজেকে ছাপিয়ে গেছে, সে তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে। অর্জনের এই সর্বোচ্চ শিখর থেকে তিনি সক্ষম হলেন বিশাল একটি বিশ্ব দেখতে। এটা বেশ নিশ্চিত যে তিনি যেখানে প্রবেশ করেছেন, সেখানে তিনি কার্যত অবস্থান করেন না। তিনি যে অবস্থায় পড়েছেন তাঁর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা সহজতর হতো, যদি এর প্রতি তাঁর সাড়া (রেসপন্স) এতটা তিক্ত ও ক্রুদ্ধ না হতো; যদি তাঁর অফিস (প্রেসিডেন্সি) এমন একটি শক্তির প্রতি তাঁর শিশুসুলভ আচরণকে বড় করে না দেখত, এ শক্তি প্রজাতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার সামর্থ্য রাখে।

ক্যাপিটলে হামলা (হয়তো তা প্রতিশোধের শর্ত পূরণ করে) একটা বড় ভুল। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের আরো একবার বলেছেন যে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে প্রতারণা করা হয়েছে, অতঃপর তিনি সমর্থকদের ক্যাপিটলে পাঠালেন—যেখানে তাঁর পরাজয়কে আইন ও রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছিল, চূড়ান্ত করা হচ্ছিল। এগুলো তাঁর জন্য হতাশার মূল দুই উৎস। এগুলো তাঁকে ক্রমেই বিব্রত করছিল ওভাল অফিসে তাঁর প্রথম পা রাখার দিন থেকে। এটা কোনো অর্থেই চমকপ্রদ বা দর্শনীয় বিষয় ছিল না।

ক্যাপিটলে হামলায় ক্ষোভ ছাড়া কিছুই প্রকাশিত হয়নি। এক সিলেবলের একটা শব্দ ‘ট্রাম্প’ (যা এ কয় বছরে নানা পুরনো জায়গায় দেখা গেছে) উচ্চারিত হয়েছে গম্বুজওয়ালা একটি গোল ঘরে। তাঁর নাম ব্যানারে উড়তে দেখা গেছে। কর্তৃত্ববাদী আন্দোলনকে সব সময় পপুলিস্ট হিসেবে পাস করে যেতে দেখা যায়। তাণ্ডব কী, হুমকি কী, পবিত্র স্থানে অপবিত্র বা অশ্রদ্ধার কাজের মানে কী, তা জানার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃত অপরাধী কারা তা জানা, কারা ফায়দা লোটার চেষ্টায় আছে তা জানা। তাণ্ডবে কাদের সমস্যা হয় তা জানা।

ধরা যাক, হামলাকারীদের মোটিফ সারসংক্ষেপে একটি শব্দে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি হলো ট্রাম্প। তাঁর উপহাস ও গলাবজি এবং ধ্বংসাত্মক কথাবার্তার পেছনে যে মিথ্যাচার লুকিয়ে আছে তাঁকে তারা বুঝেছে বলেই মনে হয়। এ ধরনের লোক সব সময় পাওয়া যায় এবং এখন তারা পরস্পরকে ইন্টারনেটে খুঁজে পায়। ট্রাম্প নিজেই একটা শক্ত প্রমাণ যে রাগ-ক্ষোভ-ভীতির তিক্ততার বস্তুগত উপকরণে যে আয়েশি ভাব আছে তা সন্তুষ্টি আনে না। ট্রাম্প সেলফ-পিটিকে চাবুক মারার কাজের সূচনাকারী নন; কিন্তু তিনি এটার প্রতিলিপি, তিনি এটার মহিমান্বিত রূপ।

এ দেশের ভালো ঐতিহ্যগুলো আত্মসংবরণের নীতির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। সংবিধানকে রক্ষা করার মানে একটা ‘কোড অব ল’কে মান্য করা—ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা। এ বিষয়গুলো বিভিন্ন সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা একটা বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন যে তাঁরা এবং তাঁদের মতো লোকজন সরকার পরিচালনা করবেন। তাঁরা একটা দারুণ কাজ করেছেন, নিজেদের হাত বেঁধে রেখেছেন অর্থাৎ আত্মসংবরণের ব্যবস্থা করেছেন। মার্কিন সংবিধান সংক্ষিপ্ততার একটা মাস্টারপিস, ব্যতিক্রমী জিনিস। পরের প্রজন্ম এটাকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সংবরণ দেখিয়েছে। একটা বিশাল ও অনন্য সভ্যতার বোধ থেকে এর উৎপত্তি। এর কারণে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সিস্টেম টিকে আছে।

এখন আমাদের মনে পড়ছে যে আমাদের ব্যবস্থাটা নির্ভরশীল অর্ধেক জনসংখ্যার বা প্রায়ই অর্ধেকের চেয়ে বেশি ইলেকটোরেটের ওপর। গণতান্ত্রিক নাগরিকত্ব হয়তো একটা আর্ট, এটা কিভাবে চর্চা করতে হয় আমরা সেটা ভুলে গেছি এবং ট্রাম্প এর সীমাই দেখতে পান না। তিনি সেটা কখনো বুঝবেন না।

আমাদের চরমপন্থীদের আর্লি ইউরোপিয়ান ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে তুলনা করাই ভালো। একসোঁ ফ্রঁসেজ ও নাজিরা চোর-ডাকাতদের ব্যবহার করত সাংবাদিক ও সিভিল অফিশিয়ালদের সন্ত্রস্ত করার জন্য, হত্যা করার জন্য। এটা তারা করত মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য। তারা এমন ধারণা তৈরি করে নিয়েছিল যে তারাই সত্য, তারাই সত্যিকারের ফ্রেঞ্চমেন এবং জার্মান।

ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বলেছেন, তোমরাই আসল লোক, তোমরাই সেই লোক, যারা এই দেশটাকে গড়েছ। আমেরিকান বলতে যা বোঝায় সেই অর্থকে সংকীর্ণ করে (তিনি সেটা লাগাতারভাবে করেন) তিনি একটা একটা মাইনরিটি কনসেপ্ট তৈরি করেন; তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল শ্বেতাঙ্গদের একটা স্বতন্ত্র গ্রুপ মনে করেন। এভাবে তাদের একটা ফোকে (জনতায়) পরিণত করেন। তারা ভাবে যে ভোট চুরি করা হয়েছে। এভাবে তারা তাদের দাবিকে সত্য মনে করে। যদিও প্রমাণাদি অন্য কথা বলে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় ইমপিচমেন্টের বিষয়টিতে মজা পান হয়তো। তিনি ওয়াশিংটনের ফাঁদে পড়েছেন। একজন আউটসাইডার নিজেকে ভাবছে ইনসাইডার। তিনি বুঝতে পারেন না যে একান্ত অনুসারীদের দ্বারা তিনি ভূতে পরিণত হবেন। তিনি বন্ধুহীন নন, রুডি গিউলিয়ানি এবং এমন আরো সহস্র লোক তাঁর সঙ্গে আছে। ক্যাপিটলে সরকারে সিটে তোপ দাগার সময় তারা তাঁর নামে জয়োল্লাস করেছে। তারা হয়তো সিনেট চেম্বারে ঢুকে পড়তে পারে; কিন্তু কখনো তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।

টিকা প্রয়োগের প্রথম দিনেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় কম করোনা ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে কেন্দ্র। শনিবার ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার করোনার টিকা প্রয়োগের কর্মসূচি শুরুর দিনে অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার সকালে অবশ্য এক ভারচুয়াল অনুষ্ঠানে করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির অর্থাৎ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাফাই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি এবং তখনই তিনি এই অভিযোগ করেন। তারপর, সকল রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

‘রাজ্যের সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেব। প্রয়োজনে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছ থেকে কিনব’। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যবাসী সবাই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবেন।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রথম দফায় যদিও প্রায় ৫.৮ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সেই সংখ্যার অর্ধেক করা হয়েছে অপর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহের কারণে।

এক সরকারি সূত্র জানান, যেহেতু প্রথম দফায় যারা ভ্যাকসিন পাবেন তাদের ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় দোষ দিতে হবে তাই রাজ্য সরকার প্রথম দফায় পাঠানো বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই মুহূর্তে আমাদের দেশে কভিড শিল্ড এবং কো ভ্যাকসিন নামের দুটি ভ্যাকসিন সরকারি মান্যতা পেয়েছে। প্রথম দফায় আমরা কভিড শিল্ড পেয়েছি যাদের আমরা প্রথম দফায় কভিড শিল্ড দেব দ্বিতীয় দফায় তাদের কভিড শিল্ডই দিতে হবে। তাই দ্বিতীয় দফার জন্য ভ্যাকসিন মজুদ রাখছি বলে জানান এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির প্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার জেলা প্রশাসক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যসচিব। সেই সময়ই প্রয়োজনীয় টিকার বন্দোবস্ত ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন সরকারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘অনেকেই মারা গেছে। কিন্তু আপনারা খুব ভালো কাজ করেছে, কভিডের মোকাবেলা করেছেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজ্য সরকার সবার জন্য ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করবে।’ যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

এদিন Bharot e দেশজুড়ে শুরু হয়েছে গণটিকা প্রয়োগ কর্মসূচি। পশ্চিমবঙ্গে আজ ২০ হাজার ৭০০ জন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাকে Teeka dewar katha chilo. KIntu anek jaigai teeka niye manush-er mone shonka thakar karone anek manush teeka nite ashen ni.

‘Sandhya abdi ja khobor, amader lokkhyer prai 60 shotangsho manush-ke amra teeka dite perechi,’ janan ek sorkari sutro.

রাজনীতিই শেষ হয়ে যেতে পারে ট্রাম্পের

আরেকটি লজ্জার নজির গড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হলেন তিনি। সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে তাঁকে অভিশংসন করার প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তাঁর নিজ দলের কয়েকজন আইন প্রণেতাও।

ভোটের পর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আরেকবার প্রমাণ করে দেখাল যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও।’

অভিশংসনের এই প্রস্তাব এবার উঠবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে ট্রাম্পের ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্পের জন্য স্বস্তির খবর এতটুকুই যে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে না। কারণ নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার আগে অভিশংসন নিয়ে ভোটাভুটির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন সিনেটপ্রধান মিচ ম্যাককনেল। আর ট্রাম্পের জন্য অস্বস্তির খবর হলো—সিনেটে অভিযুক্ত হলে তাঁর আরেকবার নির্বাচনে লড়ার স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যেতে পারে।

যেভাবে দ্বিতীয় অভিশংসন

আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। গত ৬ জানুয়ারি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস। ওই দিন ট্রাম্পের আহ্বানে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় তাঁর সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পাশাপাশি কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে প্রায় চার ঘণ্টা ভাঙচুর চালায় তারা। এ ঘটনায় নিহত হয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন। ঘটনার পর বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা দাবি তোলে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পকে অপসারণ করা হোক। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানান ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের অনেক আইন প্রণেতাও। ট্রাম্পকে সরাতে দুটি পদ্ধতি হাতে ছিল ডেমোক্র্যাটদের। প্রথম চেষ্টায় সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে অনুরোধ জানান তাঁরা। কিন্তু পেন্স তাতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বিকল্প হিসেবে অভিশংসনের প্রস্তাব নিয়ে গত বুধবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। আর সেই ভোটেই অভিশংসিত হন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হননি। এর আগে ২০১৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। কিন্তু সিনেটে তিনি দায়মুক্তি পেয়ে যান।

প্রস্তাবে যা বলা আছে

অভিশংসনের অভিযোগ রাজনৈতিক, ফৌজদারি নয়। এবারের অভিশংসনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার নির্বাচনে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ করে আসছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এরপর জনগণের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি স্বেচ্ছাচারীর মতো একই অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়া তিনি কর্মী-সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনে যাওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর ওই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জানুয়ারি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে এবং কয়েকজনকে প্রাণ হারাতে হয়।’ প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের অখণ্ডতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলে হস্তক্ষেপ করেছেন।’

বুধবারের ভোটাভুটিতে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন ২৩২ জন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৭টি। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের ১০ আইন প্রণেতাও। তাঁদের একজন অ্যাডাম কিনজিংগার। তিনি বলেন, ‘এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছি।’

এরপর যা ঘটতে পারে

অভিশংসনের এই প্রস্তাব সিনেটে তোলা হবে। সিনেটের সদস্যসংখ্যা ১০০ জন। সেখানে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করতে হলে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন পড়বে। অর্থাৎ, অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরকে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে। গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে রাজি আছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিনেটে অভিযুক্ত হলে আইন প্রণেতারা আরেকটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি করতে পারবেন। ওই প্রস্তাব পাস হলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না। এমনকি সরকারি কোনো পদে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে ২০ জানুয়ারির আগে সিনেটে কোনো ভোটাভুটির সম্ভাবনা নেই। সিনেটপ্রধান মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, অভিশংসন নিয়ে পড়ে না থেকে আইন প্রণেতাদের উচিত হবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করা। ২০ জানুয়ারির পর ভোটাভুটিতে কোনো বাধা নেই বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

ট্রাম্প-বাইডেনের প্রতিক্রিয়া

অভিশংসন নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। তবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমার সত্যিকারের কোনো সমর্থক সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে না।’ ট্রাম্পপন্থীরা ২০ জানুয়ারির আগে দেশজুড়ে সশস্ত্র বিক্ষোভ করতে পারে—এফবিআইয়ের এমন সতর্কতার পর এই বার্তা দিলেন ট্রাম্প।

এদিকে বুধবারের ভোটের ফলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। তবে শুধু অভিশংসন নিয়ে পড়ে না থাকতে আইন প্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আইন প্রণেতারা অভিশংসনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। তবে নতুন মন্ত্রিসভা ও করোনা মহামারির প্রণোদনা অনুমোদনের বিষয়গুলোর প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।’

সামরিক সদস্যদের জন্য সতর্কবার্তা

মার্কিন সামরিক বাহিনী সাধারণত রাজনীতি এড়িয়ে চলে। কিন্তু ৬ জানুয়ারির ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান সেনা সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে উদ্বেগ তৈরি হয়। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে পেন্টাগনের ওপর চাপ তৈরি করে ডেমোক্র্যাটরাও। এ অবস্থায় স্থল, নৌ, বিমানবাহিনীসহ মার্কিন সামরিক বাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কমান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যের প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ক্যাপিটল ভবনে হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ওপর সরাসরি হামলা।’ সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু প্রায় ১৯ লাখ

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ২১৩ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৯ জনের। আর এ পর্যন্ত সেরে উঠেছেন ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ১০১ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩ জন। আর এই মহামারিতে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৪ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৪৯৮ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৭৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৬ জনের।

মৃত্যু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকো চতুর্থ স্থানে থাকলেও আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ১৩ নম্বরে। মেক্সিকোতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১ জনের।

যুক্তরাজ্য মৃত্যু ও আক্রান্ত বিবেচনায় রয়েছে পঞ্চম স্থানে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৮ হাজার ৬৩২ জনের।

আক্রান্ত বিবেচনায় চতুর্থ এবং মৃতের সংখ্যায় অষ্টম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ হাজার ৬২৮ জনের।

মৃত্যুর দিক দিয়ে ষষ্ঠ এবং আক্রান্তের সংখ্যায় অষ্টম স্থানে রয়েছে ইতালি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লাখ ২০ হাজার ৩৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৭ হাজার ২৯১ জনের।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৯১টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা

নির্বাচনের আগে-পরে তাঁর আচরণ ছিল অসংযত। ভোটের ফল তাঁর পক্ষে না এলে তিনি যে তা মানবেন না, তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মানেনওনি। এমনকি গতকাল জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনে নিজের দুই প্রার্থী হেরে যাওয়ার পরও তা মানতে চাননি। আর এরপর যা হলো, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক কৃষ্ণ অধ্যায়।

খোদ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ রিপাবলিকান পার্টির অনেক বড় নেতার মুখেই শোনা গেল এ কথা। ঠিক সেই হামলার সময় উগ্র সমর্থকদের ফিরে যাওয়ার কথা বলেও অত্যন্ত স্বচ্ছ এ নির্বাচন নিয়ে বিষোদগার করছিলেন। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে গতকাল বুধবার নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটল।

আর এই ঘটনার পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই উসকানি। কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ক্রমাগতভাবে গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিজ সমর্থকদের কান ভারী করে আসছিলেন। উসকানির চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর শত শত উগ্র সমর্থক মার্কিন গণতন্ত্রকে প্রতিনিধিত্ব করা ওই ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ করে একপর্যায়ে হামলাই করে বসলেন।

নির্বাচনে স্পষ্ট ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু হার মানতে নারাজ তিনি। তাঁর দাবির সপক্ষে মিছিল নিয়ে গতকাল ওয়াশিংটনে আসতে তিনি কয়েকবার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে যৌথ অধিবেশন বসে কংগ্রেসের।

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ ডিসেম্বর এক টুইটে লেখেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে ২০২০-এর নির্বাচনে হার মেনে নেওয়াটা অসম্ভব। ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় বিক্ষোভ। সেখানে আসুন। ঝোড়ো বিক্ষোভ হবে!’
প্রেসিডেন্টের কথামতো ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তাঁর হাজারো সমর্থক। তাঁরা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও ফলাফল বাতিলে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ট্রাম্পের ক্যাপিটল ভবন অভিমুখে মিছিল করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

এর আগে হোয়াইট হাউসে দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলে যেতে চলেছি। সেখানে আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও উইমেনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করব।’

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দৃশ্যত এটি ছিল ট্রাম্পের সর্বশেষ জনসভা। সেখানে উপস্থিত হওয়া সমর্থকদের তিনি ‘লড়াইয়ে’ উৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা কখনো হাল ছাড়ব না, কখনো পরাজয় মানব না।’ ডেমোক্র্যাটদের বিজয়কে বাজে কথা বলে আখ্যায়িত করে সমর্থকদের উজ্জীবিত করে তোলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সমর্থকেরাও ‘বাজে কথা, বাজে কথা, বাজে কথা’ বলে স্লোগান দেন।
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ভন্ডুল করতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তাঁর এই চেষ্টায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে সহায়তা করেছে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (চুরি বন্ধ করো)-এর মতো কয়েকটি গ্রুপ।

এসব চেষ্টার চূড়ান্ত রূপ গতকালের হামলা, সহিংসতা। সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প প্রায় ৫০ মিনিট বক্তৃতা দেন। বক্তৃতা চলাকালেই কোনো কোনো সমর্থক দলীয় পতাকা উড়িয়ে ক্যাপিটল হিলের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

পরে ট্রাম্পের উত্তেজিত সমর্থকেরা মিছিল করে ক্যাপিটল ভবনে জড়ো হন। পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে ঝোড়ো গতিতে একেবারে ভবনের ভেতর আইনপ্রণেতাদের অধিবেশনকক্ষে ঢুকে পড়েন। তাঁদের তাণ্ডবে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় যৌথ অধিবেশন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা সরিয়ে নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও অন্য কংগ্রেস সদস্যদের। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। রাত নেমে এলে ক্যাপিটলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তখনো ভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন এই সমর্থকদের অনেকে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন কট্টর ডানপন্থী গ্রুপের সদস্যরাও।

আমরা ক্যাপিটলে যেতে চলেছি। সেখানে আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও উইমেনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করব।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায়

‘আমি জানি আপনারা ব্যথিত’
টেলিভিশনের পর্দায় ওভাল অফিস থেকে সমর্থকদের তাণ্ডব দেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁদের হামলা ও সহিংসতায় ক্যাপিটল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর টুইট করেন তিনি। তাতে বিক্ষোভকারীদের ‘শান্ত থাকা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প এই দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন বলে সমালোচনা শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য তাঁকে আরও কিছু বলার অনুরোধ জানান প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ও হোয়াইট হাউসের কয়েকজন উপদেষ্টা। এমনকি জো বাইডেনকে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠানে আসতে হয়। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা কোনো বিক্ষোভ না, এটা বিদ্রোহ।’ ট্রাম্পের প্রতি এ অবস্থার অবসান ঘটানোর দাবি জানান তিনি।

শেষমেশ ট্রাম্প টুইটারে তাঁর আগে ধারণ করা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা ব্যথিত হয়েছেন। আমাদের এমন এক নির্বাচন হয়েছে, যেখানে আমাদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছিল এক ভূমিধস নির্বাচন।’ মিথ্যা দাবির পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘তবে এখন আপনাদের ঘরে ফিরে যাওয়া দরকার। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’ আরেক বার্তায় তিনি তাঁর উন্মত্ত সমর্থকদের ‘মহান দেশপ্রেমী’ আখ্যায়িত করেন।

আফগানিস্তানে পৃথক হামলায় ১১ জন নিহত

কাতারের রাজধানী দোহায় যখন তালেবান ও সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে, তখন ফের রক্তাক্ত হলো আফগানিস্তান। বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় উরুজগান ও হেলমন্দ প্রদেশে পৃথক হামলায় ৫ বেসামরিক নাগরিকসহ ১১ জন নিহত হয়েছে।

প্রাদেশিক কাউন্সিলের একজন সদস্য এখবর দিয়েছেন। খবর ডন অনলাইনের।

উরুজগান প্রদেশের ওই কাউন্সিল মেম্বার জানিয়েছেন, তিরিনকোটের একটি সামরিক ক্যাম্পে হামলা হয়। তবে নিহতের সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত করে জানাননি তিনি। তবে বিস্ফোরণটা এত শক্তিশালী ছিল যে, এর ধাক্কায় পুরো শহরটাই যেন কেঁপে উঠেছিল বলে জানান। তবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো উরুজগানে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ জন সদস্য নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।

এর আগে বুধবার হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লশকরগাহে ৫ বেসামরিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান আতাউল্লাহ আফগান এ খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিহতদের সবাই নারী ও শিশু।

এসব হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল নবি ইলহাম জানিয়েছেন, কারা দায়ী, সেটা জানতে তদন্ত চলছে।